প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত।
প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় বলেন, “(জওহরলাল) নেহরু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল বন্দে মাতরম মুসলিমদের প্ররোচিত করতে পারে।” প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, এটা বন্দে মাতরমের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ কংগ্রেস বন্দে মাতরম নিয়ে আপস করেছে। ওই গানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ কংগ্রেস বাদ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মোদী। ওই ‘বাদ পড়া’ অংশ লোকসভায় পাঠ করেন মোদী। বলেন, “কংগ্রেস এখনও বন্দে মাতরমকে অপমান করছে।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, প্রথমে বন্দে মাতরমকে ভাঙা হয়েছে। আর তার পরেই ভারত ভেঙেছে।
১৯৭৫ সালে বন্দে মাতরমের ১oo বছর পূর্তিতে সংবিধানকে রুদ্ধ করা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর আমলের জরুরি অবস্থাকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী।
লোকসভায় বন্দে মাতরম নিয়ে আলোচনায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে একাধিক বার ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। দমদমের সাংসদ বলেন, “অন্তত বাবু বলুন।” সঙ্গে সঙ্গে ভুল সংশোধন করেন মোদী। বলেন, “আচ্ছা, বঙ্কিমবাবু বলছি।” সৌগতকে দাদা সম্বোধন করে ধন্যবাদও জানান তিনি। খানিক মশকরা করে বলেন, “আপনাকেও তো দাদা বলেই সম্বোধন করি।”
প্রধানমন্ত্রী বললেন, “বন্দে মাতরম বহু প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে।” এই সূত্রেই মোদী জানান, সরকার বন্দে মাতরমের মাহাত্ম্যকে পুনরুদ্ধার করতে চায়।
দুপুর ১২টার কিছু পরে বন্দে মাতরম নিয়ে লোকসভায় আলোচনা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বন্দে মাতরমের গুরুত্বর কথা তুলে ধরে মোদী বলেন, “এই গান শক্তির মন্ত্র দিয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে গোটা দেশের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল বন্দে মাতরম।”
মোদী অভিযোগ করেছিলেন যে, কংগ্রেস বন্দে মাতরমের গুরুত্বপূর্ণ স্তবক বাদ দিয়ে দিয়েছিল। তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্য হল, ১৯৩৭ সালে বন্দে মাতরমের গুরুত্বপূর্ণ স্তবক, যা গানটির প্রাণ, সেগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বন্দে মাতরমের ওই বিভাজন দেশভাগের বীজ বপন করেছিল।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আজকের প্রজন্মের জানা উচিত, জাতি গঠনের এই ‘মহামন্ত্র’-এর সঙ্গে কেন এই অবিচার করা হয়েছিল। এই বিভাজনমূলক মানসিকতা এখনও দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ।’’ প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা তোপ দাগে কংগ্রেসও। তাদের তরফে বলা হয়, ‘যারা সংবিধানকে আক্রমণ করে, বাপু মহাত্মা গান্ধী এবং বাবাসাহেব অম্বেডকরের কুশপুতুল পোড়ায় এবং সর্দার পটেলের মতে গান্ধীজির হত্যায় জড়িত, তারাই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়েছিল।’’ কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, “‘‘১৯৮৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত, কংগ্রেসের ছোট-বড় প্রত্যেকটি বৈঠকে আমরা গর্বের সঙ্গে বন্দে মাতরম গাই। এই গান আমাদের দেশমাতৃকার গান। মানুষের মধ্যে একতা এবং প্রত্যেক ভারতবাসীর প্রাণের গান বন্দে মাতরম।’’ এই আবহে সংসদে বন্দে মাতরম নিয়ে বিতর্কে অংশ নেবেন শাসক এবং বিরোধী শিবিরের সাংসদেরা।
গত ৭ নভেম্বর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বন্দে মাতরমের সার্ধশতবর্ষ বা ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানিয়েছিলেন, বন্দে মাতরমের সার্ধ শতবর্ষকে স্মরণ করে সারা বছর নানা অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হবে। বন্দে মাতরমের স্মারক ডাকটিকিট এবং মুদ্রাও প্রকাশ করেন তিনি। দলীয় ভাবেও বিজেপি দেশের নানা প্রান্তে বন্দে মাতরম গানের সার্ধশতবর্ষ পূর্তিতে একাধিক কর্মসূচি নিয়েছে।
আজ লোকসভার অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’ রচনার ১৫০ বছর পূর্তি সংক্রান্ত বিতর্কের সূচনা করবেন তিনি। লোকসভায় এই আলোচনার জন্য ১০ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পরে বলবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কংগ্রেসের তরফে গৌরব গগৈ এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢড়া এই আলোচনায় যোগ দেবেন। ১৮৭৫ সালে ‘বন্দে মাতরম’ রচনা করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে এই গানই এক সময়ে জাতীয় চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। বিজেপির অভিযোগ, ১৯৩৭ সালে এই গান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ বাদ দিয়ে দেয় তৎকালীন কংগ্রেস সরকার।