Whatsapp Image Scam

হোয়াট্‌সঅ্যাপে অজানা নম্বর থেকে আসা ছবি ডাউনলোড করলেই বিপদ, ফাঁকা হয়ে যেতে পারে অ্যাকাউন্ট

অজানা নম্বর থেকে আসা ছবি ডাউনলোড করে ২ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন এক যুবক। প্রতারণার এক নতুন চক্র শুরু হয়েছে হোয়াট্‌সঅ্যাপে, সতর্ক করল জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১০:১৩
Man lost Rs 2 Lakh after downloaded a WhatsApp image, how to protect yourself

কী ধরনের প্রতারণা শুরু হয়েছে হোয়াট্‌সঅ্যাপে? ফাইল চিত্র।

অজানা নম্বর থেকে কেউ মেসেজ করলে তা কি খুলে পড়েন? ছবি বা ফাইল ডাউনলোড করে দেখেন? তা হলেই কিন্তু সর্বনাশ। অজানা নম্বর থেকে আসা ফোন না ধরলেও, যদি কৌতুহলের বশে ছবি বা কোনও রকম ফাইল ডাউনলোড করে ফেলেন, তা হলেই আপনার ফোনটি পুরোপুরি চলে যাবে প্রতারকদের জিম্মায়। তার পর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লুটে নেওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। হায়দরাবাদের এক যুবক সম্প্রতি এমনই এক প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে লাখ দুয়েক টাকা খুইয়েছেন।

Advertisement

প্রদীপ জৈন নামে এক যুবক জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা বিভাগে হোয়াট্‌সঅ্যাপে প্রতারণার এই নতুন চক্র নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অজানা নম্বর থেকে বার বার অডিয়ো কল আসছিল তাঁর ফোনে। তিনি ফোনটি ধরেননি। তার পরে দেখেন, সেই নম্বর থেকে একটি মেসেজ এসেছে তাঁর হোয়াট্‌সঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে। প্রোফাইলের ছবি একজন বয়স্ক ব্যক্তির। তিনি একটি ছবি পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন, সেই ছবির ব্যক্তিকে ওই যুবক চেনেন কি না। খুবই সাধারণ মেসেজ এবং ছবিটিতেও কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। যুবক ছবিটি ডাউনলোড করেন। আর তার কিছু ক্ষণ পরেই দেখেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হায়দরাবাদেরই একটি এটিএম থেকে টাকা তোলা হয়েছে।

জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের তরফে সতর্ক করে বলা হয়েছে, হোয়াট্‌সঅ্যাপে প্রতারণার এক নতুন চক্র শুরু হয়েছে। অজানা নম্বর থেকে আসা ছবি, ফাইল, ভয়েস মেসেজের লিঙ্ক ডাউনলোড করলেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দিচ্ছে হ্যাকাররা। প্রতারণার এই পদ্ধতির নাম ‘লিস্ট সিগনিফিক্যান্ট বিট স্টেগানোগ্রাফি’।

কী এই প্রতারণার চক্র?

স্টেগানোগ্রাফি খুব পুরনো এক হ্যাকিং পদ্ধতি। ২০১৭ সালেও এই পদ্ধতিতে ফোনে ছবি পাঠিয়ে প্রতারণা করত সাইবার অপরাধীরা। এই পদ্ধতিতে ছবি বা ফাইলের ভিতর খুব নিখুঁত ভাবে ভরে দেওয়া হয় ম্যালঅয়্যার বা স্পাইঅয়্যার। আপাতদৃষ্টিতে ছবিটি দেখলে অস্বাভাবিক মনে হবে না। সাধারণ ছবি নিয়েই সেটিকে ভাইরাসে রূপান্তরিত করে হ্যাকারেরা। হয়তো দেখবেন, কোনও প্রাকৃতিক দৃশ্য বা অজানা কোনও ব্যক্তির ছবি অথবা গ্রুপ ফোটো আপনার ফোনে পাঠানো হবে। কৌতুহলবশে সেটি খুলে ফেললেই মুশকিল। তৎক্ষণাৎ ছবিতে থাকা ভাইরাস আপনার ফোনে ঢুকে যাবে।হ্যাকারেরা ছবি বা ফাইলে একটি পে-লোড ইনস্টল করে দিচ্ছে। তার ভিতরে অনেকগুলি চ্যানেল রয়েছে। আলফা চ্যানেলে ভরে দেওয়া হচ্ছে ম্যালঅয়্যার বা ক্ষতিকর কোনও সফট্‌অয়্যার। এ বার সেই ছবিটি ডাউনলোড করলেই, তার ভিতরে থাকা ম্যালঅয়্যার ফোনের মেমরিতে ঢুকে যাবে। তার পর সেটি নিজে থেকেই ইনস্টল্‌ড হয়ে ফোনের সিস্টেমে ভাইরাস ঢুকিয়ে দেবে। ফলে ফোনটি অজান্তেই প্রতারকদের কবলে চলে যাবে। তার পর আপনার যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে যাবে নিমেষে। এমনকি, আপনার সব রকম অনলাইন অ্যাকাউন্ট কব্জা করে নিতে পারবে হ্যাকারেরা। এত দ্রুত এই গোটা প্রক্রিয়াটি হতে থাকবে যে, কিছু বোঝার আগেই দেখবেন, আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেরিয়ে গিয়েছে। এখানে আরও একটি ব্যাপার রয়েছে। সাইবার অপরাধ বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের ছবি বা ফাইলে থাকা ভাইরাস কিন্তু ফোনের অ্যান্টিভাইরাস সিস্টেমে ধরা পড়বে না। এমনকি এআই পরিচালিত সিকিউরিটি সিস্টেমও এমন ভাইরাসের নাগাল পাবে না। কাজেই ছবি ডাউনলোড করার আগে যদি ভাবেন, ফোন স্ক্যান করে দেখে নেবেন, তা হলে কিন্তু ঠকতেই হবে।

বাঁচার উপায় কী?

১) অজানা নম্বর থেকে আসা যে কোনও রকম ছবি, ফাইল বা ভয়েস মেসেজের লিঙ্ক খুলতে বারণ করছেন সাইবার অপরাধ বিভাগের আধিকারিকেরা। কৌতুহল দমন করতে না পারলেই, বিপদ হবে।

২) ফোনের সফ্‌টঅয়্যার সব সময়ে আপডেট করে রাখতে হবে।

৩) হোয়াট্‌সঅ্যাপে ‘সাইলেন্ট আননোন কলার্স’ বলে অপশন রয়েছে, সেটি চালু করে রাখুন।

৪) অজানা নম্বর থেকে আসা মেসেজের জবাবও দেবেন না, কোনও রকম ওটিপি শেয়ার করবেন না অথবা কিউআর কোড স্ক্যান করবেন না।

Advertisement
আরও পড়ুন