Diuretics (Water Pills)

অতিরিক্ত জল বার করবে ওষুধ

কেমন ভাবে কাজ করে ডাইইউরেটিকস? কেন প্রয়োজন হয় জেনে নিন।

কোয়েনা দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:০০

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

শরীরে জলশূন্যতা যেমন খারাপ, তেমন অতিরিক্ত জল থাকাও ক্ষতিকর। বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে শরীরে অতিরিক্ত জল জমতে পারে। আবার সেই জল শরীরে থেকে গেলে অন্য সমস্যা দেখা দেয়। এই জল বার করতে সাহায্য করে ডাইইউরেটিকস বা মূত্রবর্ধক ওষুধ। ইঞ্জেকশন ও ট্যাবলেট— দুই মাধ্যমেই নেওয়া যায় এই ওষুধ। দ্রুত ফলের প্রয়োজন হলে ইঞ্জেকশন ভাল। ট্যাবলেট ডাইইউরেটিকস ওয়াটার পিল নামে পরিচিত।

কেন প্রয়োজন?

নেফ্রোলজিস্ট অর্ণব দুয়ারী বলছেন, “রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে কিডনিতে আসে। সেখানে একাধিক ফিলট্রেশন, সিক্রেশনের মাধ্যমে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, গ্লুকোজ় ইত্যাদি প্রয়োজনীয় উপাদান ও মিনারেলস ছেঁকে অতিরিক্ত জল শরীরের বাইরে বার হয়।” কিন্তু হার্ট, লিভার ইত্যাদির সমস্যায় কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে শরীরে অতিরিক্ত জল জমতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাহায্য করে ডাইইউরেটিকস। তবে কোনও সাধারণ অসুস্থতায় তা দেওয়া হয় না। জেনারেল ফিজ়িশিয়ান সুবীর মণ্ডল বলছেন, “হার্ট ফেলিয়োরের সময়ে হৃৎপিণ্ডের উপরে চাপ কমাতে বা কিডনি ফেলিয়োর, ব্রেন হেমারেজ, সিরোসিস অব লিভারের মতো সমস্যায় এই ওষুধ ব্যবহার হয়।”

কিছু সাধারণ শারীরিক সমস্যাতেও কাজে দেয় ওয়াটার পিল। যেমন, গ্লকোমা, উচ্চ রক্তচাপ, পা ফোলা ইত্যাদি। ডা. দুয়ারী জানালেন, গ্লকোমার সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে চোখের উপরে চাপ কমাতে অতিরিক্ত জল শরীর থেকে বার করে দিতে হয়। আবার প্রস্রাবের সময়ে জলের সঙ্গে সোডিয়ামও বেরিয়ে যায়, যা রক্তে নুনের পরিমাণ কমায়। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ওয়াটার পিল কার্যকর। রক্তচাপ কমলে হার্ট, কিডনির সমস্যা, স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে। শরীরে জল বেশি থাকার কারণে অনেকে ফুলে যান, পা ফুলে যায়। হাই অল্টিটিউডে সমস্যা হয় অনেকের। ওয়াটার পিল ব্যবহারে তা কমে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

ডাইইউরেটিকসের ধরন

  • থায়াজ়াইড: অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। উচ্চ রক্তচাপ, পা ফোলার সমস্যায় কাজে লাগে।
  • লুপ: সবচেয়ে দ্রুত ও শক্তিশালী। কিডনি বা হার্ট ফেল, ফুসফুসে রক্ত জমা, ব্রেন হেমারেজের মতো গুরুতর অসুস্থতায় জীবনদায়ী ওষুধ।
  • পটাশিয়াম-স্পেয়ারিং: এই ওষুধে জলের সঙ্গে শরীর থেকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম, সোডিয়ামও বেরিয়ে যায়, যা থেকে অন্য সমস্যা হয়। ডা. মণ্ডল বলছেন, “সোডিয়ামকে আটকানোর উপায় না থাকলেও, পটাশিয়াম-স্পেয়ারিং ডাইইউরেটিকস ব্যবহারে সে সমস্যা এড়ানো যায়।” হরমোনের গোলমাল, পিসিওডি, অ্যাসিটিসের মতো সমস্যায় কাজে লাগে।
  • কার্বন অ্যানহাইড্রেজ় ইনহিবিটরস: গ্লকোমা, অল্টিটিউড সিকনেসের সমস্যায় কাজ করে। তবে এই ডাইইউরেটিকস কম ব্যবহার হয়।
  • অসমোটিক: কেবল হাসপাতালেই ব্যবহার হয়। ব্রেন সোয়েলিং কিংবা আঘাতে কিডনির ক্ষতি হলে প্রয়োজন।

সমস্যাও রয়েছে

ডাইইউরেটিকসের নিয়মিত ব্যবহারে শরীরে জলশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তা থেকে রেনাল প্রবলেম, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতে হয়। তাই এ ক্ষেত্রে জল বেশি খাওয়া দরকার। তা ছাড়া, এই ওষুধ ব্যবহারকারীদের মাসে এক-দু’বার পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদির মাত্রা পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি।

দীর্ঘ দিন এই ওষুধ ব্যবহারে কিছু পার্শ্ব–প্রতিক্রিয়া হতে পারে। মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, ভুল বকা, পেশিতে ক্র্যাম্প, খিঁচুনি, অনিয়ন্ত্রিত হার্টবিটের সমস্যা হয়। রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে বিপদ হতে পারে। ক্রমাগত ডাইইউরেটিকস ব্যবহার কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কিডনি ফেলিয়োরেরও ভয় থাকে। তা ছাড়া, ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা কমে গিয়ে পেশিতে ও গাঁটের ব্যথা বাড়তে পারে।

রোগের গুরুত্ব, রোগীর সমস্যা, তাঁর বয়স, ওজন, আনুষঙ্গিক শারীরিক সমস্যার উপরে নির্ভর করে ডাইইউরেটিকসের ধরন, ডোজ় ও সময়সীমা। তাই এই ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।

আরও পড়ুন