Menendez Brothers’ Prison Life

বাবা-মাকে খুন করে ২৯ বছর জেল, গরাদের ভিতরেই প্রেম, বিয়ে! দুই ভাইয়ের ভয়ঙ্কর জীবনের সাক্ষী ট্রাম্পের দেশ

কেটে গিয়েছে প্রায় ৩৬টা বছর! বাবা-মাকে নির্মম ভাবে হত্যা করার কারণে আজও কারাবন্দি আমেরিকার দুই ভাই। গরাদের ভিতরে থেকেই হয়েছে প্রেম, পরে বিয়ে। বাবার অত্যাচার থেকে বাঁচতেই খুনের পথ বেছে নেয় বলে দাবি করে এরিক মেনেন্দেজ ও লায়েল মেনেন্দেজ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৫ ১১:১৪
০১ ২০
Menendez Brothers

ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে বিলাসবহুল বাড়ি, দামি গাড়ি, বাহারি পোশাকের ছোঁয়া— আপাতদৃষ্টিতে এক সচ্ছল উচ্চবিত্ত পরিবারের উদাহরণ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এখানে জমে উঠছিল ক্ষোভ আর ক্রোধ, যা একসময় রূপ নেয় ভয়ঙ্কর পরিণতিতে। নিজেদের হাতেই বাবা-মাকে খুন করে লায়েল মেনেন্দেজ ও এরিক মেনেন্দেজ। খুনের বেশ কিছু বছর পর ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। মেলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

০২ ২০
Menendez Brothers

১৯৮৯ সালে ছোট ভাই এরিকের বয়স ছিল ১৮ বছর, বড় ভাইয়ের ২১ বছর। রাত তখন প্রায় ১১টা। বাবা হোসে মেনেন্দেজ সোফায় বসে আরাম করে টিভি দেখছিলেন, মা কিটি মেনেন্দেজ ব্যস্ত ছিলেন ঘরের কাজে। হঠাৎই বাড়ির দুই ছেলে ঢোকে বন্দুক হাতে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবাকে লক্ষ্য করে চালায় গুলি। মা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তা বৃথা যায়। তাঁকেও গুলি করতে হাত কাঁপেনি দুই ভাইয়ের। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাবা-মা। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন দু’জনেই।

০৩ ২০
Menendez Brothers

এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার পর বিন্দুমাত্র আত্মগ্লানি হয়নি দুই ভাইয়ের। ঘটনার পর তারা ‘ব্যাটম্যান’ সিনেমা দেখতে যায়। বাড়ি ফিরে নিজে থেকেই ৯১১-এ ফোন করে তারা। কাঁদতে কাঁদতে ফোনে পুলিশকে বলে, ‘‘আমাদের মা–বাবাকে মেরে ফেলেছে কেউ।’’ তারা বাড়িতে ঢুকেই বাবা-মাকে এমন অবস্থায় দেখে তা-ও জানায়।

Advertisement
০৪ ২০
Menendez Brothers

প্রথম দিকে পুলিশের সন্দেহ যায় কোনও ব্যবসায়িক শত্রুর দিকে। প্রশাসনের মনে হয়েছিল হয়তো হোসের বিপুল টাকা ও সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই কেউ খুন করেছে তাঁদের। খুনের সময় দুই ছেলে বাড়িতে না থাকার কারণে তারা বেঁচে যায়।

০৫ ২০
Menendez Brothers

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর পরই পরিবর্তন হতে থাকে দুই ভাইয়ের জীবনযাপনে। দুই ভাই ঘুরতে চলে যায় লাস ভেগাস। কিনতে থাকে একের পর এক দামি গাড়ি, দামি ঘড়ি। ব্যবসায় প্রচুর টাকাও বিনিয়োগ করতে শুরু করে। সদ্য বাবা-মা হারানো দুই ভাইয়ের এমন বিলাসিতায় সন্দেহ হয় পুলিশের। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ মিলছিল না দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

Advertisement
০৬ ২০
Menendez Brothers

বাবা-মাকে খুনের পর বাইরে থেকে যতই শক্ত দেখাক না কেন, ভিতর ভিতর ভয় এবং মানসিক চাপ ক্রমাগত গ্রাস করতে থাকে দুই ভাইকেই। দিনরাত দুঃস্বপ্ন আসতে থাকে। ক্রমশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিল তারা। অবশেষে জেরোম অজিয়েল নামক এক মনোবিদের সাহায্য নিয়েছিল দুই ভাই।

