Moon Asteroid Collision

ঠিক সাত বছর পর চাঁদের সঙ্গে প্রকাণ্ড গ্রহাণুর সংঘর্ষের আশঙ্কা! হিরোসিমার ৪০০ গুণ বিস্ফোরণ, টের পাবে পৃথিবীও

পৃথিবী ও চাঁদের দিকে ধাবমান গ্রহাণুটির কথা প্রথম বার জানা গিয়েছিল ২০২৪ সালে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, গ্রহাণুটি সরাসরি পৃথিবীকে এসে ধাক্কা মারবে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কমেছে। বেড়েছে চাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:০১
Moon Asteroid Collision

চাঁদের সঙ্গে প্রকাণ্ড গ্রহাণু সংঘর্ষের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

প্রকাণ্ড এক গ্রহাণুর সঙ্গে ঠিক সাত বছর পর ধাক্কা খেতে চলেছে আমাদের চাঁদ। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের পরিণতি কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সংঘর্ষে তীব্র এক বিস্ফোরণের সম্ভাবনা প্রবল। সেই বিস্ফোরণের ঝলকানি পৃথিবী থেকেও দেখা যাবে। মহাকাশের দিকে তাক করে রাখা একাধিক টেলিস্কোপের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। দিন যত এগোচ্ছে, গ্রহাণুর গতিবিধিতে নজরদারি এবং জল্পনা তত বাড়ছে।

Advertisement

পৃথিবী ও চাঁদের দিকে ধাবমান গ্রহাণুটির কথা প্রথম বার জানা গিয়েছিল ২০২৪ সালে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘২০২৪- ওয়াইআর৪’। তবে প্রথমে মনে করা হয়েছিল, গ্রহাণুটি সরাসরি পৃথিবীতে এসেই ধাক্কা মারবে। তার সম্ভাবনা ছিল প্রায় ৩.১ শতাংশ। তবে ক্রমে সেই সম্ভাবনা কমেছে এবং চাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনা বেড়েছে। এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের যা বিশ্লেষণ, তাতে ২০৩২ সালে ওই গ্রহাণুর সঙ্গে চাঁদের ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা ৪ শতাংশ। কেউ কেউ বলছেন, সংঘর্ষ হলে সেই বিস্ফোরণের ফলে ছোট ছোট অনেক উল্কাপিণ্ড তৈরি হবে এবং তা পৃথিবীর দিকে ছিটকে আসবে। তাতে পৃথিবীর বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহের ক্ষতি হতে পারে। তবে উল্কাপিণ্ড ছিটকে আসার সম্ভাবনা আপাতত এক শতাংশ। নাসার ইঞ্জিনিয়ার ব্রেন্ট বার্বির কথায়, ‘‘পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী বিভিন্ন বস্তুর ক্ষতি করতে পারে ওয়াইআর৪। তার জন্য আমাদের এখন থেকেই সতর্ক হওয়া দরকার।’’

ওয়াইআর৪ ঠিক কতটা বড় বা তার ভর কত, এখনও সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে গবেষণা বলছে, ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হলে ২০৩২ সালের ২২ ডিসেম্বরই চাঁদের সঙ্গে গ্রহাণুটি ধাক্কা খেতে পারে। অনুমান, ওয়াইআর৪ অন্তত ৬০ মিটার চওড়া। যদি চাঁদের সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে, তবে বিস্ফোরণ হতে পারে জাপানের হিরোশিমায় পরমাণু বিস্ফোরণের চেয়ে ৪০০ গুণ বেশি তীব্র। ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন টিএনটি বিস্ফোরণের সমান শক্তি এই বিস্ফোরণ থেকে নির্গত হতে পারে।

যদি ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যায়, চাঁদের কোন অংশে গ্রহাণুর ধাক্কা লাগবে? তা-ও গণনা করে দেখার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদের যে অংশ পৃথিবীর দিকে মুখ করে রয়েছে, সে দিকে সংঘর্ষের সম্ভাবনা প্রায় ৮৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে পৃথিবী থেকে বিস্ফোরণের একটি ঝলকানি চাক্ষুষ করা যাবে। যদিও তা স্থানীয় আকাশের মেঘাচ্ছন্নতা ও অন্য কয়েকটি তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। তবে পৃথিবী থেকে চাঁদের বুকের সেই ঝলকানি দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, জানিয়েছেন মার্কিন মহাকাশবিজ্ঞানী প্যাট্রিক কিং। বিস্ফোরণের ঝলকানি কতটা উজ্জ্বল দেখাবে, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন প্যাট্রিক।

এখনও পর্যন্ত যা হিসাব, তাতে আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাঁদে বিস্ফোরণের অভূতপূর্ব এই ঝলকানি দেখা যেতে পারে। হাওয়াই এবং সংলগ্ন দ্বীপপুঞ্জ, আমেরিকার পশ্চিম প্রান্তের বাসিন্দারা সেই সুযোগ পাবেন। তবে সবটাই এখনও অনুমানের পর্যায়ে। চাঁদে ধাক্কা খাওয়ার অনেক আগেই পৃথিবী থেকে বিজ্ঞানীরা তা ধ্বংস করে দিতে পারেন। সেই ভাবনচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে।

সঠিক আকার ও ভর জানা গেলে গ্রহাণুটিকে পথেই ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই নাসার জেম্‌স ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ গ্রহাণুটিকে এক বার পর্যবেক্ষণ করবে। তখন আরও কিছু তথ্য পাওয়ার কথা। আপাতত তার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।

কী ভাবে মহাকাশেই গ্রহাণু ধ্বংস করা সম্ভব? বার্বি মনে করেন, গ্রহাণুটিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য পৃথিবী থেকে শক্তিশালী কোনও বস্তুকে পাঠানো যেতে পারে। মহাকাশে পরমাণু বিস্ফোরণের মাধ্যমেও গ্রহাণু ধ্বংস সম্ভব। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন নিখুঁত গণনা। বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদে সংঘর্ষের অন্তত তিন মাস আগে গ্রহাণুটিকে ধ্বংস করতে হবে। তবেই সেই ধ্বংসাবশেষের কোনও আঁচ পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছোবে না। এই গণনায় সামান্য ভুলচুক হলেও পৃথিবীর বিপদের সমূহ সম্ভাবনা। এই সংক্রান্ত গবেষণার জন্য আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মহাকাশে বিশেষ অভিযান পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুত তার কাজ শুরু করা দরকার, মনে করেন মার্কিন গবেষকেরা।

Advertisement
আরও পড়ুন