জলের নীচের যুদ্ধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ! বিশ্বে প্রথম বার পঞ্চম প্রজন্মের ডুবোজাহাজ তৈরির দাবি করল সুইডেনের প্রতিরক্ষা সংস্থা সাব।
সুইডেন প্রতিরক্ষা সংস্থার তৈরি ওই ডুবোজাহাজের নাম এ২৬। সংস্থাটির দাবি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি ওই ডুবোজাহাজটি আধুনিক নৌকৌশলগুলিকে আরও আধুনিক করতে সক্ষম। বহুমুখী অভিযানে গোপনীয়তা বজায় রেখে শত্রুপক্ষকে ধরাশায়ী করতে পারবে ডুবোজাহাজটি।
কিন্তু এ২৬ বাকি ডুবোজাহাজদের থেকে কোথায় আলাদা? সাব-এর মতে, বর্তমানের জটিল সামরিক পরিস্থিতিতে অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে এ২৬। ডুবোজাহাজটি জলতলের যুদ্ধক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের প্রতিনিধিত্ব করবে বলেও দাবি করা হচ্ছে।
বিশ্বের প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের ডুবোজাহাজ হিসাবে এ২৬-কে আধুনিক নৌযুদ্ধের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে বলেও দাবি।
সাব-এর তরফে জানানো হয়েছে, এ২৬ ডুবোজাহাজটি বহুস্তরীয় যুদ্ধের জন্য তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চম প্রজন্মের এই স্টেল্থ ডুবোজাহাজ সমুদ্র, আকাশ এবং তথ্য ক্ষেত্রে যুদ্ধ করতেও সক্ষম হবে।
একটি বিবৃতি জারি করে সাব-এর তরফে বলা হয়েছে, ‘‘আধুনিক বহুস্তরীয় অভিযানে চাহিদা পূরণের জন্য সর্বাধিক উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন। আর এ২৬কে ঠিক সে ভাবেই তৈরি করা হয়েছে।’’
গোপন অভিযান পরিচালনা করতে এবং ড্রোন পরিচালনাতেও সক্ষম এ২৬। এ২৬-এর নকশার উপরেও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
এ২৬ ডুবোজাহাজটি তৈরি করা হয়েছে সুইডিশ নৌবাহিনীর জন্য। নেটোর ‘মাল্টি-ডোমেন অপারেশনস (এমডিও)’ প্রকল্পের অংশ এই ডুবোজাহাজটি। নেটোর মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এটি তৈরি করা হয়েছে।
দাবি করা হয়েছে, এ২৬ থেকে আকাশ, স্থল, সমুদ্র, সাইবার এবং মহাকাশ বাহিনীকে সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য পাঠানো সম্ভব। দীর্ঘপাল্লার টর্পেডো দিয়ে নির্ভুল ভাবে হামলা চালাতে এবং সমুদ্রতলে যুদ্ধ পরিচালনা করতেও পারবে ডুবোজাহাজটি।
সাব-এর তরফে জানানো হয়েছে, এ২৬-এ ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সুযোগও রয়েছে, যা স্থল এবং সমুদ্রে যে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ২৬-এর সবচেয়ে বড় শক্তি হল এর গোপনীয়তা। সমুদ্রের নীচে যখন এই ডুবোজাহাজ চলবে, তখন তাকে সহজে চিহ্নিত করা যাবে না। সে ভাবে সকলের অলক্ষে থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে এটি। এটাই এই ডুবোজাহাজের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
প্রাথমিক ভাবে শত্রুর হাত থেকে শনাক্ত হওয়া এড়াতে ডুবোজাহাজগুলিতে প্যাসিভ সোনার সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এ২৬-এ থাকছে উন্নত হুল জিয়োমেট্রি, রাডার-শোষণকারী আবরণ এবং একটি ইলেকট্রনিক ডিগাউসিং সিস্টেমের সংমিশ্রণ, যা ডুবোজাহাজটির চৌম্বকীয় এবং বৈদ্যুতিক উপস্থিতিকে কমিয়ে দেয়।
সাব-এর দাবি, এ২৬-এর স্টেল্থ প্রযুক্তিও অসামান্য। স্টেল্থ প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য একটাই— আড়াল থেকে শত্রুকে অতর্কিত আক্রমণ। বর্তমান সব যুদ্ধেই ব্যবহার বাড়ছে সেই যুদ্ধকৌশলের।
সেই স্টেল্থ প্রযুক্তি রয়েছে এ২৬-এও। তবে এ২৬-এর স্টেল্থ প্রযুক্তির লক্ষ্য কেবল শত্রুদের রাডার থেকে গা বাঁচিয়ে আক্রমণ নয়। এ২৬-কে গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে আপস না করে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করার ক্ষমতা জোগাবে এর স্টেল্থ প্রযুক্তি। তেমনটাই দাবি নির্মাণকারী সংস্থার।
দাবি, এ২৬-এর স্টার্লিং এয়ার-ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোপালশন (এআইপি) সিস্টেম ডুবোজাহাজটিকে দীর্ঘ সময় ধরে জলের নীচে রাখতে সক্ষম করবে। ডুবোজাহাজ থেকে মনুষ্যবিহীন ড্রোন পরিচালনা সম্ভব হবে বলেও জানানো হয়েছে সাব-এর তরফে।
সাব-এর তরফে জানানো হয়েছে, এ২৬-এ থাকছে উন্নত কৃত্রিম মেধা। ডুবোজাহাজটির এআই সিস্টেম দ্রুত পদক্ষেপ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে বলেও জানানো হয়েছে।
সুইডিশ প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে জটিল সামুদ্রিক পরিবেশগুলির অন্যতম হিসাবে গণ্য বাল্টিক সাগরে কয়েক দশকের গবেষণার সাহায্যেই এ২৬ তৈরিতে সক্ষম হয়েছে তারা।
সব ছবি: সংগৃহীত।