পুষ্পক রথে চড়ে রাবণ যখন সীতাহরণ করে লঙ্কা যাচ্ছিল, তাকে বাধা দিয়েছিল জটায়ু। রাক্ষসরাজের সঙ্গে ভীষণ লড়াই হয় তার। পরে রামকে সীতাহরণের খবর দিয়েছিল সে। রামায়ণের সেই পাখিই যেন এ যুগের ড্রোন, আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি)। এক কথায়, রিমোট নিয়ন্ত্রিত এই যান ‘জটায়ু’র আধুনিক রূপ। সেন্সর বা প্রোগ্রামের সাহায্যে আকাশে ওড়ে, নজর রাখে সীমান্তে, পৌঁছে দেয় ওষুধ, পণ্য। এক সময় ড্রোন শুধুই খেলনা ছিল, শখে ওড়াত অনেকে। এখন ছবি তোলা থেকে কৃষিকাজ, সামরিক নজরদারি থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা— ড্রোন হয়ে উঠেছে এক যান্ত্রিক আকাশদূত। ক্যামেরা, জিপিএস, সেন্সর-সহ নানা আধুনিক সুযোগসুবিধা থাকে এতে। তবে এই স্বাধীন উড়ান কিন্তু কখনওই আইন বহির্ভূত নয়। ড্রোন ব্যবহারের আগে জানতে হয় নির্দিষ্ট নিয়ম, অনুমতি ও নিরাপত্তাবিধি।
কেনার আগে জানুন
ড্রোন কেনার আগে তা দিয়ে ঠিক কী ধরনের কাজ করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি—
ডিজিসিএ-র নিয়মনীতি
ড্রোন নিয়ন্ত্রিত হয় ডিজিটাল স্কাই প্ল্যাটফর্ম মারফত। তা ওড়াতে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর অনুমতি প্রয়োজন। ডিজিটাল ফরেন্সিক অ্যান্ড ফিনানশিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেটর পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলছেন, “যে কোনও জায়গায় ইচ্ছে মতো ড্রোন ওড়ানো যায় না। এর জন্য লাল, হলুদ, সবুজ বিভিন্ন জ়োন ভাগ রয়েছে।” বিমানবন্দরের আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা রেড জ়োন। এই এলাকায় ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি নেই। রেড জ়োনের পরের তিন কিলোমিটার ইয়েলো জ়োন। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর অনুমতি নিয়ে এই জ়োনে ড্রোন ওড়ানো যায়। বিমানবন্দর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গ্রিন জ়োন। এখানে এটিসির অনুমতির প্রয়োজন নেই। বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতেই ড্রোনের ওড়ার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
নো-ফ্লাই জ়োন
বিমানবন্দর, সামরিক ঘাঁটি ও তার নিকটবর্তী এলাকা, আন্তর্জাতিক সীমান্ত— নো-ফ্লাই জ়োন। রাষ্ট্রপতি ভবন, সংসদ ভবনের মতো সরকারি এলাকা, বন্যপ্রাণ সংরক্ষিত অঞ্চলেও ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ। কিছু রাজ্য, জেলা সীমান্তেও ড্রোন ওড়াতে হলে আগাম অনুমতি প্রয়োজন। কলকাতায় যেমন ফোর্ট উইলিয়ামের আশপাশে ড্রোন ওড়ালে বিশেষ অনুমতি দরকার। জনসমাগম, মিছিল, কোনও ধর্মস্থান বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপরেও ড্রোন ওড়ানো বারণ। এ ক্ষেত্রে ডিজিসিএ ও নির্দিষ্ট প্রশাসনিক দফতরের অনুমতি লাগে।
ড্রোনের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন
পার্থপ্রতিম বলছেন, “সাময়িক ভাবেও কোনও এলাকায় কোনও নির্দিষ্ট দিনের জন্য উড়ান বন্ধ থাকতে পারে। সে কারণে যে কোনও ড্রোন ওড়ানোর আগে অবশ্যই ডিজিটাল স্কাই প্ল্যাটফর্ম অ্যাপ দেখে নেওয়া জরুরি।”
শখে হোক কিংবা পেশার খাতিরে— আজকাল অনেকেই ড্রোন ব্যবহার করেন। ড্রোন ওড়ানোর আগে খেয়াল রাখুন নিয়মকানুন। নিয়ম অমান্য করলে জরিমানা, শাস্তি হতে পারে। এমনকি প্রশাসন চাইলে ড্রোন বাজেয়াপ্তও করতে পারে। তাই প্রযুক্তিকে দায়িত্বের সঙ্গে ব্যবহার করুন।
ওজন অনুসারে
ন্যানো: ২৫০ গ্রামের কম।
মাইক্রো: ২৫০ গ্রাম-২ কেজি।
ছোট: ২-২৫ কেজি।
মাঝারি: ২৫-১৫০ কেজি।
বড়: ১৫০ কেজির বেশি।