এনডিএ-র ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ছবি: পিটিআই।
শুধু বিহারের নয়। গোটা দেশের সংবাদমাধ্যম হাজির ছিল শুক্রবার সকালের বৃষ্টিভেজা পটনায়। কারণ একটাই। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করবে। সাংবাদিক সম্মেলনে থাকবেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। চিরাগ পাসোয়ান, জিতনরাম মাঁঝি, উপেন্দ্র কুশওয়াহার মতো এনডিএ-র তিন শরিক নেতারাও।
জেডিইউ নেতারা ঘরোয়া আড্ডায় দাবি করছিলেন, এই সাংবাদিক সম্মেলনেই স্পষ্ট করে দেওয়া হবে এনডিএ ক্ষমতায় ফিরলে ফের নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
পটনার পাঁচতারা হোটেলের মঞ্চ সাজানো ছিল। নীতীশ কুমার এলেন। মঞ্চের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের ভিড় দেখলেন। ততক্ষণে বিজেপির বিহারের নির্বাচনের ভারপ্রাপ্ত ধর্মেন্দ্র প্রধান এসে গিয়েছেন। বিহারের ভারপ্রাপ্ত নেতা বিনোদ তাওড়ে সব কিছুর দায়িত্বে।
এনডিএ নেতারা মঞ্চে উঠলেন। ইস্তাহার হাতে ছবি তুললেন। ২৬ সেকেন্ড। সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হয়ে গেল। নীতীশ কুমার নীরবে বিদায় নিলেন। সঙ্গে বিজেপি তথা এনডিএ-র বাকি নেতারাও। সবাই চলে যাওয়ার পরে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধরি এনডিএ-র কথাগুলি পড়ে শোনান। কিন্তু তিনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি।
নীতীশ গত কুড়ি বছর ধরে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বেই এনডিএ ভোটে লড়ছে বলে জানিয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ। সেই নীতীশ এনডিএ সরকার ক্ষমতায় ফিরলে কী কাজ করবে, তা নিয়ে মুখ খুললেন না। গত বিশ বছরে তাঁর সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরলেন না। নীরবে এসেছিলেন। নীরবেই বিদায় নিলেন।
বিজেপির দাবি, সকলের প্রচার কর্মসূচি ছিল। বিরোধীরা অবশ্য নীতীশের নীরবতাকে হাতিয়ার করে প্রশ্ন তুললেন, নীতীশকে কি কথা বলতে দেওয়া হল না? তিনি কি শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ রয়েছেন? নীতীশের নীরবতায় ফের রাজনৈতিক জল্পনা তৈরি হল, এনডিএ ক্ষমতায় ফিরলে বিজেপি কি নীতীশের শারীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে তাঁকে আর মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসতে দেবে না? বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুধুমাত্র উচ্চবর্ণের সঙ্গে অতীব অনগ্রসর শ্রেণি বা ইবিসি ভোটের জন্য কি নীতীশকে সামনে রাখা হচ্ছে?
দু’দিন আগেই অমিত শাহ বলেছিলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী পদের মতো বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদও খালি নেই। দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদী, পটনায় নীতীশ কুমার রয়েছেন। জেডিইউ নেতাদের দাবি ছিল, শাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। যদিও তিনি তা সরাসরি বলেননি। বরং বিহারে ভোটের প্রচারের গোড়ায় শাহের অবস্থান ছিল, নীতীশের নেতৃত্বে এনডিএ ভোটে লড়বে। তবে ভোটের পরে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা বিধায়করা ঠিক করবেন।
এনডিএ-র ইস্তাহার প্রকাশের পরে পটনার ওই হোটেলেই সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেসের বিহারের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক অশোক গহলৌত বলেন, “মাত্র ২৬ সেকেন্ডের সাংবাদিক সম্মেলন করে নীতীশ কুমার, জে পি নড্ডারা নতুন রেকর্ড করলেন। নিজেদের ইস্তাহারে নিজেদেরই বিশ্বাস নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে এত ভয় কেন?” কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার প্রশ্ন, “কেন নীতীশজিকে কথা বলতে দেওয়া হল না? যদি নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ না করা হয়, তা হলে স্পষ্ট বলা হোক।”
এনডিএ-র ইস্তাহারে প্রত্যাশামতোই চাকরি, মহিলা, পরিকাঠামো ও শিক্ষা অগ্রাধিকার পেয়েছে। বিহারে ১ কোটি সরকারি চাকরি, ১ কোটি লাখপতি দিদি, ‘বিকশিত বিহার’-এর জন্য সাতটি এক্সপ্রেসওয়ে, ১০টি শিল্প তালুক থেকে ‘সীতার জন্মস্থান’ বলে খ্যাত সীতামঢ়ীতে সীতাপুরম নামে আধ্যাত্মিক শহর গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, এনডিএ সব কিছুতেই বিরোধীদের নকল করেছে।