সারা পৃথিবীতে সংখ্যাতত্ত্বের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংখ্যাতত্ত্ব অনুসারে জন্মতারিখ হল উপরওয়ালার আশীর্বাদ। জন্মতারিখের অর্থ হল জন্মদিন, মাস এবং বছর। জন্মতারিখের সংখ্যার সমাহার। জন্মতারিখ পাঠোদ্ধার করে নির্দিষ্ট মানুষের সম্বন্ধে অনেক গোপন তথ্য জানা বা বলা সম্ভব।
সংখ্যাতত্ত্ব মতে জন্মতারিখ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তত্ত্বে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যার গুরুত্ব সর্বাধিক। ১ থেকে ৯ পর্যন্ত প্রত্যেক সংখ্যা বিচার করে বলে দেওয়া সম্ভব জাতকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। কোন গুণের সমাহার নিয়ে তাঁরা জন্মেছেন তারও আভাস পাওয়া যায়।
জ্যোতিষশাস্ত্র এবং সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাস করা হয় যে একজন ব্যক্তির জন্মতারিখ আর্থিক স্থিতিশীলতা, কর্মজীবনের অভিমুখ ও অগ্রগতিকে প্রভাবিত করে। নির্দিষ্ট ব্যক্তি কতটা সম্পদশালী হয়ে উঠতে পারবেন জন্মতারিখ অনুযায়ী তাও জেনে নেওয়া সম্ভব। বিশেষ করে সংখ্যাতত্ত্বে, প্রতিটি জন্মতারিখ একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেই সংখ্যা বিচার করে আর্থিক বাধা অতিক্রম করে ধনসম্পদ অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিকারের সন্ধান দেওয়া সম্ভব বলে মনে করে জ্যোতিষশাস্ত্র।
কর্মফল হল ভাগ্য ও পরিশ্রমের মেলবন্ধন। তা সত্ত্বেও কিছু নিয়ম মেনে চললে জীবনে আর্থিক বাধার আঁধার কেটে সম্পদে পরিপূর্ণ হতে পারে ১ থেকে ৯ জন্মসংখ্যার জাতকদের। প্রতিবেদনে রইল তারই হদিস।
যাঁদের জন্মসংখ্যা ১ তাঁদের উপর রবির বা সূর্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এই দিনগুলিতে জন্মগ্রহণকারীরা জন্মগত ভাবে অত্যন্ত দৃঢ়চেতা হন। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা এঁদের সহজাত। যদিও অহঙ্কার, দ্বন্দ্ব এবং আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা জাতকদের জীবনে আর্থিক বাধা ডেকে আনে। আর্থিক উন্নতিতে ছেদ পড়ে সহজেই।
এই জন্মসংখ্যার অধিকারীদের দৃঢ়তার সঙ্গে নম্রতার ভারসাম্য বজায় রাখার পন্থা শিখতে হবে। প্রতি দিন সকালে গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করার সময় সূর্যকে জল দান করলে আর্থিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়াও চুনিরঙা পোশাক পরা উচিত। তামার পাত্র ব্যবহার করলে শুভ ফল পাওয়া যাবে। গুরুস্থানীয় ও পিতাকে সম্মান করলে জীবনে সাফল্যের মুখ দেখতে পাবেন জাতক-জাতিকারা।
২ জন্মসংখ্যার যাঁরা, তাঁরা চন্দ্রের দ্বারা প্রভাবিত হন। এঁরা সংবেদনশীল প্রকৃতির হন। নিজের চেষ্টায় জ্ঞান আহরণে সফল হয়ে থাকেন। ওই দিনগুলিতে জন্মানো ব্যক্তিরা সাধারণত আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। পরনির্ভরতার ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
আর্থিক উন্নতি করার জন্য জীবনে স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সঞ্চয়ে মনোযোগ দিলে উপকার হবে। আবেগতাড়িত হয়ে ব্যয় করা বন্ধ করা উচিত। আর্থিক সমস্যা দূরে করতে সোমবারে চাল বা দুধ দান করা এবং চন্দ্র মন্ত্র পাঠ করার নিদান রয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্রে। রুপোর জিনিসপত্র ব্যবহার করলে আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে।
৩ জন্মসংখ্যার ব্যক্তিদের উপর বৃহস্পতির আশীর্বাদ সর্বদা বজায় থাকে। এঁরা অত্যন্ত সৃজনশীল এবং বুদ্ধিমান। তবে সামান্য কারণেই তাদের মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে।
সম্পদ অর্জনের জন্য এঁদের শৃঙ্খলা এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার ভগবান বিষ্ণু বা গুরু বৃহস্পতির উপাসকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ন্যায়পূর্ণ আচরণ বজায় রাখলে ধনসম্পদ বৃদ্ধি হয়। নীতিচ্যুত হলে আর্থিক উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। হলুদ রঙের ডাল বা হলুদ দান করা এবং হলুদ পোশাক পরলে আর্থিক সৌভাগ্য ঝলমল করে উঠবে।
যাঁদের জন্মসংখ্যা ৪, তাঁদের ভাগ্যের উপর রাহু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই তারিখে জন্মানো ব্যক্তিরা কখনও কখনও অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক ওঠানামার সম্মুখীন হন। জীবনে অস্থিরতা ও উদ্বেগ অর্থের আগমনে ব্যাঘাত ঘটায়।
রাহুকে তুষ্ট করতে মন্ত্রপাঠ করতে হবে। শনিবারে তিলের তেলের প্রদীপ জ্বালালে আর্থিক সমৃদ্ধি হয়। কালো তিল দান করলে অর্থের সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সাফল্যের জন্য সকলের সঙ্গে খোলামেলা ব্যবহার করা উচিত।
৫ সংখ্যায় জন্মগ্রহণকারীদের উপর বুধ গ্রহের প্রভাব রয়েছে। এই সংখ্যার জাতকদের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ দক্ষতাও দুর্দান্ত হয়। দ্রুত চিন্তাশীল এবং নমনীয় স্বভাবের হন। ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতির প্রভূত যোগ থাকে। কিন্তু তাঁদের অধীরতা এবং অস্থিরতা ক্ষতির কারণ হয়।
কর্মে ও জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি। বুধবারে বুধের মন্ত্র জপ, সবুজ শাকসব্জি দান করলে বাধা কেটে যায়। আর্থিক হিসাব-নিকাশ পরিষ্কার রাখলে তবেই এই সংখ্যাগুলির জাতকেরা আর্থিক স্থিতিশীলতা লাভ করবেন। সবুজ রঙের পোশাক পরলে ভাগ্যের উন্নতি ঘটবে বলে মনে করেন জ্যোতিষীরা।
৬ জন্মসংখ্যার জাতকেরা শুক্র গ্রহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই জাতকেরা তাঁদের চেহারা, সৌন্দর্য এবং বিলাসিতার জন্য পরিচিত। এঁরা নিজেরাও চেহারা, সৌন্দর্য এবং বিলাসিতার প্রতি আকৃষ্ট হন। এই দিনগুলিতে জন্ম হয় যাঁদের তাঁরা প্রায়শই অমিতব্যয়ী হয়ে থাকেন। ফলে সঞ্চয়ের ভাঁড়ার শূন্য হয়ে যায়।
আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা একান্ত ভাবে মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। শুক্রবারে দেবী লক্ষ্মীর উদ্দেশে সাদা মিষ্টি দান করলে আশীর্বাদ লাভ করা যায়। অপ্রয়োজনীয় ভোগবিলাসকে ত্যাগ করলে ধনদেবী সুপ্রসন্ন হন। বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে ধনসম্পদকে আকৃষ্ট করা যায়।
৭ জন্মসংখ্যায় জন্মানো ব্যক্তিরা কেতুর দ্বারা শাসিত। জাতকেরা তাঁদের জ্ঞাত স্বভাব এবং আধ্যাত্মিক বোধ দিয়ে নিজের ও অপরের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারেন। কিন্তু তাঁদের উপার্জন ওঠানামা করে।
বাস্তবতা এবং আধ্যাত্মিকতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। আর্থিক অনিশ্চয়তা দূর করতে কেতু মন্ত্র জপ করলে বাধা দূর হবে। অবোলা প্রাণীদের খাওয়ানো এবং স্বেচ্ছাসেবকের কাজে অংশগ্রহণ করলে শুভ ফল আসবে জীবনে। ধ্যানের অভ্যাস করলে সংসারে সচ্ছলতা আসবে।
৮ জন্মসংখ্যার ব্যক্তিদের কাছে কঠোর পরিশ্রমই তাঁদের মূল মন্ত্র। এঁরা শনি গ্রহের দ্বারা প্রভাবিত। এই গ্রহ শৃঙ্খলা, কর্মের ফল দান করে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং সুশৃঙ্খল হলেও জাতক-জাতিকাদের সাফল্য সাধারণত দেরিতে আসে।
এঁদের সবচেয়ে বড় বন্ধু হল ধৈর্য। অভাবীদের সেবা করা, কালো পোশাক বা লোহা দান করলে ভাল ফল মেলে। শনিবারে শনিদেবের উপাসনা করলে তিনি তুষ্ট হয়ে ফল দান করেন। তবে উপার্জনের পথে নৈতিকতা হারালে হিতে বিপরীত হয়।
৯ জন্মসংখ্যায় জন্মানো ব্যক্তিরা কর্মের ক্ষেত্রে উদ্যমী হন। মঙ্গলের প্রভাব থাকে এই ক’টি সংখ্যার উপর। প্রচণ্ড নীতিবান হন জাতক-জাতিকারা। সত্য ও ন্যায়ের উপর নির্ভর করে আজীবন চলতে পছন্দ করেন এঁরা। তবে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় প্রায়শই।
বুদ্ধির সঙ্গে আত্মশক্তির ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। হনুমান চালিশা পাঠ ভাল ফল দেয়। লাল মুসুর ডাল দান করতে পারেন। রাস্তাঘাটে বা অন্য কোথাও হনুমান দেখলে তাকে কলা খাওয়ান। রাগ, অহঙ্কার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। অন্যথায় জটিল সমস্যা সৃষ্টি হবে। আত্মনিয়ন্ত্রণ করলে অর্থের স্থিতিশীলতা পাওয়া সম্ভব।
সব ছবি: সংগৃহীত।