CAB Felicitate Richa Ghosh

বিশ্বজয়ী রিচা রাজ্য পুলিশের ডিএসপি, দিদি-দাদার সংবর্ধনা ‘ছোট মাহি’কে, একসুরে কামনা, বঙ্গকন্যা হবেন দেশের অধিনায়ক!

সিএবি-র তরফ থেকে রিচার হাতে তুলে দেওয়া হয় ৩৪ লক্ষ টাকার চেক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে দিয়েছে বঙ্গভূষণ সম্মান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রিচার গলায় পরিয়ে দেন একটি সোনার হার।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৪
cricket

ইডেনে রিচা ঘোষকে সংবর্ধনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝুলন গোস্বামী ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। রয়েছেন অরূপ বিশ্বাসও। ছবি: সংগৃহীত।

শিলিগুড়ির পর কলকাতা। বাংলার প্রথম বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার রিচা ঘোষকে সংবর্ধনা দিল বাংলার ক্রিকেট সংস্থা। সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে হয়েছে এই অনুষ্ঠান। ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই রিচার কাছে একটি প্রত্যাশা রেখেছেন সৌরভ ও মমতা। তাঁদের কামনা, এক দিন ভারতের মহিলা দলের অধিনায়ক হবেন রিচা।

Advertisement

শনিবার ইডেন গার্ডেন্সে প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন রিচা। উত্তরীয়, পুষ্পস্তবক ও মিষ্টির পর সিএবি তাঁর হাতে তুলে দেন সোনার ব্যাট ও বল। দেওয়া হয় ৩৪ লক্ষ টাকার চেক। সৌরভ জানান, বিশ্বকাপ ফাইনালে ৩৪ রান করেছিলেন রিচা। তাই তাঁকে ৩৪ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি স্মারক তুলে দেন সিএবি কর্তারা। তার পরেই রাজ্য সরকারের পুরস্কার পান রিচা। তাঁকে দেওয়া হয় ‘বঙ্গভূষণ’ সম্মান। মুখ্যমন্ত্রী রিচার গলায় একটি সোনার হার পরিয়ে দেন। জানা গিয়েছিল, রিচাকে রাজ্য পুলিশে চাকরি দেওয়া হবে। এ দিন তাঁর হাতে ডিএসপি-র নিয়োগপত্র তুলে দেন তিনি।

cricket

ইডেনে রিচা ঘোষের (বাঁ দিকে) হাতে বঙ্গভূষণ সম্মান তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

শনিবার বাবা-মায়ের সঙ্গে ইডেনে এসেছিলেন রিচা। তার আগে লালবাজারে গিয়ে পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেন রিচা। ইডেনে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামী, বাংলার ক্রিকেট সংস্থার বর্তমান ও প্রাক্তন কর্তারা। বাংলার প্রাক্তন পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটরদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকেও ডেকে নেওয়া হয়েছিল মঞ্চে।

রিচাকে প্রথম খুঁজে এনেছিলেন ঝুলন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন ভারতীয় দলে ২০ বছর খেলা এই ক্রিকেটার। ঝুলন বলেন, “২০১৩ সালে সিএবি-কে বলেছিলাম, জেলা থেকে প্রতিভা তুলে আনতে চাই। সেই বছর শুরু হয়েছিল ট্যালেন্ট হান্ট। সেখানেই রিচাকে প্রথম দেখি। আমার দেখা সেরা প্রতিভা।” তবে রিচাকে সিনিয়র দলে খেলাতে সমস্যায় পড়েছিলেন ঝুলন। তিনি বলেন, “ওকে যখন বাংলার সিনিয়র দলে খেলাতে চাই, অনেকে বলেছিল, ওর বয়স কম। কিন্তু সিএবি ও কর্তারা পাশে ছিল। সকলে বুঝে গিয়েছে, আমার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। তবে এখান থেকে রিচার নতুন লড়াই শুরু।”

