The Secret Behind the Titanic Search

আমেরিকা খুঁজছিল ‘গোপন’ কিছু, মেলে অভিশপ্ত জাহাজের ধ্বংসাবশেষ! রোমাঞ্চে ভরপুর টাইটানিক খোঁজার নেপথ্যের কাহিনিও

১৯৮৫ সালে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। যদিও এই অভিযান ঘিরে অনেক জল্পনা রয়েছে। অনেকেই বলেন, টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খোঁজাটা মূল উদ্দেশ্য ছিল না মার্কিন নৌবাহিনীর। আসলে এই অভিযানের নেপথ্যে ‘ঠান্ডা লড়াই’য়ে হারিয়ে যাওয়া ডুবোজাহাজ খুঁজে বার করাই ছিল মূল কারণ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:২৩
০১ ২০
Titanic

সমুদ্রবিজ্ঞানী রবার্ট বব ব্যালার্ডের নেতৃত্বে ১৯৮৫ সালে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে একটি অভিযান চলছিল। সে অভিযান থেকেই প্রথম টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও এই অভিযানকে ঘিরে অনেক জল্পনা রয়েছে। অনেকের ধারণা, মার্কিন নৌবাহিনী আসলে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে আগ্রহী ছিলই না। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, হারিয়ে যাওয়া দু’টি মার্কিন পারমাণবিক ডুবোজাহাজ খুঁজে বার করার। সম্পূর্ণ অভিযান গোপন রাখতে চেয়েছিল মার্কিন নৌসেনা। তাই সামনে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান রাখলেও আড়ালে অন্য উদ্দেশ্য ছিল বলেই বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন।

০২ ২০
Titanic

১৯৪৭ সাল থেকে আমেরিকা এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ চলেছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে শেষ হয় এই ‘যুদ্ধ’। সে সময় আমেরিকা বেশ কিছু পারমাণবিক অস্ত্র এবং ডুবোজাহাজ তৈরি করেছিল। তার মধ্যে দু’টি ডুবোজাহাজ ছিল ইউএসএস থ্রেসার এবং ইউএসএস স্করপিয়ন। কিন্তু দু’টি ডুবোজাহাজই সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছিল।

০৩ ২০
Titanic

১৯৬৩ সালে প্রথমে ইউএসএস থ্রেসার ডুবোজাহাজটি ডুবে যায়। তাতে প্রায় ১২৯ জন নৌসেনার মৃত্যু হয়েছিল। এর কয়েক বছর পর ১৯৬৮ সালে ইউএসএস স্করপিয়ন নামের ডুবোজাহাজটিও ডুবে যায়। ওই ডুবোজাহাজে ছিলেন শ’খানেক নৌসেনা। তথ্য অনুযায়ী, তাঁরা প্রত্যেকেই মারা গিয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়।

Advertisement
০৪ ২০
Titanic

মার্কিন নৌসেনার তরফে তখন সরকারি ভাবে জানানো হয়েছিল, ডুবোজাহাজ দু’টি প্রযুক্তিগত ত্রুটি ও দুর্ঘটনার কারণে ডুবে গিয়েছে। এমন কথা বললেও, আমেরিকার সন্দেহ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর। মার্কিন নৌসেনা ভেবেছিল, এই ডুবোজাহাজ ডুবে যাওয়ার নেপথ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত রয়েছে। তাই ডুবোজাহাজ ডুবে যাওয়ার আসল কারণ খুঁজতে তৎপর হয়ে ওঠে নৌসেনা।

০৫ ২০
Titanic

অন্য দিকে, ১৯১২ সালে প্রায় ২,২৪০ জন যাত্রীকে নিয়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিক জাহাজটি ডুবে যায়। বহু বছর পরে এই জাহাজকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রও হয়েছে। তারও আগে মার্কিন নৌসেনা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বার করে। সেই অভিযান থেকে সংগ্রহ করা তথ্য এবং ছবি ব্যবহার হয়েছিল ওই চলচ্চিত্রে।

Advertisement
০৬ ২০
Titanic

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে বরাবরই আগ্রহী ছিলেন সমুদ্রবিজ্ঞানী ব্যালার্ড। তিনি একাই টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বার করার অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর কাছে অভিযান চালানোর মতো উপযুক্ত টাকা বা প্রযুক্তি, কোনওটাই ছিল না। তাই তিনি শত চেষ্টা করেও শেষমেশ সফল হতে পারছিলেন না। অবশেষে ব্যালার্ড মার্কিন নৌবাহিনীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। নৌবাহিনী ব্যালার্ডের এই ইচ্ছাকেই কাজে লাগায়। তাঁরা ব্যালার্ডকে সম্মতি দিলেও বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে।

০৭ ২০
Titanic

প্রথম শর্তটি ছিল, টাইটানিক খোঁজার আসল উদ্দেশ্য হবে হারিয়ে যাওয়া দু’টি মার্কিন পারমাণবিক ডুবোজাহাজ খুঁজে বার করা। প্রথমে ব্যালার্ডকে ডুবোজাহাজ দু’টি কী অবস্থায় রয়েছে তা খুঁজে বার করতে হবে, তার সমস্ত তথ্য নৌসেনার হাতে তুলে দিতে হবে। সেটি করতে পারলে তবেই ব্যালার্ডের সমস্ত দাবি মানা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement
০৮ ২০
Titanic

এ ছাড়া আরও কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছিল ব্যালার্ডের উপর। অভিযান চলাকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন যেন কোনও ভাবে সন্দেহ করতে না পারে, সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছিল ব্যালার্ডকে। পাশাপাশি, ডুবোজাহাজ এবং টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খোঁজার কথা মার্কিন নৌবাহিনীর পরামর্শ ছাড়া আর কাউকে বলা যাবে না, এ কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

০৯ ২০
Titanic

ব্যালার্ড নৌসেনার দেওয়া সমস্ত শর্ত মেনে নেন। ১৯৮৫ সালে শুরু হয় ‘নর’ জাহাজের যাত্রা। এর ক্যাপ্টেন ছিলেন অ্যালান রবার্টস, যিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে কাজ করতেন। সমুদ্রবিজ্ঞানী ব্যালার্ড এই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও আরও গবেষক এবং প্রযুক্তিবিদ-সহ শুরু হয় অভিযান।

১০ ২০
Titanic

‘নর’ একটি গবেষণাকেন্দ্রিক জাহাজ ছিল। এর সাহায্যে প্রথমে মার্কিন পারমাণবিক ডুবোজাহাজ খুঁজে বার করা হয়। পরে এই একই জাহাজ টাইটানিকেরও খোঁজ দেয়।

১১ ২০
Titanic

সমুদ্রের নীচে বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করতে এবং রেকর্ড করতে বিশেষ ক্যামেরা ব্যবহার করেছিলেন তাঁরা। ব্যালার্ড তাঁর নিজের তৈরি ক্যামেরার (আর্গো) সাহায্যে সব ছবি তুলেছিলেন। আর্গো এমন এক ধরনের ক্যামেরা, যা দিয়ে সমুদ্রের নীচের সমস্ত ছবি সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যান করে দেখা যায়।

১২ ২০
Titanic

অভিযান শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই দু’টি ডুবোজাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। আর্গোর সাহায্যে তাঁরা ডুবোজাহাজের তথ্য সংগ্রহ করেন। ডুবোজাহাজগুলি থেকে পাওয়া ভাঙা অংশ, যন্ত্রপাতি ও চারপাশের ধ্বংসস্তূপ পরীক্ষা করে দেখে ব্যালার্ডের দল। জানা যায়, ডুবোজাহাজ দু’টি সত্যিই প্রযুক্তিগত ত্রুটি ও দুর্ঘটনার কারণে ডুবে গিয়েছিল। এর পরই শুরু হয় টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খোঁজার অভিযান।

১৩ ২০
Titanic

দিনটা ছিল ১ সেপ্টেম্বর। টাইটানিকের সন্ধানে মরিয়া হয়ে গবেষকেরা জাহাজের কমান্ড সেন্টারে আর্গোর সাহায্যে চারিদিকের ছবি তুলছিলেন। ব্যালার্ড তখন পাশের কেবিনে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

১৪ ২০
Titanic

হঠাৎই গবেষকেরা খেয়াল করেন সাদা-কালো রঙের একটি ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। প্রথমে অনুমান করা হয়েছিল সেটি হয়তো জাহাজের কোনও বয়লার। জাহাজের রাঁধুনি এসে খবর দেন ব্যালার্ডকে।

১৫ ২০
Titanic

ব্যালার্ড রাঁধুনির সম্পূর্ণ কথা শোনার আগেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি ছুটে আসেন কমান্ড সেন্টারে। ক্যামেরায় ছবি দেখে ব্যালার্ড জানান, সেটি একটি সিলিন্ডার, এবং সেটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষেরই অংশ।

১৬ ২০
Titanic

একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছিল ব্যালার্ড কী ভাবে শনাক্ত করেছিলেন সেটি টাইটানিকেরই ধ্বংসাবশেষ। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যালার্ড বলেছিলেন, “আমি ভিতরে ঢোকার (জাহাজের কমান্ড সেন্টারে) সঙ্গে সঙ্গেই দেখি দেওয়ালে বয়লারের ছবি ঝুলছে। আমি তাকালাম এবং বুঝতে পারলাম এটা নিশ্চিত ভাবেই টাইটানিকের অংশ। আর তখনই হুলস্থুল পড়ে গিয়েছিল।”

১৭ ২০
Titanic

সিলিন্ডারের খোঁজ পাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই জাহাজের আরও ধ্বংসাবশেষের অংশ দেখতে পান ব্যালার্ড। ক্যামেরায় খেয়াল করেন চারিদিকে জাহাজের ডেক, কেবিন, আসবাব, থালা-বাসন-সহ বিভিন্ন ধাতব অংশ ছড়িয়ে রয়েছে।

১৮ ২০
Titanic

এই সব দেখে জাহাজে তখন উৎসবের মেজাজ। সকলেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মার্কিন নৌবাহিনীর শর্ত অনুযায়ী তাঁরা সম্পূর্ণ বিষয়টিকে গোপন রেখেছিলেন।

১৯ ২০
Titanic

ব্যালার্ডের দল সিদ্ধান্ত নেয়, ধ্বংসাবশেষের কোনও ক্ষতি করবেন না। শুধুমাত্র গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাহাজের মধ্যে থেকেই ক্যামেরার মাধ্যমে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা।

২০ ২০
Titanic

তথ্য সংগ্রহ শেষে তাঁরা ফিরে আসেন এবং সব নথি ও ফুটেজ মার্কিন নৌবাহিনীর কাছে জমা দেন। পরবর্তী কালে সেই তথ্যই নৌবাহিনী জনসমক্ষে প্রকাশ করে। অর্থাৎ এই একই অভিযানের মধ্যে দিয়ে মার্কিন নৌসেনা যেমন ডুবোজাহাজের খোঁজও পেয়েছিল, তেমন ব্যালার্ডও তাঁর ইচ্ছাপূরণ করতে পেরেছিলেন।

সব ছবি: সংগৃহীত ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি