মেলবোর্নের এই পিচে ব্যাট করতে সমস্যায় পড়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ছবি: পিটিআই।
কয়েক মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ইডেনে ভারত দু’দিন হেরে যাওয়ার পর পিচ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। ভারতের পিচে কী ভাবে প্রথম দিন থেকে স্পিনারেরা সাহায্য পাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন সকলে। অস্ট্রেলিয়াতেও তো দু’দিনে শেষ হল টেস্ট। তা-ও এক বার নয়, দু’বার। পার্থের পর মেলবোর্নে। ফলে এ বার সেখানেও পিচ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অ্যাশেজ় সিরিজ়ে মেলবোর্নের পিচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা।
মেলবোর্নের উইকেটে ১০ মিলিমিটার ঘাস ছিল। পিচ দেখে শুরুতেই অবাক হয়েছিলেন ক্রিকেটারেরা। দু’দল থেকে বাদ দেওয়া হয় স্পিনারকে। শুধু পেসারদের নিয়েই নামে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। সেই পেসারেরাই দু’দিন ধরে দাপট দেখালেন। দু’দিনে পড়ল মোট ৩৬ উইকেট। তার মধ্যে প্রথম দিনই ২০ উইকেট পড়ল, যা অ্যাশেজ়ে ১১৬ বছরে রেকর্ড। শেষ বার এই ঘটনা ঘটেছিল ১৯০৯ সালে। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ১৫ বছর পর সে দেশে টেস্ট জিতল ইংল্যান্ড। কিন্তু তাতে পিচ নিয়ে বিতর্ক কমছে না।
সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করেছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক কেভিন পিটারসেন। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, “যখন ভারতের মাটিতে প্রথম দিন এ ভাবে উইকেট পড়ে, তখন ভারতকে নিশানা করা হয়। ভারত হলে তো তুলোধনা হত। অস্ট্রেলিয়ায় হবে না কেন? এখানেও তো একই ঘটনা হল। আশা করছি এই পিচ নিয়ে তদন্ত হবে। নিয়ম সকলের জন্য এক হওয়া উচিত।” পার্থে দু’দিন টেস্ট শেষ হওয়ার পরেও কেউ পিচ নিয়ে প্রশ্ন করেননি। সেই কারণেই হয়তো আরও বেশি ক্ষুব্ধ পিটারসেন।
এই উইকেটে ব্যাট করা যে কঠিন তা স্বীকার করে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন। বিবিসি-কে তিনি বলেন, “ব্যাটারদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। পিচে বোলারদের জন্য অনেক কিছু আছে। দু’দলের ব্যাটারেরাই সমস্যায় পড়ছে।” আর এক প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ক স্যর অ্যালিস্টার কুকও ভনের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, “ঠিক জায়গায় বল ফেললে বোলারকে আর কিছু করতে হবে না। বাকিটা পিচ করে দেবে। ব্যাটারেরা কী করবে? অন্যায় হচ্ছে। বোলারদের উইকেট নিতে তেমন পরিশ্রমই করতে হচ্ছে না।”
ইংল্যান্ডের প্রাক্তনেরা পাশে পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তনদেরও। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে তৃতীয় সর্বাধিক উইকেটের মালিক গ্লেন ম্যাকগ্রা বলেন, “৭ মিলিমিটার ঘাস যথেষ্ট ছিল। জানি না, কেন ১০ মিলিমিটার রাখা হল। এই উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা সবচেয়ে সহজ।” সেটাই দেখা গেল। চতুর্থ ইনিংসে ১৭৫ রান তাড়া করে জিতে গেল ইংল্যান্ড। আগের তিন ইনিংসের মতো ব্যাট করতে ততটা সমস্যা হল না তাদের।
প্রাক্তন অসি পেসার ব্রেট লি-র মুখেও একই কথা। তিনি জানিয়েছেন, পিচে হাত দিয়ে বুঝেছেন, এখানে ব্যাট করা কতটা কঠিন। লি বলেন, “আমি পিচে হাত দিয়ে বুঝতে পারছিলাম ঘাস উঠে আছে। এই পিচে বল পড়লে তো সুইং করবেই। প্রতি বলে লড়তে হবে ব্যাটারদের।”
যে পিচ নিয়ে এত বিতর্ক, সেই পিচে ঘাস কেন বেশি রাখলেন মেলবোর্নের পিচ প্রস্তুতকারক ম্যাট পেগ। তার দু’টি কারণ রয়েছে। এক, অস্ট্রেলিয়ার সব পিচ ড্রপ ইন পিচ। অর্থাৎ, অন্য কোথাও পিচ তৈরি করে এনে মাঠে বসানো হয়। এই ধরনের পিচে বলের বাউন্স ধরে রাখতে ঘাস বেশি রাখা হয়। দুই, এই টেস্টের প্রথম দু’দিনের তুলনায় পরের তিন দিন তাপমাত্রা অনেকটা বেশি থাকার পূর্বাভাস ছিল। বেশি তাপমাত্রায় তাড়াতাড়ি পিচ ভেঙে যায়। সেই কারণেই হয়তো ঘাস বেশি রেখেছিলেন পেগ। কিন্তু তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এখন দেখার এই বিষয়ে আইসিসি-র কাছে ম্যাচ রেফারি কী রিপোর্ট দেন।