Shubhanshu Shukla

বুধের বিকেলে মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছেন ভারতের শুভাংশু, সাত গবেষণা করবেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে বসে

অ্যাক্সিয়ম-৪ অভিযানে পাইলটের ভূমিকায় রয়েছেন শুভাংশু। রাকেশ শর্মার চার দশক পরে মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছেন কোনও ভারতীয়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৫ ২১:২১

— ফাইল চিত্র।

সব ঠিকঠাক থাকলে বুধবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (আইএসএস)-এর উদ্দেশে পাড়ি দিতে চলেছেন ভারতের শুভাংশু শুক্ল-সহ চার মহাকাশচারী। ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার সময়ে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের তৈরি ‘ড্রাগন’ মহাকাশ যানে চেপে আমেরিকার ফ্লরিডা থেকে যাত্রা শুরু করবেন তাঁরা। আইএসএসে গিয়ে করবেন সাত পরীক্ষানিরীক্ষা।

Advertisement

মঙ্গলবার মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু ও তাঁর তিন সঙ্গীর। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে পিছিয়ে যায় যাত্রার দিনক্ষণ। ইসরোর তরফে সমাজমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় সে কথা। এই নিয়ে মোট চার বার পিছিয়ে গিয়েছে শুভাংশুদের মহাকাশ যাত্রা। এ বারও কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা এবং ইসরোর যৌথ অভিযান অ্যাক্সিয়ম-৪-এ বাদ সাধতে পারে আবহাওয়া।

একটি সূত্র বলছে, যান্ত্রিক সমস্যাও রয়েছে। শুভাংশুদের মহাকাশ যানটিকে উৎক্ষেপণ করবে ইলন মাস্কের সংস্থার স্পেস এক্সের তৈরি যে ফ্যালকন-৯ রকেট। সূত্রের খবর, সেই রকেটে কিছু যান্ত্রিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। স্পেস এক্সের ‘বিল্ড অ্যান্ড ফ্লাইট রিলায়াবিলিটি’-র ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম জারস্টেনমায়ার জানিয়েছেন, রকেটে অক্সিজেন লিক করার বিষয়টি আগের অভিযানেই নজরে এসেছে। তা থেকেই সমস্যা। তিনি জানিয়েছেন, মহাকাশচারীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার তাদের মূল লক্ষ্য। সেই কাজটা সহজ নয়। প্রতি দিনই গবেষকেরা সেটি শিখছেন। সেই চেষ্টাও চলছে।

অ্যাক্সিয়ম-৪ অভিযানে পাইলটের ভূমিকায় রয়েছেন শুভাংশু। রাকেশ শর্মার চার দশক পরে মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছেন কোনও ভারতীয়। অ্যাক্সিয়ম স্পেস নামে আমেরিকার একটি বেসরকারি সংস্থার মহাকাশ অভিযানে ছাড়পত্র দিয়েছে নাসা। সেই অভিযানেই যাচ্ছেন শুভাংশুরা। ১৪ দিন তাঁরা আইএসএসে থাকবেন, বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবেন। নাসা এবং ইসরোর যৌথ উদ্যোগে দলটি এই কাজ করবে। ভবিষ্যতে ইসরোর গগনযান প্রকল্পের অধীনে যে অভিযান হবে, তার ভিত্তিও স্থাপন করবেন শুভাংশু। অভিযানের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, কী কী বিষয়ে গবেষণা করবেন শুভাংশু।

এক, মহাকাশে থাকলে মহাকাশচারীদের পেশি দুর্বল হয়ে যায়। মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস সেই সমস্যায় পড়েছিলেন। প্রায় সাড়ে ন’মাস আইএসএসে থাকার পরে তিনি যখন পৃথিবীতে আসেন, তখন তাঁর পেশি দুর্বল হয়ে যায়। শূন্য মাধ্যাকর্ষণে কেন এ রকম হয়, তা নিয়ে গবেষণা করবেন শুভাংশুরা। দীর্ঘ দিন মহাকাশ অভিযানে সেই সমস্যা যাতে এড়ানো যায়, তা-ও গবেষণা করে দেখা হবে। এই গবেষণার পরামর্শ দিয়েছে ভারতের ইনস্টিটিউট অফ স্টেম সেল সায়েন্স অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন।

দুই, ছ’টি শস্যের উপর মহাকাশের আলোর প্রভাব কী রকম হবে, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। তাদের জিনগত বিশ্লেষণও করা হবে। এই গবেষণার পরামর্শ দিয়েছে কেরলের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

তিন, অভিযানে শুভাংশুর সঙ্গী হবে ক্ষুদ্র প্রাণী টার্ডিগ্রেডস বা ওয়াটার বেয়ার। কঠিন পরিস্থিতিতে বাঁচতে পারে এই প্রাণী। খুব গরম বা প্রবল ঠান্ডাতেও অনায়াসে বেঁচে থাকে তারা। মহাকাশে কী ভাবে বেঁচে থাকে এই ওয়াটার বেয়ার, তার উপর কী প্রভাব পড়ে, তা পরীক্ষা করবেন শুভাংশু।

চার, তিন প্রজাতির ক্ষুদ্র অ্যালগি (শ্যাওলা) কী ভাবে মহাকাশে বেঁচে থাকে, তা-ও পরীক্ষা করে দেখবেন শুভাংশু।

পাঁচ, বীজের বংশবৃদ্ধিতে মহাকাশের আলো কী প্রভাব ফেলে, আইএসএসে তা পরীক্ষা করে দেখবেন শুভাংশু। ইসরোর হয়ে এই গবেষাণা করবেন তিনি।

ছয়, মহাকাশে জলের ব্যাকটিরিয়া কী ভাবে বৃদ্ধি পায় বা আদৌ বৃদ্ধি পায় কি না, তা পরখ করে দেখা হবে। ইসরো এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ) এই গবেষণা চালাবে।

সাত, মহাকাশে বসে কম্পিউটার চালালে কী হতে পারে? কী ভাবে কম্পিউটারের পর্দায় লেখা পড়েন মহাকাশচারীরা? তখন কী ভাবে নড়াচড়া করে তাঁদের চোখ? শুভাংশুর মাধ্যমে এই পরীক্ষাও করা হবে।

শুভাংশুর সঙ্গে অভিযানে থাকছেন নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী পেগি হুইটসন, পোল্যান্ডের স্লায়োস উজ়নানস্কি-উইসনিউস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু।

Advertisement
আরও পড়ুন