মঞ্চে শিল্পীরা।
গত জুলাই মাসে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় নিবেদিত সুন্দরনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৯৮তম স্মৃতিসন্ধ্যা উদ্যাপিত হল রবীন্দ্রসদন মঞ্চে। পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন রূপরেখা চট্টোপাধ্যায়। এই অনুষ্ঠান পরম্পরার কথা বলে, সঙ্গীতের আবহমানতার কথা বলে, আর একটি সুন্দর পরিবারের গল্প বলে। সুন্দরনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে যে অনুষ্ঠান নিবেদিত হল, তা উপস্থাপন করলেন তাঁর সুযোগ্য দুই কন্যা রূপরেখা চট্টোপাধ্যায় ও বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের সূচনা হল একটি সমবেত রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ’ দিয়ে। ঠিক মহড়া না থাকায় গানটি সুখশ্রাব্য হয়ে উঠল না। দ্বিতীয় গানটি ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদর দিনে’ তুলনায় ভাল। সুন্দরনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন। তাঁরই উৎসাহে তাঁর দুই কন্যা রূপরেখা ও শ্রীরাধা সঙ্গীতের তালিম পান।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আবৃত্তি শোনালেন পারমিতা সরকার। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার’ ও কাজী নজরুল রচিত ‘দাও সূর্য’। পরিবেশনা যথাযথ। অলোককুমার দাস হারমোনিকায় বাজিয়ে শোনালেন হিমাংশু দত্তের সুরে ‘তোমারই পথপানে চাহি’ ও শঙ্কর জয়কিষণের সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া বিখ্যাত গান ‘ইয়াদ কিয়া দিল নে কহাঁ হো তুম’। চমৎকার উপস্থাপনা। বাজনা শুনতে শুনতে মিলন গুপ্তের কথা মনে পড়ে। প্রখ্যাত সুরকার প্রয়াত অজয় দাসের কন্যা সায়রী দাস শোনালেন অজয় দাসের কথা ও সুরে ‘সন্ধ্যা ঘনাক ক্ষতি নেই, রাত্রি আসুক ক্ষতি নেই’। সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে ‘সবার আড়ালে সাঁঝ সকালে’। ‘অবাক রাতের তারা’ ছায়াছবিতে এই গানটি গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। এ ছাড়া তিনি গাইলেন অজয় দাসের সুরে ও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় কিশোরকুমারের গাওয়া ‘মিলনতিথি’ ছায়াছবির গান ‘সুখেও কেঁদে ওঠে মন’। শ্রোতাদের অনুরোধে গাইলেন সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে ‘ও মোর ময়না গো’। প্রত্যেকটি গানই সুগীত। পরবর্তী শিল্পী ইন্দ্রনীল দত্তের কণ্ঠে শোনা গেল ‘যদি কাগজে লেখো নাম’, বর্ষণমুখর দিনে শোনালেন ‘ও বর্ষা তুমি ঝোরো না গো’, ‘জানি না, কখন যে সে পিছুটান রেখে গেছে’, ‘ক’ফোঁটা চোখের জল’, ‘যখন কেউ আমাকে পাগল বলে’। উদীয়মান এই শিল্পীর গান শ্রোতাদের আপ্লুত করে তোলে। শ্রোতাদের অনুরোধে শেষ গান শোনালেন সুধীন দাশগুপ্তের কথায় ও সুরে ‘এত সুর আর এত গান’। রূপরেখা চট্টোপাধ্যায় শোনালেন ‘আমার মালতীলতা’, ‘বৃষ্টি থামার শেষে’, ‘দূরে দূরে, কাছে কাছে’ এবং সব শেষে ‘সানি’ ছায়াছবির গান রাহুল দেব বর্মনের সুরে ‘জানে কেয়া বাত হ্যায়’।
প্রথমার্ধের শেষ ভাগে শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করলেন সরস্বতীবন্দনা দিয়ে। চমৎকার সুরেলা কণ্ঠে প্রেক্ষাগৃহ ভরে গেল। অপূর্ব উপস্থাপনা। অন্যান্য গানের মধ্যে ছিল হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সুরে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘তুমি তো শীতল চন্দনবৃক্ষ, তুমি পাথর চোখেও যে দৃষ্টি’, অজয় দাসের সুরে ‘পাপপুণ্য’ ছায়াছবির গান, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ভালবাসা ছাড়া আর আছে কি’... মন ভরে গেল। শ্রীরাধা অনুষ্ঠান শেষ করলেন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘বাঁশিটির একটাই দোষ, বলে রাধা রাধা’ গানটি দিয়ে। যে সুরের মায়াজাল তিনি বিস্তার করে গেলেন, তা মনে রাখার মতো।
দ্বিতীয়ার্ধে উপস্থাপিত হল নিউ আলিপুর মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রাক্তনীদের সাংস্কৃতিক শাখার প্রযোজনায় একাঙ্ক নাটক ‘একটি অবাস্তব গল্প’। কাহিনি, বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পাদনা ও নির্দেশনায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। নাটকটি আগাগোড়া হাসির মোড়কে তৈরি এক জটিল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উপস্থাপিত হল। জেলারের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করলেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। উল্লেখযোগ্য অভিনয় করলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং অরূপ দে। অন্যান্যদের মধ্যে বাসুদেব মুখোপাধ্যায়, বিশ্বপ্রেম নায়ক, প্রতীক দাশগুপ্ত, অরুণাংশু চক্রবর্তী ও পার্থ পুরকায়স্থ উল্লেখ্য। নাটকটি মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছিল। তবে একই সন্ধ্যায় নাটক ও গান পরিবেশিত হওয়ায় কোনওটিকেই আলাদা করে প্রাধান্য দেওয়া গেল না। উদ্যোক্তারা ভবিষ্যতে এ বিষয়ে একটু ভাবনাচিন্তা করতে পারেন। অনুষ্ঠানে যন্ত্রসঙ্গীতে সহযোগিতা করেছেন সিদ্ধার্থ গঙ্গোপাধ্যায় (গিটার), গৌতম চৌধুরী (কী বোর্ড), দেবজ্যোতি গোস্বামী (তবলা), সুবল মজুমদার (অক্টোপ্যাড)। এঁদের মধ্যে দেবজ্যোতি গোস্বামীর বাদন স্মরণীয়।
অনুষ্ঠান