Akashdeep

‘এ ভাবেই দেশকে জেতা, আমার জন্য চিন্তা করিস না’, ভাইকে রান্না করে খাওয়াতে চান আকাশদীপের ক্যানসার আক্রান্ত দিদি

এজবাস্টনে ১০ উইকেট নিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত দিদিকে উৎসর্গ করেছিলেন আকাশদীপ। সেই দিদি চান, আকাশদীপ এ ভাবেই ভারতের হয়ে ভাল খেলুন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৫ ১৩:৩৮
Akashdeep with sister Jyoti

দিদি জ্যোতির সঙ্গে আকাশদীপ। ছবি: এক্স।

বাবা ও বড় দাদার মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন সবচেয়ে ছোট ভাই আকাশদীপ। তার মাঝে নিজের খেলাও চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ম্যাচ শেষে আকাশদীপ জানিয়েছেন, তাঁর ক্যানসার আক্রান্ত দিদিকে এই জয় উৎসর্গ করেছেন। সেই দিদি চান, আকাশদীপ এ ভাবেই ভারতের হয়ে ভাল খেলুন।

Advertisement

‘ইন্ডিয়া টুডে’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আকাশদীপের দিদি অখণ্ড জ্যোতি সিংহ জানিয়েছেন, ভাইয়ের এই পারফরম্যান্সে তিনি কতটা গর্বিত। জ্যোতি বলেন, “দেশকে ও গর্বিত করেছে। ১০ উইকেট নিয়েছে। আমি ভাইকে নিয়ে গর্বিত। ওকে একটা কথাই বলেছি। আমি ঠিক আছি। আমার জন্য চিন্তা করতে হবে না। শুধু এ ভাবেই দেশকে জেতা।” জ্যোতি জানিয়েছেন, তাঁর ক্যানসার এখন তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখনও অন্তত ছ’মাস তাঁর চিকিৎসা চলবে।

বাড়িতে বসে আকাশের খেলা তাঁরা সকলে মিলে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন জ্যোতি। তাঁর একটা করে উইকেটে সঙ্গে পরিবারের সকলের আনন্দ আরও বেড়েছে। জ্যোতি বলেন, “আকাশ যখন উইকেট নিচ্ছিল, আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল। আমরা সকলে মিলে হাততালি দিচ্ছিলাম। এত জোরে চিৎকার করছিলাম যে, পাশের বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসা করছিল, কী হয়েছে। আমরা তা-ও চিৎকার থামাইনি।”

ক্যানসার হওয়ার পর তিনি নিজে কাউকে জানাননি। কিন্তু আকাশ যে এ ভাবে টেলিভিশনে তাঁর অসুস্থতার কথা জানাবেন, ভাবতে পারেননি জ্যোতি। তিনি বলেন, “আকাশ যে সব বলে দেবে, আমি ভাবতে পারিনি। আসলে আমরা এখনও তৈরি নই। তাই কাউকে বলিনি। কিন্তু ও হয়তো আর আবেগ ধরে রাখতে পারেনি।” তাতে অবশ্য রাগ করেননি দিদি। ভাইয়ের আবেগ বুঝতে পেরেছেন। জ্যোতি বলেন, “ও যে আমাকে কতটা ভালবাসে সেটা এই কথা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। পরিবারে ওর সবচেয়ে কাছের মানুষ আমি।”

খেলার পর ভাইয়ের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা হয়েছে জ্যোতির। তখন আকাশদীপ জানিয়েছেন, কেন তাঁর অসুস্থতার কথা তিনি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন। জ্যোতি বলেন, “খেলা শেষ হওয়ার পর ওর সঙ্গে দু’বার ভিডিয়ো কলে কথা হয়েছে। ও আমাকে বলেছে, চিন্তা না করতে। গোটা দেশ আমার পাশে আছে। আরও বলেছে, ও অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আর লুকিয়ে রাখতে পারেনি। এ রকম ভাই ক’টা পাওয়া যায়। ও আমাদের লুকিয়ে কিচ্ছু করে না। আমার বাবা আর দাদা নেই। এখন আকাশই পরিবারের কর্তা।”

এত ব্যস্ততার মাঝেও দিদিকে সময় দিয়েছেন আকাশ। তিনি যখন আইপিএলে লখনউ সুপার জায়ান্টসের হয়ে খেলছেন তখন জ্যোতিকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। খেলার মাঝেও তাঁকে দেখতে যেতেন আকাশ। জ্যোতি বলেন, “ও ঠিক সময় বার করে নিত। হয় ম্যাচের আগে, না হয় ম্যাচের পর আমার সঙ্গে দেখা করত।”

ইংল্যান্ড থেকে বাড়ি ফিরলে ছোট ভাইকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে চান জ্যোতি। তিনি জানিয়েছেন, আকাশ তাঁর হাতের রান্না খুব ভালবাসেন। জ্যোতি বলেন, “আকাশ বাড়ি এলে আমার হাতে খেতে ভালবাসে। এ বারও ফিরলে ওকে রান্না করে খাওয়াব। আমার হাতের দইবড়া ওর সবচেয়ে পছন্দের। সব্জি খেতেও ভালবাসে।”

ইংল্যান্ডে সবে একটা টেস্ট খেলেছেন আকাশদীপ। নিয়েছেন ১০ উইকেট। ইংল্যান্ডে এটা কোনও ভারতীয় বোলারের সেরা বোলিং। বাকি এখনও তিনটে টেস্ট। সেই তিন টেস্টে আকাশের খেলা পাকা। ভাই আরও উইকেট নিক, দেশকে জেতাক, সেই স্বপ্নই দেখছেন দিদি। ভারতে বসেও জ্যোতির মন পড়ে সুদূর ইংল্যান্ডে।

Advertisement
আরও পড়ুন