indian super league

ফেডারেশনকে চিঠি আইএসএলের ১২ ক্লাবের, সই করল না শুধু ইস্টবেঙ্গল, নিজেরাই লিগ আয়োজনে আগ্রহী ক্লাবগুলি

আইএসএল দ্রুত শুরু করার আর্জি জানিয়ে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে চিঠি পাঠাল ১২টি ক্লাব। তাদের আর্জি, দরকার হলে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলিই লিগ আয়োজন করতে রাজি। আর কী দাবি জানিয়েছে তারা?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:২৮
football

আইএসএলের ট্রফি। — ফাইল চিত্র।

আইএসএল দ্রুত শুরু করার আর্জি জানিয়ে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে চিঠি পাঠাল ১২টি ক্লাব। তাদের আর্জি, বাণিজ্যিক স্থিতাবস্থার জন্য অবিলম্বে এই প্রতিযোগিতা শুরু করতে হবে। দরকার হলে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলিই লিগ আয়োজন করতে রাজি বলে জানানো হয়েছে, যেমনটা হয়ে থাকে ইউরোপের বড় দেশের লিগগুলিতে। একমাত্র ইস্টবেঙ্গল এই চিঠিতে সই করেনি।

Advertisement

গত ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডবীয়ের সঙ্গে বৈঠক করে ক্লাবগুলি। সেখানে ক্রীড়ামন্ত্রী দ্রুত লিগ শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন ক্লাবগুলিকে। প্রস্তুতি শুরু করে দিতে বলেন। তবে কী ভাবে লিগ আয়োজন হবে তা বলেননি। তাই ক্লাবগুলির অস্বস্তি কাটেনি। সে কারণেই আর এক বার চিঠি দেওয়া হয়েছে ফেডারেশন সভাপতিকে।

আগামী ৮ ডিসেম্বর আইএসএলের আয়োজক এফএসডিএল-এর সঙ্গে মাস্টার রাইটস এগ্রিমেন্ট শেষ হচ্ছে ফেডারেশনের। এখনও বোঝা যাচ্ছে না পরের লিগের আয়োজক কে। ক্লাবগুলির আর্জি, দরকার পড়লে তারাই একটি সংস্থা তৈরি করে লিগ আয়োজন করতে রাজি। শুধু ফেডারেশনকে তার ব্যবস্থা করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং দরকারে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কথা বলে।

চিঠিতে আইএসএলের ক্লাবগুলি জানিয়েছে, গত ১১ বছর ধরে ফুটবলের জন্য প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে তারা। ক্ষতির পরোয়া না করে সুষ্ঠু কাঠামো এবং কেন্দ্রীয় লভ্যাংশ তৈরি করতে চেয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক অনিশ্চয়তার কারণে ক্লাবগুলির অর্থ উপার্জনের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চুক্তি থাকা সত্ত্বেও স্পনসরেরাও একে একে সরে যাচ্ছে। ক্লাবগুলি লিখেছে, “বেশিরভাগ ক্লাবই ফুটবলারদের বেতন দিয়ে গিয়েছে এবং সম্পর্ক ভাল রেখেছে। তবে এই পরিস্থিতি শুধু কঠিনই নয়, এই ভাবে চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব।”

ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে আইএসএলের ক্লাবগুলি অনুরোধ করেছে, যাতে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সরিয়ে রেখে টেন্ডার ডাকা যায়। ফেডারেশনের সংবিধানের ১.২১, ১.৫৪ এবং ৬৩ নম্বর ধারা নিয়ে সমস্যা, যার ফলে কেউ আইএসএল আয়োজন করতে চেয়ে দর দিচ্ছে না। যাঁর অধীনে খসড়া সংবিধান তৈরি হয়েছে, সেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং পরামর্শদাতা সংস্থা কেপিএমজি-ও এই নিয়ে সহমত পোষণ করেছে বলে ফেডারেশনে জানিয়েছে ক্লাবগুলি।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, “শেষ শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নিজেই কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে সাংবিধানিক জটিলতা দূর করার আহ্বান করেছে। ক্লাবগুলি এখন সরকারের সমর্থন চায়। আমরা চাই, ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলুক এবং বোঝাক কেন সুপ্রিম কোর্টে আমাদের আবেদনের পাশে থাকা দরকার। এতে সব পক্ষেরই সুবিধা হবে।”

ক্লাবগুলির আর্জি, সাংবিধানিক জটিলতা মিটিয়ে দ্রুত নতুন করে টেন্ডার ডাকা হোক। সময়সীমা তৈরি করা হোক, যা মেনে চলতেই হবে। এই মাসের মধ্যেই সমস্যা মেটানোর আর্জি জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি স্পষ্ট করে দিয়েছে, লিগ আয়োজন করতে হলে দরকারে ক্লাবগুলি মিলে নিজেরাই একটি সংস্থা তৈরি করবে, যারা লিগ চালাবে। সেখানে প্রত্যেক ক্লাবেরই সদস্য থাকবে এবং প্রতিটি সিদ্ধান্ত সব ক্লাবের অনুমতিতেই নেওয়া হবে। ইউরোপে ইংল্যান্ড, ইটালি, স্পেন-সহ সব বড় দেশে এ ভাবেই ঘরোয়া লিগ চালানো হয়। সেখানে দেশের ফুটবল সংস্থার বিশেষ ভূমিকা থাকে না। তারা শুধু কিছু বিষয়ে মতামত দিতে পারে। ক্লাবগুলি জানিয়েছে, দরকারে যে কোনও বিষয়ে তারা ফেডারেশনকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত।

এই চিঠিতে সই করেনি ইস্টবেঙ্গল। তারা গোড়া থেকেই বলে আসছে, লিগ আয়োজনের দায়িত্বে থাকতে রাজি নয়। ক্লাবকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “আমাদের বোর্ড মিটিংয়েই সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, আমরা আইএসএল আয়োজন করতে আসিনি। খেলতে এসেছি। আয়োজন করা আমাদের কাজ নয়। যারাই আয়োজন করুক আমাদের খেলতে বাধা নেই। আমরা চাই আইএসএল হোক। সবাই খেলুক। ভাল ভাবে হোক। কিন্তু আয়োজন করা আমাদের কাজ নয়।”

মোহনবাগান, গোয়া, মুম্বই-সহ সব ক্লাবই চিঠিতে সই করেছে। রয়েছে মহমেডানও। তবে ক্লাবকর্তা মহম্মদ কামারুদ্দিন জানিয়েছেন, তাঁদের এমন কোনও চিঠি দেখানোই হয়নি। সই করা তো দূরের কথা। ৩ ডিসেম্বরের বৈঠকে তিনি ছিলেন। একই কথা বলেছেন ক্লাবের সচিব ইস্তিয়াক আহমেদ রাজুও। তাঁর কথায়, “আমি এই চিঠিতে সই করিনি। ক্লাবের তরফে কার সই আছে সেটাও জানি না। আমাকে এ বিষয়ে ক্লাব থেকেও কিছু জানানো হয়নি। এ রকম চিঠির কথা এই প্রথম শুনলাম।” যদিও সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, মহমেডানও নাকি সই করেছে।

ফেডারেশন এই চিঠি কেন্দ্রীয় সরকারকে ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার যদি মনে করে যে সুপ্রিম কোর্টে এই চিঠি দেওয়া প্রয়োজন, তা হলে দিতে পারে। ফেডারেশন এ ব্যাপারে এখনই এর বেশ কিছু করতে পারবে না বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন