যে দিকে চোখ যাবে শুধু নীল জলরাশি। তার মধ্যেই ছোট্ট একটি পাথর। আকারে সাধারণ পরিবারের একটি শোয়ার ঘরের চেয়েও ছোট। সেই পাথরকে রক্ষা করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে জাপান।
জানা গিয়েছে, ছোট পাথরটিকে রক্ষা করতে ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ খরচ করছে ৭৫০০ কোটি ইয়েন (৩৫ কোটি পাউন্ডেরও বেশি)।
প্রশান্ত মহাসাগরে ১৬ বর্গমিটার আয়তনের ওই পাথরটির নাম ওকিনোটোরিশিমা। চ্যাপ্টা পাথরটির উপর হেঁটে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরোটা ঘুরে ফেলা যায়। কিন্তু কেন সেটিকে রক্ষা করতে এত তোড়জোড় জাপানের? কারণটি যেমন গুরুতর, তেমনই অদ্ভুত।
ওকিনোটোরিশিমা পাথরটি রয়েছে ওকিনোটোরি দ্বীপে। দ্বীপটি প্রবালপ্রাচীর দিয়ে তৈরি। এই দ্বীপটিকে নিজেদের বলে দাবি করে জাপান।
ওকিনোটোরি জাপানের দক্ষিণতম অংশ এবং কর্কটক্রান্তি রেখার দক্ষিণে একমাত্র জাপানি অঞ্চল। টোকিয়ো থেকে ১,৭৪০ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত ক্ষুদ্র দ্বীপটি।
আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন অনুযায়ী, সমুদ্রের উপর কোনও ভূখণ্ডে যদি কোনও দেশের মালিকানা থাকে, তা হলে সেই ভূখণ্ডের চারিদিকে ৩৭০ কিলোমিটার করে এলাকার নিয়ন্ত্রণ ওই দেশের হাতে থাকে।
শুধু তা-ই নয়, ওই এলাকার মধ্যে অব্যবহৃত সম্পদ, তেলের মজুত, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিরল মৃত্তিকা এবং একচেটিয়া মাছ ধরার অধিকারও থাকবে ওই দেশের হাতেই।
জাপানের মোট আয়তন প্রায় ৩,৭৭,৯৭৪ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু ক্ষুদ্র ওই প্রস্তরখণ্ড ওকিনোটোরিশিমার উপর মালিকানা জাহির করার কারণে সমুদ্রে মোট ৪,৩২,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জাপানের হাতে থাকে, যা জাপানের মূল ভূখণ্ডের আকারের থেকেও বেশি।
কিন্তু যদি চ্যাপ্টা এই প্রস্তরটি সমুদ্রের তলায় বিলীন হয়ে যায়, তা হলে ওই সামুদ্রিক এলাকার উপরও অধিকার হারাবে জাপান। নিয়ম তেমনই।
ওকিনোটোরি দ্বীপের বেশির ভাগই জলের তলায়। জেগে রয়েছে শুধু ওকিনোটোরিশিমা। আর এই কারণেই ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’-এর সরকার পাথরটিকে কংক্রিটের ঘেরাটোপ, প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং স্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণ দলের সাহায্যে আগলে রাখার চেষ্টা করছে।
ওকিনোটোরিশিমাকে জলের উপর রাখতে ক্ষুদ্র দ্বীপটিকে দুর্গে পরিণত করেছে জাপান। কারণ, সামুদ্রিক সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য জাপানের লড়াই কোনও দেশের সঙ্গে নয়, বরং প্রকৃতির বিরুদ্ধে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেরুবৃত্তের বরফ গলছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে জলস্তর। ফলে ওই পাথর এবং দ্বীপটিও আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রে। আর সে কারণেই পাথরটিকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জাপান।
প্রথম থেকেই ওকিনোটোরিকে দ্বীপের স্বীকৃতি দেয় না চিন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ান। তাদের দাবি, রাষ্ট্রপুঞ্জের সমুদ্র আইন সংক্রান্ত কনভেনশনের অধীনে একটি দ্বীপ হওয়ার জন্য যে শর্ত পূরণ করতে হয়, তা ওকিনোটোরিতে নেই।
চলতি বছরের জুন মাসে সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম বার প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানের অর্থনৈতিক জলসীমার (ইইজেড) অন্দরে চিনা নৌবহরের তৎপরতা দেখা গিয়েছিল।
চিনা ‘পিপল্স লিবারেশন নেভি’র বিমানবাহী রণতরী শানদং এবং আরও চারটি যুদ্ধজাহাজ প্রশান্ত মহাসাগরের ওকিনোটোরি প্রবালদ্বীপের কাছে জাপানের অর্থনৈতিক জলসীমার মধ্যে প্রবেশ করে।
এর মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজও ছিল। চিনা বিমানবাহী রণতরী থেকে যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টারের ধারাবাহিক ওঠানামাও নজরে এসেছিল জাপানের সেনার। যদিও পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সব ছবি: সংগৃহীত।