বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।
রোহিত শর্মা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরেই লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন বিরাট কোহলি। জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন কোহলি। জুন মাসে ইংল্যান্ড সফরের আগেই অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন তিনি।
বোর্ড সূত্রে খবর, তারা কোহলিকে নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেছিল। কারণ, সামনেই ইংল্যান্ড সফর। সেখানে রোহিতের পাশাপাশি কোহলিকে না পেলে সমস্যা হত ভারতের। কিন্তু কোহলি নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছেন। কেন হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি? নেপথ্যে কী কী কারণ রয়েছে, খুঁজে দেখল আনন্দবাজার ডট কম।
পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে চান কোহলি
গত কয়েক বছরে মাঝেমাঝেই বিশ্রাম নিয়েছেন কোহলি। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলেননি। লন্ডনে প্রায়ই দেখা যায় তাঁকে। সেখানে একটি বাড়ি কিনেছেন কোহলি। জানিয়েছেন, অবসরের পর লন্ডনে পরিবারকে নিয়ে চলে যাবেন। দুই সন্তানের পিতা কোহলি হয়তো এখন পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে চাইছেন। টি-টোয়েন্টি আগেই ছেড়েছেন। এ বার টেস্টও ছাড়লেন তিনি। এখন এক দিনের সিরিজ় সবচেয়ে কম হয়। অর্থাৎ, শুধু ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেললে বছরে খুব বেশি সময় মাঠে থাকতে হবে না কোহলিকে। সেই কারণেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন ভারতীয় ব্যাটার।
রোহিতের আচমকা অবসরের সিদ্ধান্ত
প্রায় একই সময়ে ভারতের হয়ে খেলা শুরু করেছিলেন তাঁরা। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার। মাঠ ও মাঠের বাইরে রোহিত-কোহলির সম্পর্ক বেশ ভাল। একসঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন তাঁরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে মাঠে দাঁড়িয়েই নিজের অবসরের কথা জানিয়েছিলেন কোহলি। কিছু ক্ষণ পরে সাংবাদিক বৈঠকে গিয়ে রোহিতও অবসরের কথা জানিয়ে দেন। তখন শোনা গিয়েছিল, কোহলির সিদ্ধান্ত দেখে রোহিতও অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ বার ছবিটা উল্টো। রোহিত আগে টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের পরেই নিজের অবসরের কথা ভেবেছেন কোহলি।
গম্ভীরের তারকা-সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা
অস্ট্রেলিয়া সফরের পরে ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দলকে তারকা-সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দলে কাউকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে না। প্রত্যেকে সমান। তার পর থেকে প্রত্যেককে একই টিমবাসে হোটেল ও মাঠে যেতে হচ্ছে। কাউকে ব্যক্তিগত রাঁধুনি নিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। গম্ভীরের এই সিদ্ধান্তও কোহলির টেস্ট থেকে অবসরের একটি কারণ। ভারতীয় দলে রোহিত এবং কোহলি দু’জন সবচেয়ে বড় তারকা। রোহিত চলে যাওয়ায় একা হয়ে যেতেন কোহলি। সেই কারণেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি।
শারীরিক ধকলের চাপ
কোহলি বিশ্বের অন্যতম ফিট ক্রিকেটার। উইকেটের মাঝে তাঁর দৌড় বা ফিল্ডিংয়ে তা স্পষ্ট। কিন্তু সেই কোহলিও এখন ধকল নিতে সমস্যায় পড়ছেন। দীর্ঘ সময় ব্যাট করলে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। বেশি দু’রান নিলে দমে সমস্যা হচ্ছে। মাঠে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। টেস্টে খেলার ধকল অনেক বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাট করতে হয়। আবার টানা ৯০ ওভার ফিল্ডিংও করতে হয়। পাঁচ দিনের ক্রিকেট খেলার ধকল সামলানো সহজ নয়। কোহলি এমন নন, যে ফিল্ডিং করার সময় বার বার বিশ্রাম নিতে উঠবেন। আইপিএলের মাঝেই একটি বড় ইনিংস খেলে উঠে কোহলি জানিয়েছিলেন, ৩৭ বছর বয়সে বড় ইনিংস খেলতে কষ্ট হয়। শারীরিক ধকল সামলাতেই টেস্ট ক্রিকেট ছাড়লেন তিনি। মন দিতে চাইছেন এক দিনের ক্রিকেটে।
ব্যর্থতার চাপ
ভারতের হয়ে ১২৩টি টেস্ট খেলেছেন কোহলি। করেছেন ৯,২৩০ রান। ৪৬.৮৫ গড়ে রান করেছেন। ৩০টি শতরান ও ৩১টি অর্ধশতরান করেছেন তিনি। এই মানের এক ব্যাটার গত কয়েক বছরে সমস্যায় পড়েছেন। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দিন-রাতের টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শতরানের পর থেকে শুরু হয়েছিল দীর্ঘ দিনের খরা। তার পরে ৪৪টি টেস্ট ইনিংসে শতরান করতে পারেননি তিনি। প্রায় চার বছর পরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অহমদাবাদে করেছিলেন শতরান। তার পরের ২৯টি ইনিংসেও ছবিটা বিশেষ বদলায়নি। মাত্র দু’টি শতরান করেছেন।
গত পাঁচ বছরে কোহলির গড় অনেকটা কমেছে। এই সময়ের মধ্যে ৩৭টি টেস্টে ১,৯৯০ রান করেছেন কোহলি। গড় ২৬.৮৯। ভারতের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট সিরিজ় খেলেছেন কোহলি। পার্থে প্রথম টেস্টে শতরান করলেও সিরিজ়ের বাকিটা ভাল যায়নি তাঁর। পাঁচ টেস্টের সিরিজ়ে আর একটিও অর্ধশতরান করতে পারেননি কোহলি। একটি শতরানের পরেও সিরিজ়ে তাঁর গড় ছিল ২৩.৭৫। মোট আট বার আউট হয়েছেন তিনি। তার মধ্যে সাত বার অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ের পরে কোহলি জানিয়েছিলেন, কেরিয়ারে হয়তো আর সে দেশে খেলতে যাওয়ার সম্ভাবনা তাঁর নেই। তখনই বোঝা গিয়েছিল, টেস্টে আর বেশি দিন দেখা যাবে না তাঁকে। ইংল্যান্ডেও কোহলির রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। ১৭টি টেস্টে ১,০৯৬ রান করেছেন তিনি। গড় ৩৩.২১। লাল বলের ক্রিকেটে তাঁর যা হাল, তাতে জুন মাসে ইংল্যান্ডে গিয়ে রান করা কঠিন ছিল। আরও এক বার ব্যর্থ হলে হয়তো টেস্ট কেরিয়ার শেষ হয়ে যেত তাঁর। তখন আরও বেশি সমালোচনার মাঝে সরতে হত। তার আগেই সেই কারণে টেস্ট থেকে সরে দাঁড়ালেন কোহলি।