cricket

ইডেনে রিচা ঘোষের (বাঁ দিকে) হাতে চেক তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ভারতের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন সৌরভ। তার মধ্যে একটিতে অধিনায়কও ছিলেন। তর্কাতীত ভাবে বাংলার ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ আইকন তিনি। কিন্তু কোনও দিন বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। শিলিগুড়ির রিচা প্রথম বাঙালি যাঁর বাড়িতে বিশ্বকাপ রয়েছে। কাকতালীয় ভাবে, রিচা এমন সময়ে বিশ্বকাপ জিতলেন যখন সৌরভ বাংলার ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি। শুধু তাই নয়, সেই সৌরভই রিচাকে সংবর্ধনা জানালেন। ভারতীয় দলে রিচার কতটা দায়িত্ব সে কথা শোনা গিয়েছে সৌরভের মুখে। তিনি বলেন, “রিচা ছ’নম্বরে ব্যাট করতে নেমে যে কাজটা করে সেটা সবচেয়ে কঠিন। কারণ, বল কম পায়। রান করতে হয় অনেক বেশি। সেখানে ও রান করেছে। ওর স্ট্রাইক রেটটাই তফাত গড়ে দিয়েছে (এ বারের বিশ্বকাপের সেরা স্ট্রাইক রেট রিচার। ১৩৩.৩৪ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন তিনি)।” তার পরেই নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন সৌরভ। তিনি বলেন, “এক দিন যেন বলতে পারি রিচা ঘোষ ভারতের অধিনায়ক। সেই দিনটার অপেক্ষায় আছি।”

হাওড়ার ডুমুরজলায় নতুন অ্যাকাডেমি তৈরি হচ্ছে সিএবি-র। জায়গা দিয়েছে রাজ্য সরকার। সৌরভের প্রতিশ্রুতি, “এক বছরের মধ্যে বিশ্বমানের অ্যাকাডেমি তৈরি হবে ডুমুরজলাতে। তার ফল বাংলার ক্রিকেটারেরা পাবে।”

রিচা বিশ্বকাপে বেশ কিছু ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট করেছেন। কী ভাবে তার প্রস্তুতি নেন, সে কথা জানিয়েছেন তিনি। রিচা বলেন, “নেটে একটা লক্ষ্য রেখে ব্যাট করি। ম্যাচে যা হতে পারে, সেটাই অনুশীলনে করি। তাতে ম্যাচে সুবিধা হয়।” সাজঘরে সতীর্থদের অনেকেই তাঁকে ‘ছোট মাহি’ বলে ডাকেন । মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো বড় বড় ছক্কা মারেন বলেই এই নাম তাঁর। তবে কি ধোনির মতো দুধও তাঁর প্রিয়? রিচা বলেন, “ছোটতে খেতাম। কিন্তু এখন আর খাই না।” তিনি জানিয়েছেন, কঠিন পরিস্থিতিতে খেলতেই ভালবাসেন তিনি। দলকে জেতাতে ভালবাসেন। জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বকাপ জেতার পর যে পদক পেয়েছেন, তা বাড়িতে তাঁর ট্রফি ক্যাবিনেটে একেবারে সামনে রাখা থাকবে।

cricket

ইডেনের মঞ্চে রিচা ঘোষকে (বাঁ দিকে) জড়িয়ে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ভারত বিশ্বকাপ জেতার পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে ইডেনের অনুষ্ঠানে আসার অনুরোধ করেছিলেন সৌরভ। মমতা সেই অনুরোধ রেখেছেন। বাংলার ক্রিকেটে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সাহায্য করেন তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সৌরভ। কয়েক দিন পর ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ় শুরু। সেই ট্রফির নাম ‘ফ্রিডম ট্রফি’। ১৪ নভেম্বর কলকাতায় শুরু প্রথম টেস্ট। তারই একটি প্রতীকী ট্রফি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন সৌরভ। প্রথম টেস্টে তাঁকে আমন্ত্রণও জানান।

cricket

ইডেনে (বাঁ দিক থেকে) সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রিচা ঘোষ, অরূপ বিশ্বাস, কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঝুলন গোস্বামী। ছবি: সংগৃহীত।

মুখ্যমন্ত্রীও রিচাকে এক দিন ভারতের অধিনায়ক হিসাবে দেখতে চান। তবে তিনি বেশি চাপ দিতে চান না ২২ বছরের ক্রিকেটারের উপর। মমতা বলেন, “ওর কাছে অনেক প্রত্যাশা। কিন্তু ওর উপর চাপ দেব না। যা করছে, সেটা ভাল ভাবে করুক। সব সময় তো একই পরিকল্পনায় সাফল্য আসে না। পরে হয়তো অন্য কোনও পরিকল্পনা করবে। অন্য ভাবে সফল হবে।” পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, তিনি সৌরভকে বিশ্ব ক্রিকেটের মসনদে দেখতে চান। মমতা বলেন, “জানি, সৌরভ হয়তো রাগ করবে। কিন্তু আমি একটা কথা বলতে চাই। এ এত বছর ভারতের অধিনায়ক ছিল। প্রশাসনও সামলেছে। ওর কি আইসিসি-র প্রধান হওয়া উচিত ছিল না? আমি বিশ্বাস করি, ও এক দিন সেটা হবেই। ওকে আটকানোর ক্ষমতা কারও নেই।”

Advertisement
আরও পড়ুন