Unnao Rape Victim

‘জামিন বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানাব’, বহিষ্কৃত বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে আবার লড়াইয়ে উন্নাওয়ের নির্যাতিতা

২০১৭ সালে উন্নাও জেলায় এক নাবালিকাকে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় বিজেপির তৎকালীন বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারকে দোষী সাব্যস্ত করে নিম্ন আদালত। যাবজ্জীবন সাজাও শুনিয়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৭
Unnao rape survivor vows to move Supreme Court after Delhi HC suspends former BJP MP Kuldeep Sengar’s sentence

উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত কুলদীপ সেঙ্গার। —ফাইল চিত্র।

দিল্লি হাই কোর্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এ বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ঘোষণা করলেন উত্তরপ্রদেশের উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডের নির্যাতিতা। ২০১৭ সালের ওই ধর্ষণকাণ্ডে যাবজ্জীবন জেলের শাস্তিপ্রাপ্ত প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের সাজা মঙ্গলবার স্থগিত রেখে জামিন মঞ্জুর করেছিল দিল্লি হাই কোর্ট। তারই বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানানোর কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।

Advertisement

দিল্লি হাই কোর্টের রায় ঘোষণার হওয়ার পরই ইন্ডিয়া গেটের বাইরে অবস্থানে বসেছিলেন নির্যাতিতা এবং তাঁর মা। সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েক জন মানবাধিকার কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা। কিন্তু গভীর রাতে দিল্লি পুলিশ বলপ্রয়োগ করে অবস্থান-বিক্ষোভ তুলে দেয় বলে অভিযোগ। নির্যাতিতা বুধবার বলেন, ‘‘কুলদীপ মুক্তি পাওয়ায় আমরা ভীত। উনি আমার বাবাকে খুন করিয়েছেন। মিথ্যা অভিযোগে স্বামীকে জেল খাটিয়েছেন। এ বার আমার প্রাণ যেতে পারে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি এমন এক জন ধর্ষণের আসামি বেরিয়ে আসে, তা হলে আমরা কী ভাবে নিরাপদে থাকব?’’

তবে নির্যাতিতা জানান, বিচারপ্রক্রিয়ার উপর তাঁর আস্থা রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা শুরু থেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।’’ তিনি মনে করেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে আমরা জেলে থাকলেই ভাল হত।’’ অতীতের কথা স্মরণ করে নির্যাতিতা বলেন, ‘‘আমি তখনই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার পরিবারের কথা ভেবে সেই পদক্ষেপ করিনি।’’ দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রহ্মণ্যম এবং বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্করের বেঞ্চ কুলদীপের জামিন মঞ্জুর করার পরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ২০২৭ সালের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোট। তার আগে পরিকল্পনা মাফিক কুলদীপকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ নির্যাতিতা এবং বিরোধীদের।

২০১৭ সালে উন্নাওয়ের যখন ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে সেই সময় নির্যাতিতা নাবালিকা ছিলেন। বাঙ্গেরমউ কেন্দ্রের চার বারের বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার ও তাঁর সঙ্গী শশীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। সেই মামলায় ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কিছু দিনের মধ্যেই বিজেপি তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে। পুলিশের চার্জশিটের ভিত্তিতে পকসো আইনে ১২০বি (ষড়যন্ত্র), ৩৬৩ (অপহরণ) ৩৬৬ (অপহরণ ও বিবাহের জন্য বাধ্য করা) ৩৭৬ (ধর্ষণ)-সহ একাধিক ধারায় চার্জ গঠন করে আদালত। তার পর আজ সেঙ্গারকে দোষী সাব্যস্ত করেন তিসহাজারি আদালতের বিচারক ধর্মেশ শর্মা।

সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে একটি চিঠি লিখেছিলেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা। সেই চিঠির ভিত্তিতেই ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই সম্পর্কিত পাঁচটি মামলাই উত্তরপ্রদেশের আদালত থেকে দিল্লির তিসহাজারি আদালতে সরিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়াও প্রতিদিন শুনানি করে ৪৫ দিনের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশও দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি গগৈ। দিল্লির আদালতে রুদ্ধদ্বার শুনানি হয়েছিল উন্নাও মামলার। শুনানি চলাকালীন নির্যাতিতার পক্ষে সাক্ষী ছিলেন ১৩ জন। ৯ জন সাক্ষী ছিলেন বিরোধী পক্ষের। ওই দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ ও তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি, দিল্লির এইমস হাসপাতালে একটি বিশেষ আদালতও গঠন করা হয়। গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন নির্যাতিতা। তাঁর বয়ান নেওয়ার জন্য ওই বিশেষ আদালত গঠন করা হয়।

কুলদীপ প্রভাবশালী হওয়ায় নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের উপর গোড়া থেকেই নানা ভাবে অত্যাচার চলেছে বলে অভিযোগ। তাঁদের নানা ভাবে ভয় দেখানো তে ছিলই, তার সঙ্গে পরিবারের লোকজন ও অভিযুক্তকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। প্রথমত, ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগ তুলে অস্ত্র আইনে নির্যাতিতার বাবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তার ৬ দিনের মাথায় ৯ এপ্রিল পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। অভিযোগ ওঠে কুলদীপ সেঙ্গারের অঙ্গুলিহেলনেই উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের পুলিশ ওই কাণ্ড ঘটিয়েছিল।

এর পরে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই পরিবারের সঙ্গে রায়বরেলীতে যাওয়ার পথে মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন নির্যাতিতা। গাড়িতে থাকা তাঁর দুই কাকিমার মৃত্যু হয়। তবে প্রাণে বেঁচে যান নির্যাতিতা। লখনউয়ের একটি হাসপাতাল থেকে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে দিল্লির এইমস হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এই ঘটনাতেও অভিযোগ ওঠে, কুলদীপ ও তাঁর দুষ্কৃতীবাহিনীর মদতে পরিকল্পিত ভাবে গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে নির্যাতিতাকে খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল। সেঙ্গারের বিরুদ্ধে সে দু’টি মামলা এখনও চলছে। তবে ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর মূল ধর্ষণের মামলায় কুলদীপ দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিলেন নির্যাতিতা ও তাঁর পরিজনেরা। কিন্তু দিল্লি হাই কোর্টের নির্দেশে ফের আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁদের।

Advertisement
আরও পড়ুন