দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই পুরুষালি চেহারা। বলিউডের ‘গ্রিক গড’ বলা হয় তাঁকে। ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন হৃতিক রোশন। প্রথম ছবিতেই মারকাটারি সাফল্য। বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিয়েছিল হৃতিকের প্রথম ছবি।
২০০০ সালের জানুয়ারিতে ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ মুক্তির পরে পরেই বলিউডের প্রতিষ্ঠিত তারকাদের নাড়িয়ে দিয়েছিলেন বছর পঁচিশের নবাগত যুবা হৃত্বিক। একই বছরে তিনটি ছবি মুক্তি পায় তাঁর, ‘কহো না প্যার হ্যায়’, ‘ফিজ়া’ এবং ‘মিশন কাশ্মীর’। তিনটি ছবিই সুপারহিট।
রাতারাতি কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর যুবতীদের রাতের ঘুম কেড়ে নেন হৃতিক। কিন্তু অনেকেরই জানা নেই যে, কেরিয়ারের শুরুতে এই ‘গ্রিক গড’কেই শুটিংয়ের জায়গা থেকে লাঠি নিয়ে দু’বার তাড়া করেছিল পুলিশ। এমনকি, তাঁর নায়ক হওয়া নিয়ে কটাক্ষও করেছিলেন পুলিশকর্মীরা।
১৯৯৯ সাল। ‘মিশন কাশ্মীর’ পরিচালনার কাজে হাত দিয়েছেন প্রযোজক-পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া। বিধুর জীবনের অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প। আর সেই ছবির শুটিংয়ের সময়েই ওই অভিজ্ঞতা হয় হৃতিকের।
হৃতিক এবং সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ‘মিশন কাশ্মীর’ মুক্তি পায় ২০০০ সালে। তবে অনেকেই জানতেন না যে, ‘কহো না প্যার হ্যায়’ মুক্তির আগেই ‘মিশন কাশ্মীর’-এর শুটিং করেছিলেন হৃতিক।
তবে ছবির জন্য হৃত্বিক এবং সঞ্জয়ের বদলে বিনোদের প্রথম পছন্দ ছিলেন শাহরুখ খান এবং অমিতাভ বচ্চন। কিন্তু ছবিটি করার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক চেয়েছিলেন শাহরুখ, যা বিনোদের বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।
অন্য দিকে, অমিতাভ প্রথমে কিছুটা আগ্রহ দেখালেও যশ চোপড়ার ‘মহব্বতেঁ’র জন্য ‘মিশন কাশ্মীর’ ছেড়ে বেরিয়ে যান।
এর পরেই হৃত্বিক এবং সঞ্জয়কে নিয়ে ছবির কাজে হাত দেন বিধু। তবে অভিনেতাদের পরিবর্তনের কারণে ছবিটির বাজারমূল্য কমে যায়। কারণ, হৃত্বিক তখন ছিলেন নবাগত এবং সঞ্জয়ও ধীরে ধীরে তারকা তকমা হারাচ্ছিলেন। যদিও দু’জনের উপরেই অগাধ আস্থা ছিল বিধুর।
‘মিশন কাশ্মীর’-এর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিকের চুক্তিটি বেশ সুনির্দিষ্ট ছিল। ঠিক হয়, ছবিটি যদি মোটামুটি ব্যবসা করে, তবেই ২৫ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক পাবেন সঞ্জয়। ছবি ফ্লপ করলে এক পয়সাও পাবেন না। আর যদি হিট করে, তা হলে ২৫ লক্ষ তো পাবেনই, আরও ২৫ লক্ষ টাকা উপহার দেওয়া হবে তাঁকে।
হৃতিকের ক্ষেত্রে চুক্তি ছিল অন্য। তাঁকে বলা হয়েছিল, ছবি মোটামুটি ব্যবসা করলে ১১ লক্ষ পাবেন তিনি। ফ্লপ করলে পাবেন ১ লক্ষ। আর হিট করলে ১১ লক্ষের সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ লক্ষ দেওয়া হবে।
‘মিশন কাশ্মীর’ই ছিল বিধুর শেষ ভরসা। কারণ ববি দেওল এবং নবাগত নেহা অভিনীত তাঁর ছবি ‘করিব’ ফ্লপ করার কারণে প্রায় এক কোটি টাকা দেনায় ডুবে ছিলেন তিনি। ‘মিশন কাশ্মীর’ ফ্লপ করলে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি হয়ে যেত।
যদিও টাকার জন্য কাজের সঙ্গে আপস করতে রাজি ছিলেন না বিধু। ‘মিশন কাশ্মীর’-এর প্রতিটি গান শুট করতে প্রায় এক কোটি করে টাকা খরচ করেছিলেন তিনি। কাশ্মীরে গিয়ে শুটিং করার জন্য ক্রু সদস্যদের বিমার জন্যও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছিল তাঁকে।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বিধু জানিয়েছেন, তিনি ছাড়া সিনেমার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই হৃত্বিককে ছবিতে নেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে একপ্রকার ঝামেলা করেই হৃত্বিককে নেন তিনি।
এর মধ্যেই শুটিংয়ের সময় অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে। কাশ্মীরে শুটিং চলার সময় পুলিশ দু’বার হৃতিককে সেট থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
কারণ, পুলিশের মনে হয়েছিল হৃত্বিককে নাকি নায়কের মতো দেখতে ছিল না। পরে বিধু এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। ওই পুলিশকর্মীরা নাকি কটাক্ষও করেছিলেন হৃত্বিককে নিয়ে। পুলিশের এক আধিকারিক অবজ্ঞার সুরে বিধুকে এ-ও নাকি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘এটা আপনাদের হিরো?’’
যাই হোক, ‘কহো না প্যার হ্যায়’ মুক্তির পর পরিস্থিতি বদলে যায়। রাতারাতি তারকায় পরিণত হন হৃত্বিক। তাঁর সঙ্গে তুলনা শুরু হয় শাহরুখের।
সঙ্গে সঙ্গে হৃত্বিকের তারকামূল্য বৃদ্ধি পায়। তাঁর হাত ধরে ‘মিশন কাশ্মীর’-এর বৈতরণীও পার হয়। প্রচুর টাকা আয় করে বিধুর ছবি। হৃত্বিককে দেখতে সিনেমাহলে তরুণ-তরুণীদের ঢল নামে।
একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, হৃত্বিকের জন্য ছবিটির টিকিট দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চড়া দামে বিক্রি হয়েছিল। যদিও বিধু একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, হৃত্বিকের জন্য সিনেমার টিকিট বিক্রি বেড়েছিল ঠিকই, তবে গল্পের জোরে এমনিতেও হিট করত সেই সিনেমা।
সব ছবি: সংগৃহীত।