Earth

পৃথিবীর এক গোলার্ধ অন্যটির তুলনায় দ্রুত শীতল হচ্ছে! ৪০ কোটি বছরের তথ্য ঘেঁটে কারণও জানলেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর অভ্যন্তর তাপ বিকিরণ করে শীতল হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে আরও বহু বছর।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৫
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর এক দিকের তুলনায় অন্য দিক দ্রুত শীতল হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর এক দিকের তুলনায় অন্য দিক দ্রুত শীতল হচ্ছে। গ্রাফিক: এআই সহায়তায় প্রণীত।

পৃথিবীর অভ্যন্তরের এক দিক দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হচ্ছে। অন্য দিকে সেই প্রক্রিয়া চলছে অনেক ধীরে। সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনটাই জানতে পেরেছেন অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। কেন এমনটা হয়েছে, তা-ও গবেষণায় জানতে পেরেছেন তাঁরা।

Advertisement

জিওফিজ়িক্যাল রিসার্চ লেটার্সে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর কম্পিউটার মডেল তৈরি করে তার উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন তাঁরা। গত ৪০ কোটি বছর ধরে পৃথিবীর ভূ-তাত্ত্বিক কী কী পরিবর্তন হয়েছে, তা ওই মডেলের মাধ্যমেই বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। তাতে দেখেছেন, পৃথিবীর কোন অংশের ভিতরের অংশ কতটা উত্তপ্ত। কেনই বা এক অংশ অন্য অংশের তুলনায় দ্রুত শীতল হচ্ছে।

পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫৪ কোটি বছর। তার অভ্যন্তরে তাপ ধরে রাখে তার ভর (কন্টিনেন্টাল মাস)। এই পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভূগর্ভে কী রয়েছে? পৃথিবীর গর্ভে রয়েছে উত্তপ্ত লাল রঙের তরল পদার্থ। এই পদার্থ গোটা গ্রহের ভিতরের অংশকে উষ্ণ রাখে। পৃথিবীর যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি রয়েছে, যে চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে, তার নেপথ্যেও রয়েছে এই উত্তপ্ত তরল। অভ্যন্তরে এই গলিত পদার্থ থাকার কারণেই পৃথিবীকে ঘিরে রাখে বায়ুমণ্ডল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরের অংশের তাপ বিকিরণ করে শীতল হওয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে আরও বহু বছর। যত দিন না তা মঙ্গলের মতো হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের যেটা অবাক করেছে, তা হল পৃথিবীর ভিতরে একটি অংশ অন্য একটি অংশের তুলনায় দ্রুত শীতল হচ্ছে। আর তার কারণ হচ্ছে, ভরের তারতম্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে অংশের ভর বেশি, সেই অংশ বেশি উত্তপ্ত থাকে, ওই ভরের কারণেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্থলভাগের তুলনায় মহাসাগরীয় ভূত্বক দিয়ে অনেক বেশি তাপ বিকিরিত হয়। আর সেই প্রক্রিয়াই পৃথিবী শীতল হওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে।

ভূ-পৃষ্ঠের স্তর বা আবরণ একটি কনভেকশন ওভেনের মতো, যা আসলে একটি ট্রেডমিল। প্রতিদিন সমুদ্রের নীচে পৃষ্ঠতল একটু করে সরে যায়। সেই চ্যুতি দিয়ে ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে ম্যাগমা। সেই ম্যাগমা তৈরি করে নতুন পৃষ্ঠ। পৃষ্ঠের পুরনো অংশটি তখন নষ্ট হয়ে মহাদেশীয় ভরের নীচে চলে যায়। আর এই কারণেই সমুদ্র পৃষ্ঠ তুলনায় দ্রুত শীতল হয়।

পৃথিবীর অভ্যন্তরে কোন অংশ বেশি তাড়াতাড়ি শীতল হচ্ছে, কোন অংশ কম, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধার জন্য বিজ্ঞানীর দু’টি গোলার্ধে ভেঙে নিয়েছেন এই গ্রহকে— আফ্রিকান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় গোলার্ধ। তাঁরা দেখেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় গোলার্ধ অন্য অংশের তুলনায় দ্রুত তাপ ক্ষয় করছে। কেন? বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ স্থলভাগের পৃষ্ঠের তুলনায় অনেক পাতলা। তার ভরও কম। ঠান্ডা জল ভিতরের তাপকে স্তিমিত করে। এক দিকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের মতো মহাদেশ। অন্য দিকে প্রশান্ত মহাসাগর। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশান্ত মহাসাগরের অংশ দ্রুত শীতল হয়।

এর আগেও কম্পিউটারে পৃথিবীর মডেল তৈরি করে পরীক্ষা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তখন গত ২৩ কোটি বছর ধরে তার কী পরিবর্তন হয়েছে, তা পরখ করে দেখেছেন। এ বার প্রায় তার দ্বিগুণ সময়সীমা অর্থাৎ ৪০ কোটি বছর ধরে পৃথিবীর পরিবর্তন গবেষণা করেছেন অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই মিলেছে সাফল্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় গোলার্ধ আফ্রিকান গোলার্ধের তুলনায় ৫০ কেলভিন বেশি ঠান্ডা হচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীরা এ-ও মনে করেন, কোটি কোটি বছর আগে এই প্রশান্ত মহাসাগরীয় গোলার্ধ বেশি উত্তপ্ত ছিল। তাঁদের একাংশের অনুমান, সে সময় হয়তো এই অংশের ভর বেশি ছিল। অর্থাৎ ওই অংশে ছিল স্থলভাগ। তবে এর অন্য ব্যাখ্যাও হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।

Advertisement
আরও পড়ুন