০৭ ২০
Menendez Brothers

তাদের জীবনের ভয়ঙ্কর সত্যিটা পৃথিবীর কোনও এক জনকে জানাতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু কোনও ভাবেই তা যাতে পুলিশ অথবা তাদের কোনও আত্মীয়স্বজনের কান পর্যন্ত না পৌঁছোয় সে বিষয়ও সজাগ ছিল তারা। তাই শেষ পর্যন্ত নিজেদের ভিতরে না রাখতে পেরে মনোবিদকে সবটা খুলে বলেছিল।

Advertisement
০৮ ২০
Menendez Brothers

মনোবিদকে এরিক বলেছিল, ‘‘আমি আর এই বোঝা বয়ে নিয়ে চলতে পারছি না। আমরা আমাদের বাবা-মাকে মেরে ফেলেছি। আমি জানি এটা ভুল, কিন্তু আমরা যা সহ্য করছিলাম, তার থেকে মুক্তির আর কোনও পথ দেখিনি।’’ তাদের খুনের পরিকল্পনা করা, বন্দুক কেনা থেকে সে দিনের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে মনোবিদের কাছে।

০৯ ২০
Menendez Brothers

এরিক মনোবিদকে আরও বলে, ‘‘আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না আমি এই কাজ করেছি।’’ তাঁদের এই স্বীকারোক্তির সম্পূর্ণটা মনোবিদ তাঁর কাজের স্বার্থে রেকর্ড করেছিলেন। জেরোম নিজে থেকে প্রশাসনকে কিছু না জানালেও তাঁর প্রেমিকা জুডি এরি ওই অডিয়ো টেপ রেকর্ডিং শুনে ফেলেন। তিনিই পুলিশকে সব সত্যি জানিয়ে দিয়েছিলেন এবং উপযুক্ত প্রমাণস্বরূপ অডিয়ো টেপ রেকর্ডিংটা দিয়ে দিয়েছিলেন।

১০ ২০
Menendez Brothers

ঘটনার এক বছর পর ১৯৯০ সালে জুডির জন্যই পুলিশ প্রথম প্রমাণ পান, যার জেরে ওই বছরই প্রথম গরাদে ঢোকে দুই ভাই। তার পর জেলবন্দি ছিল আরও কয়েক বছর। ১৯৯৩ থেকে শুরু হয় বিচারপর্ব। প্রথম দিকে দুই ভাইয়ের পৃথক ভাবে বিচার চলছিল। কিন্তু তাতে কোনও সুরাহা মিলছিল না বিচারকদের কাছে।

১১ ২০
Menendez Brothers

পরে ১৯৯৫-এ দুই ভাইয়ের একসঙ্গে বিচার শুরু হয়। উপযুক্ত প্রমাণ থাকার পাশাপাশি দুই ভাই স্বীকারও করে নিয়েছিল খুনের কথা। তার পরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মেলে তাদের। তখনই সারা জীবন কোনও রকম প্যারোল পাবে না বলে ধার্য হয়েছিল। যদিও ২০২৫-এ আইন মেনে এরিক প্যারোলের আবেদন করেন। তবে তা খারিজ হয়ে যায়। ফলত এখনও গরাদ-জীবন কাটাচ্ছে দুই ভাই।

১২ ২০
Menendez Brothers

কিন্তু হঠাৎ নিজের বাবা-মাকে কেন খুন করল— বিচারকের এমন প্রশ্নে দুই ভাই জানিয়েছিল তারা ছোট থেকে বাবার কাছে খুবই নির্যাতিত হয়েছে। তাদের উপর সব সময় শারীরিক অত্যাচার করা হত। মানসিক যন্ত্রণার শিকারও হয়েছিল তারা। এরিক বলে, “আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ছিলাম। এমন অত্যাচার থেকে পালানোর কোনও পথ ছিল না বলেই বিশ্বাস করতাম।”

