Gautam Gambhir

গভীর সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছিল শুভমনকে, জীবনের কঠিনতম পরীক্ষাটা পাশ করে গিয়েছে! ‘বাচ্চা ছেলে’ গিলকে নিয়ে বললেন কোচ গম্ভীর

কোচ গৌতম গম্ভীর যে কোনও পরিস্থিতিতে অধিনায়ক শুভমন গিলের পাশে থাকতে চান। দেখতে চান কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে শুভমনের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৩১
Picture of Shubman Gill and Gautam Gambhir

(বাঁ দিকে) শুভমন গিল এবং গৌতম গম্ভীর (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বলা হয় ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপর একই রকম চাপ থাকে। ২৬ বছরের শুভমন গিলের উপর কতটা চাপ, বুঝিয়ে দিলেন গৌতম গম্ভীর। ভারতীয় দলের কোচ পাশাপাশি এটাও বললেন, সেই চাপ কাটানোর জন্য তিনি পাশে আছেন।

Advertisement

ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দিল্লি টেস্টের দ্বিতীয় দিন মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সম্প্রচারকারী চ্যানেলে গম্ভীর বলেন, ‘‘শুভমন যখন অধিনায়ক হল, ওকে বলেছিলাম, গভীর সমুদ্রে তোমাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হয় তুমি ডুববে, না হলে সাঁতার কেটে বেরিয়ে আসবে।’’

শুভমন কি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন? গম্ভীর বলেন, ‘‘ইংল্যান্ড সিরিজ়ে ওভাল টেস্টের পর ওকে বলেছিলাম, জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা দিলে। শুভমন ইংল্যান্ডে সাড়ে সাতশোর বেশি রান করেছে। ইংল্যান্ডে ও রকম ব্যাটিং করতে না পারলে পরের সিরিজ়ে করত। শুভমান যে মানের ব্যাটার, তাতে কোনও না কোনও সিরিজ়ে করতই। একটা ২৫ বছরের বাচ্চা ছেলে অধিনায়ক হয়ে তরুণ দল নিয়ে গিয়েছিল। দলকে সামলেছে। নিজেকে সামলেছে। নেতৃত্ব সামলেছে। চাপ নিয়ে খেলেছে। এর চেয়ে কঠিন কাজ আর কী হতে পারে? শুভমন যে ক’দিনই নেতৃত্ব দিক, ১৫ বছর, ১০ বছর বা ২ বছর, এর চেয়ে কঠিন সিরিজ় ওকে খেলতে হবে না। আমার মনে হয় না ভারতের আর কোনও টেস্ট অধিনায়ককে এত কঠিন সিরিজ় খেলতে হয়েছে। ইংল্যান্ড যথেষ্ট শক্তিশালী দল। ওদের বোলিং, ব্যাটিং দুটোই ভাল। সেই তুলনায় আমাদের দল অনেক অনভিজ্ঞ ছিল। আমার তো মনে হয় সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা শুভমন পাশ করে গিয়েছে।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ওভাল টেস্টের পর শুভমনকে বলেছিলাম, ‘তুমি কঠিনতম টেস্টটা খেলে ফেলেছ অধিনায়ক হিসাবে। এ বার সব কিছু ধীরে ধীরে সহজ হয়ে যাবে তোমার কাছে।’ আশা করি এখন পরিস্থিতি ওর জন্য অনেক সহজ হবে।’’

গম্ভীর যে কোনও পরিস্থিতিতে অধিনায়ক শুভমনের পাশে থাকতে চান। তিনি বলেছেন, ‘‘শুভমনের সবচেয়ে বড় গুণ হল, চাপ সামলাতে পারা। তবে যখন সব কিছু ওর পক্ষে যাবে না, তখন ওর প্রতিক্রিয়া কেমন হয় সেটা দেখতে চাই। আমি সব সময় ওর পাশে আছি। ওর সঙ্গে আছি। ওকে রক্ষা করার জন্য আছি। যত ক্ষণ শুভমন সব কিছু ঠিকঠাক করে করতে না পারছে, তত ক্ষণ ওর জন্য আমি যে কোনও সমালোচনা শুনতে তৈরি।’’

ভারতীয় দলের কোচ আরও বলেছেন, ‘‘শুভমনকে শুরুতেই যথেষ্ট সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। ওকে অনেক কিছু বলা হয়েছে। ঠিক হয়নি। প্রত্যাশার একটা সীমা থাকা উচিত। ২৪ বা ২৫ বছরের একটা বাচ্চার গড় টেস্টে সব সময় ৫০-এর বেশি থাকবে, যেখানেই যাবে রান করবে, এটা হয় না। শুভমন যে ধরনের ব্যাটার বড় রান যে কোনও ম্যাচে করতে পারে। ইংল্যান্ডে সাড়ে সাতশোর বেশি রান করেছে। আমি বেশি খুশি হয়েছি, দুর্দান্ত ভাবে চাপ সামলাতে পারায়। ইংল্যান্ডে আমি চাপে ছিলাম। আমার সহকারীরা চাপে ছিলেন। শুভমনও চাপে ছিল। অথচ ওকে এক বারও মাথা গরম করতে দেখিনি। এক বারও ওর মধ্যে হতাশার বহিঃপ্রকাশ দেখিনি। টেস্টের ২৫টা দিনই হাসি মুখে নেতৃত্ব দিয়েছে। কৃতিত্বটা ওর প্রাপ্য।’’

সাদা বলের ক্রিকেটে কোচ গম্ভীর দেশকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, এশিয়া কাপ দিয়েছেন। তবে ইংল্যান্ড সফর বাদ দিলে লাল বলের ক্রিকেটে তিনি এখনও ততটা সফল নন। অস্বীকার করেননি গম্ভীর। ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে ০-৩ ব্যবধানে সিরিজ় হার এখনও কষ্ট দেয় তাঁকে। গম্ভীর বলেছেন, ‘‘আমার কোচিং জীবনে ওই সিরিজ়টা কখনও ভুলতে পারব বলে মনে হয় না। ভুলতেও চাই না। ক্রিকেটারদেরও একই কথা বলি। সামনে তাকানো গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে অতীত মনে রাখাও কখনও কখনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। না হলে সব কিছু আমরা সহজ ভাবে নিয়ে ফেলব। কোনও কিছু হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ়ই উদাহরণ। আমরা সকলে মনে করেছিলাম, ওদের সহজেই হারাতে পারব। কিন্তু খেলায় তেমন হয় না। এটাই বাস্তব।’’

এখনও শুভমনদের নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ়ের উদাহরণ দেন গম্ভীর। সতর্ক করে দেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার তো মনে হয় সাজঘরে ক্রিকেটারদের বার বার নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ়ের কথা মনে করিয়ে দেওয়া উচিত। ওই সিরিজ়ে আমরা কী করেছিলাম, মনে রাখা দরকার। ওই সিরিজ় আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। এখন আমরা কোনও প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে চাই না।’’

গম্ভীর মনে করেন না টেস্ট বিশ্বকাপ জেতার জন্য ঘরের মাঠে সাফল্যই যথেষ্ট। ভারতীয় দলের কোচ বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি না শুধু ঘরের মাঠে আধিপত্য দেখানোই সব। বিদেশের মাঠেও সমান আধিপত্য বিস্তার করতে হবে আমাদের। তরুণ ক্রিকেটারেরা ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজেদের প্রমাণ করেছে। সম্ভবত ওই সিরিজ়টাই আমাদের জন্য কঠিনতম পরীক্ষা ছিল। একটা তরুণ, অনভিজ্ঞ দল ইংল্যান্ডে যে রকম পারফর্ম করেছে, তাতে আমি খুশি। ফলাফলের থেকেও আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ওদের প্রতি দিনের লড়াইটা।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমার মতে, টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলার জন্য শুধু ঘরের মাঠে দাপট দেখানোই যথেষ্ট নয়। শুধু ঘরের মাঠে আধিপত্য দেখিয়ে কোনও দল টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার যোগ্য হতে পারে না।’’

ফলাফল নয়, কোচ গম্ভীরের কাছে লড়াইটাই আসল। তিনি চান, পরিস্থিতি যেমনই হোক, ক্রিকেটারেরা যেন নিজেদের সেরাটা দিয়ে লড়াই করে। বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে লড়াই করবে, তিনি তার পাশে থাকবেন। তিনিও তার জন্য লড়াই করবেন।

Advertisement
আরও পড়ুন