ভারত-পাক সংঘাতের মাঝে নিঃশব্দে বিয়ে সেরে ফেলেছিলেন খ্যাতনামী ইউটিউবার তথা শিক্ষক খান স্যর। একটি ভিডিয়োবার্তায় নিজের বিয়ের খবর নিজেই প্রকাশ করেছিলেন তিনি। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার খবর দেওয়ার পর তিনি জানিয়েছিলেন, নববধূর সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য পটনায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
কাকপক্ষীতেও জানতে পারেনি খান স্যরের নতুন জীবনে প্রবেশের খবর। তাই খান স্যরের নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে কৌতূহলের অন্ত ছিল না তাঁর ছাত্র-ছাত্রী ও সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে। কাকে বিয়ে করলেন খান স্যর? পাত্রীর নাম, পরিচয় জানার জন্য উৎসুক সকলেই।
গত ২ জুন বিহারের রাজধানীর বুকে ৫০০ অতিথির উপস্থিতিতে জমকালো এক অনুষ্ঠানে স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন খান স্যর। রাজনীতি, সিনেমা, শিক্ষা এবং প্রশাসনিক বিভাগের একাধিক তারকা উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। বিয়ের পর এই প্রথম খান স্যর ও তাঁর স্ত্রী একসঙ্গে জনসমক্ষে উপস্থিত হয়েছিলেন সেই অনুষ্ঠানে।
খান স্যরের রিসেপশনে উপস্থিত হয়েছিলেন বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এঁদের মধ্যে ছিলেন বিহারের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান, উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধরি, বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব, শিক্ষামন্ত্রী সুনীল কুমার, সুমিত কুমার, নীতীশ মিশ্র-সহ আরও বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
নববধূর পরনে ছিল জরি ও চুমকির কাজ করার টকটকে লাল রঙের ঝলমলে লেহঙ্গা। সঙ্গে ছিল একটি সবুজ রঙের ওড়না। আরও একটি লাল ওড়না দিয়ে তাঁর মুখ ঢেকে রাখা ছিল। সঙ্গে ছিল মানানসই সোনার অলঙ্কার, নাকে বিশাল সাবেকি নথ, হাতভর্তি চুড়ি। মুখের অর্ধেক অংশে ঘোমটা দিয়ে ঢাকা।
অন্য দিকে খান স্যর পরেছিলেন গাঢ় বাদামি রঙের সুট। সঙ্গে গোলাপি রঙের জামা আর লাল রঙের টাই। স্বামীর হাত ধরে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছে খান স্যরের স্ত্রীকে। অতিথিরা গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিয়ে বরণ করেছেন নবদম্পতিকে। তাঁর সলজ্জ হাসি ঘোমটার আড়ালেও সকলের চোখে পড়েছে, যা নেটিজেনদের মন জয় করে নিয়েছে।
দাম্পত্যসঙ্গীর পরিচয় জানানোর বিষয়ে কিছুটা অনুৎসাহী এই শিক্ষক। বিয়ে নিয়ে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ্যে আনতে চাননি খান স্যর। সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, খান স্যরের স্ত্রীর নাম এ এস খান। তিনি বিহারের সিওয়ানের বাসিন্দা এবং তাঁর স্বামীর মতোই উচ্চশিক্ষিত। আইএসসি বোর্ডের নামী স্কুল থেকে পড়াশোন শেষ করেছেন। তবে তাঁর সঠিক শিক্ষাগত যোগ্যতা কী তা জানা যায়নি।
শোনা গিয়েছে খান স্যরের মায়ের পছন্দ করা পাত্রীর সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন জনপ্রিয় শিক্ষক। পাত্রী খান স্যরের দূরসম্পর্কের আত্মীয়া বলে কানাঘুষোয় শোনা গিয়েছে। শান্ত এবং বিনয়ী এই তরুণী পরিবারের সকলেরই প্রিয় পাত্রী, বিশেষ করে খান স্যরের মা তাঁকে খুব স্নেহ করেন।
বিয়ে কী ভাবে সম্পন্ন হল তা জানাতে গিয়ে খান স্যর বলেন, ‘‘প্রথমে আমি বিয়ে স্থগিত রেখে সীমান্তে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা সৈন্যদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা-মায়ের পরিকল্পনায় সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তাঁদের হতাশ করতে চাইনি আমি।’’ মূলত ভাইদের পরামর্শেই তাঁর বাবা-মা তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন বলে জানিয়েছেন খান স্যর।
খান স্যরের সেই রিসেপশনের একটি ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। সেখানে বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছে খান স্যরকে। ভাইরাল সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে চুপিচুপি বিয়ে করার ঘটনা নিয়ে মজার টিপ্পনী কাটেন লালু-পুত্র।
খান স্যরও তার জবাব দেন। খান স্যরকে তাঁর বিয়ের তারিখ জিজ্ঞাসা করেন তেজস্বী। তার পরেই উত্তর ধেয়ে আসে তাঁর দিকে। খান স্যর বলে ওঠেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের উত্তেজনার সময় বিয়ে সেরে ফেলেছি। আমি আপনার মডেলটি ঠিক অনুসরণ করেছিলাম, স্যর।’’ তেজস্বী এবং মঞ্চে উপস্থিত সকলের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়। আরজেডি নেতা হাসতে হাসতে জবাব দেন, বিয়ে যে ভাবেই হোক না কেন, অভ্যর্থনা সঠিক ভাবে হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলাকালীনই তিনি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান করে বিয়ে সেরে ফেলেছেন। কারণ বিয়ের তারিখ পূর্বনির্ধারিত ছিল। ঘটনাচক্রে সেই মুহূর্তে দেশের উপর হামলা হয়। দেশের উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে অনাড়ম্বর ভাবে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন খান স্যর। তিনি পরিবারকে জানান, একটি শর্তেই বিয়েতে রাজি হবেন। বিয়ের দিন কাউকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না।
ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন খান স্যর। তাঁর বাবা এক জন সেনাকর্তা ছিলেন। মা গৃহিণী। তাঁর এক দাদা ছিলেন সেনার কমান্ডো। জানা গিয়েছে, শৈশব থেকেই পড়াশোনায় ভাল খান স্যর। এনডিএ পরীক্ষায় পাশ করেছেন। কিন্তু নির্বাচিত হননি।
সব ছবি: সংগৃহীত।