১৩ ২০
Menendez Brothers

বাবার অত্যাচার থেকে বাঁচতে বাবাকে খুন করেছে, কিন্তু মায়ের কী দোষ ছিল— এমন প্রশ্ন করতেই কাঁদো কাঁদো গলায় এরিক বলে ওঠে, “আমরা মাকে খুন করতে চাইনি। কিন্তু আমাদের আর কোনও পথ খোলা ছিল না। মা সব জানত, কিন্তু সব সময় চুপ থাকত। আমি সব সময় মাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যদি আমি মাকে সব জানাতাম, সে কখনও এটি মেনে নিত না। তাই বাধ্য হয়ে মাকেও মারতে হয়েছে।’’

১৪ ২০
Menendez Brothers

আমেরিকার নিয়ম অনুযায়ী কারাদণ্ডে থাকাকালীন কেউ চাইলে বিয়ে করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বড় করে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান করা হয় না। খুব ছোট করেই আইন মেনে বিয়ে হয়। তবে আলাদা ভাবে কোনও দাম্পত্য জীবন কাটানোর নিয়ম নেই সেখানে। সেইমতো গরাদের মধ্যে থেকেই বিয়ে করে দুই ভাই। লাইল দু’বার বিয়ে করলেও এরিকের একটাই বিয়ে।

১৫ ২০
Menendez Brothers

জেলজীবনের কয়েক বছর পরেই আনা এরিক্সনকে বিয়ে করেছিল লাইল। চিঠি আদানপ্রদান থেকে তাদের প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়, যা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু কয়েক বছর পরই আনা বুঝেছিলেন লাইলের সঙ্গে কোনও দিনই স্বাভাবিক ভাবে সংসার করতে পারবেন না তিনি। তাই একটা সময়ের পর বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। ২০০৩ সালে রেবেকা স্নিড নামে এক তরুণীকে বিয়ে করে লাইল।

১৬ ২০
Menendez Brothers

এরিক বিয়ে করে তামি রুথ স্যাকোম্যান নামক এক তরুণীকে। এখনও তিনিই এরিকের স্ত্রী। এঁরা কেউই আসামি বা জেলবন্দি নন। দুই ভাইয়ের এমন ঘটনা সমাজে ছড়িয়ে পড়ার পর তিন জনেই নিজে থেকে দুই ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় চিঠি আদানপ্রদান এবং প্রেম। তার পরই বিয়ে হয় তাঁদের।

১৭ ২০
Menendez Brothers

ঘটনার ২৯ বছরের মাথায় প্যারোলের আবেদন করে দুই ভাই। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা ধরে শুনানি চলে। এরিক বিচারকদের বোঝাতে চেয়েছিল যে ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস রাখছে সে। জেলবন্দি জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং একজন ভাল মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও এমন কথায় বরফ গলেনি।

১৮ ২০
Menendez Brothers

কারাজীবনেও এরিকের একাধিক খারাপ দিক সামনে এসেছে। ২০১৩ সালের আগে পর্যন্ত নেশার দ্রব্য, মোবাইল ব্যবহার, অসামাজিক কাজে নিযুক্ত থাকা— সব কিছুই জেলে বসে চালাচ্ছিল এরিক। তার ভাই যদিও এমন ঘটনার পর অনেকটাই চুপ করে গিয়েছিল।

১৯ ২০
Menendez Brothers

প্যারোলের জন্য বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, জেলবন্দি থেকে কেন ফোন ব্যবহার করেছে, মদ্যপান করেছে, অন্যান্য নিয়মভঙ্গ করেছে? এরিকের যুক্তি ছিল, ‘‘ফোন ব্যবহার ও নিয়মভঙ্গ করেছিলাম মানসিক চাপ ও দুঃখ কমাতে। দুঃখ কমাতেই মদ্যপান করতাম। তবে ২০১৩-এর পর আমি সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে পরিবর্তন করেছি।’’ এমন জবাবের পরেও প্যারোল মেলেনি তাদের।

২০ ২০
Menendez Brothers

ভয়ঙ্করতম অপরাধ, জেলের নিয়ম দীর্ঘ বছর না মানার কারণে প্যারোল মেলেনি দুই ভাইয়ের। তাই আজও জেলবন্দি দুই ভাই। তবুও আশা রেখেছে পরে কখনও না কখনও সমাজের মূল স্রোতে হয়তো ফিরতে পারবে তারা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি