Raise and Fall of BlackBerry

খাদের কিনারা থেকে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন! স্মার্টফোনের দুনিয়ায় মুছে গিয়ে কী ভাবে অন্য পিচে সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছে ব্ল্যাকবেরি?

স্মার্টফোনের দুনিয়ায় অ্যাপ্‌ল বা স্যামসাঙের দাপটে মুছে গিয়েছে ব্ল্যাকবেরি। কিন্তু তার পরও বিশেষ একটা প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে অন্য একটি ক্ষেত্রে একচেটিয়া ব্যবসা করছে কানাডার এই টেক জায়ান্ট।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:৫০
০১ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

ধূমকেতুর মতো উত্থান আর উল্কার মতো পতন! কানাডার টেক জায়ান্ট সংস্থা ব্ল্যাকবেরিকে নিয়ে এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। একসময় মোবাইল ফোনের বাজারের একটা বড় অংশ ছিল তাদের দখলে। কিন্তু সময়ের চাহিদা মেনে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারায় ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছে তারা। এখন কোথায় আছে ব্ল্যাকবেরি? আদৌ কি অস্তিত্ব রয়েছে এই সংস্থার? না কি ঘটে গিয়েছে অপমৃত্যু?

০২ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

ব্ল্যাকবেরির মোবাইল ফোন বাজার থেকে হারিয়ে গেলেও সংস্থাটির মৃত্যু হয়নি। বরং বিশেষ ধরনের একটি অপারেটিং সিস্টমকে আঁকড়ে ধরে স্বমহিমায় টিকে আছে তারা। শুধু তা-ই নয়, সেখানে মার্কিন টেক জায়ান্ট সংস্থা অ্যাপ্‌লকে ১০ গোল দিয়েছে কানাডার এই বহুজাতিক কোম্পানি। সম্পত্তির নিরিখেও যথেষ্ট এগিয়ে আছে ব্ল্যাকবেরি।

০৩ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

কানাডার বহুজাতিক সংস্থাটি যে অপারেটিং সিস্টেমটি তৈরি করে, তার পোশাকি নাম ‘কিউএনএক্স’। এটি মূলত ব্যবহার করা হয় গাড়িতে। চারচাকার ইনফোটেকমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, এড্যাশ সিস্টেম এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে এই অপারেটিং সিস্টেম। আর তাই বর্তমানে সেখানে একচেটিয়া রাজত্ব করছে ব্ল্যাকবেরি।

Advertisement
০৪ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

বর্তমানে ব্ল্যাকবেরির অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছে ভারতের শীর্ষ গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা টাটা ও মাহিন্দ্রা। বিদেশি কোম্পানিগুলির মধ্যে মার্সেডিজ়, অডি, বিএমডব্লিউ, ফোক্সভাগেন এবং ফোর্ডে দেখতে পাওয়া যায় এই অপারেটিং সিস্টেম। বিলাসবহুল গাড়ি তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির দুনিয়াজোড়া নামডাক রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার ফোর্ডকে বাদ দিলে বাকিগুলি জার্মান কোম্পানি।

০৫ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

এ ছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ইভিতে (ইলেকট্রিক ভেহিকল) ব্যবহার হচ্ছে ব্ল্যাকবেরির রিয়্যাল টাইম অপারেটিং সিস্টেম। ফলে দুনিয়ার সেরা ২৫টা ইভি-র মধ্যে ২৪টায় দেখা মিলবে ‘কিউএনএক্স’-এর। এর জন্য ২০১০ সালে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় কানাডার এই বহুজাতিক সংস্থা। সে বছর ‘কিউএনএক্স’কে অধিগ্রহণ করে তারা। এর পর ব্ল্যাকবেরিকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

Advertisement
০৬ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

কানাডার টেক জায়ান্টের এ-হেন একচেটিয়া ব্যবসায় থাবা বসাতে কেউ চেষ্টা করেনি, এমনটা নয়। একসময় ব্ল্যাকবেরির মতোই অপারেটিং সিস্টেম তৈরিতে মরিয়া হয়ে ওঠে অ্যাপ্‌ল। এর জন্য হাজার কোটি ডলারের একটি গবেষণামূলক প্রকল্প চালাচ্ছিল তারা। কিন্তু এতে সাফল্য না মেলায় শেষ পর্যন্ত তা বন্ধ করতে বাধ্য হয় অ্যাপ্‌ল।

০৭ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

জার্মান গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা ফোক্সভাগেনের গল্পটাও প্রায় একই রকম। নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে মার্কিন টেক জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাপ্‌লের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করেছিল তারা। প্রায় ১,২০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পর ফোক্সভাগেন বুঝতে পারে পুরোটাই পণ্ডশ্রম করছে তারা। এর পর অপারেটিং সিস্টেম বানানোর প্রকল্প বন্ধ করতে বিন্দুমাত্র দেরি করেনি ওই জার্মান গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি।

Advertisement
০৮ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

মজার বিষয় হল, ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ব্ল্যাকবেরি লিমিটেডকে গোটা দুনিয়া চিনত ‘রিসার্চ ইন মোশন’ নামে। ১৯৯৮ সালে নতুন প্রজন্মের পেজার এনে বাজারে সাড়া ফেলে দিয়েছিল তারা। এই সংস্থার তৈরি ডিভাইসে পাঠানো যেত ইমেলও। আর তাই অনেকে সেগুলিকে মোবাইল ফোনের জগতের ‘মিসিং লিঙ্ক’ বলে উল্লেখ করে থাকেন। মুঠোবন্দি ডিভাইসের ক্ষেত্রেও একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেখা গিয়েছে এই সংস্থাকে।

০৯ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

২০০১-’০৭ সালকে ব্ল্যাকবেরির মোবাইল ফোনের স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে। এই সময় কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মতো কি-বোর্ড যুক্ত মুঠোবন্দি ডিভাইস বাজারে এনে বাকিদের চমকে দেয় তারা। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে ব্ল্যাকবেরির ফোনের বিক্রি। তার মধ্যে জনপ্রিয়তম ছিল পার্ল সিরিজ়ের ফোন, যা গ্রাহকেরা খুবই পছন্দ করেছিল।

১০ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

২০০৮ সালের মাঝামাঝি সর্বকালীন উচ্চতায় ওঠে ব্ল্যাকবেরির শেয়ারের দাম। ওই সময় এর প্রতিটি স্টকের দর ১৪৭ ডলারে পৌঁছেছিল। এর ঠিক এক বছর আগে আইফোন বাজারে আনেন অ্যাপ্‌লের তৎকালীন কর্ণধার স্টিভ জোব্‌স। প্রথম টাচ স্ক্রিন মোবাইল ফোন হিসাবে ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছিল।

১১ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

আইফোন বাজারে এলেও প্রথম দিকে তাকে সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি ব্ল্যাকবেরি। স্মার্টফোনের বাজার নিয়ে সন্দিহান ছিল কানাডার টেক জায়ান্ট। তারা ভেবেছিল, কেবলমাত্র তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে আইফোন। ফলে কি-প্যাডের ফোন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি তারা। আর সেখানেই মস্ত বড় ভুল করে বসে এই সংস্থা। পরবর্তী সময়ে বিপুল লোকসান করে যার খেসারত দিতে হয়েছিল তাদের।

১২ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

২০০৯ সালের গোড়ার দিকে প্রথম বার টাচস্ক্রিনের মোবাইল ফোন বাজারে আনে ব্ল্যাকবেরি। তবে পুরোপুরি ভাবে স্মার্টফোন ছিল না সেই ডিভাইস। এর এক বছরের মধ্যেই (পড়ুন ২০১০ সাল) যুক্তরাষ্ট্রের ফোন-বাজারের ৪৩ শতাংশ দখল করে ফেলে এই সংস্থা। ওই সময় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ১০ লক্ষ।

১৩ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

কিন্তু এর পরই দুনিয়া জুড়ে হু-হু করে বাড়তে থাকে অ্যাপ্‌লের আইওস এবং গুগ্‌লের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের চাহিদা। ফলে ২০১২ সাল নাগাদ আমেরিকার বাজারে নিম্নমুখী হয় ব্ল্যাকবেরি ফোনের চাহিদা। এক সময় বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৭.৭ কোটি। সেই উচ্চতায় আর কখনওই উঠতে পারেনি কানাডার টেক জায়ান্ট।

১৪ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

মার্কিন বাজারে চাহিদা কমায় ২০১১ সালে হঠাৎ করে ৮০ শতাংশ পড়ে যায় ব্ল্যাকবেরির শেয়ারের দাম। ২০১৪ সালে ফের এর সূচক নামে ৩০ শতাংশ। ওই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (পড়ুন জানুয়ারি থেকে মার্চ) সংশ্লিষ্ট টেক জায়ান্টের লোকসানের অঙ্ক দাঁড়ায় ৮ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার। ফলে ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের দুনিয়ায় নিজের জায়গা হারাতে থাকে সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

১৫ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

স্মার্টফোনের বাজারে সে ভাবে পা জমাতে না পেরে ২০১১ সালে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ব্ল্যাকবেরির পরিচালন বোর্ড। ওই বছরের পর আর কোনও নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনেনি কানাডার টেক জায়ান্ট। বদলে ‘কিউএনএক্স’ অপারেটিং সিস্টেমকে উন্নত করার দিকে নজর দেয় তারা। মাঝে এই প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে একটি প্লেবুক ট্যাবলেট তৈরি করেছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থা। সেখানেও অবশ্য সাফল্যের মুখ দেখতে পায়নি তারা।

১৬ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায় ব্ল্যাকবেরি। ওই সময় ফের ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এর শেয়ারের দাম। ফলে অ্যাপ্‌লকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে ফের এক বার টেক জায়ান্টটি স্মার্টফোনের দুনিয়ায় ফিরে আসবে বলে মনে করা হয়েছিল। বাস্তবে কিন্তু সেই রাস্তায় একেবারেই হাঁটেনি তারা। অস্থিরতাকে কেন্দ্র করেই ধীরে ধীরে গাড়ি নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়ার দিকে মন দেয় কানাডার টেক জায়ান্ট।

১৭ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাকবেরিকে দক্ষিণ কোরীয় স্মার্টফোন নির্মাণকারী সংস্থা স্যামসাং কিনে নিতে চলেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু, তার পরেও কানাডিয়ান টেক জায়ান্টের শেয়ারের দাম বাড়েনি। উল্টে স্যামসাঙের শেয়ারের সূচক একলাফে বেড়ে যায় ৩০ শতাংশ। গত বছর (পড়ুন ২০২৪ সাল) স্মার্টফোনের উৎপাদন বন্ধ করার বিষয়টি পাকাপাকি ভাবে জানিয়ে দেয় ব্ল্যাকবেরি।

১৮ ১৮
BlackBerry comes back with new operating system; know constant success and failure of Canadian tech giant

টেক দুনিয়ায় নিজের অবস্থান পাকা করতে বর্তমানে কেবলমাত্র ‘কিউএনএক্স’ অপারেটিং সিস্টেমের উপরে নির্ভরশীল নয় ব্ল্যাকবেরি। ২০২০ সাল থেকে সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক প্রযুক্তি তৈরি করে আসছে তারা। গত পাঁচ বছরে সেখানেও যথেষ্ট ভাল ব্যবসা করছে কানাডার এই বহুজাতিক টেক জায়ান্ট।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি