—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
মদের আসরে বচসা চলাকালীন খুনের একটি ঘটনায় দোষীকে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা শোনাল বারাসত আদালত। ঘটনাটি দত্তপুকুর থানা এলাকার। বারাসত আদালতেরএই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সাজাপ্রাপ্তের আইনজীবী।
বারাসত আদালত সূত্রের খবর, বিশ্বজিৎ দাস নামে এক ব্যক্তিকে সোমবার ওই সাজা শোনান সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক প্রজ্ঞা গার্গী ভট্টাচার্য (হুসেন)। গত শুক্রবার বিশ্বজিৎকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। তার বিরুদ্ধে এক সহকর্মীকে খুনের অভিযোগ ছিল।
আদালত সূত্রের খবর, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩(১) খুনের ধারায় বিশ্বজিৎকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। সেই সঙ্গে তাকে এক হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে দত্তপুকুরের একটি মিষ্টির দোকানে ওই খুনের ঘটনা ঘটে। মদের আসরে বসে খুন হয়ে যান পরিতোষ পাণ্ডে নামে এক ব্যক্তি। তাঁর মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয় এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার নলি কেটে দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানায়, বিশ্বজিৎ ও পরিতোষ ছিলেন সহকর্মী। তাঁরা বিক্রম সাহা নামে এক ব্যক্তির মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন। গত বছর নভেম্বরে পরিতোষের বাড়িতে তিনি এবং বিশ্বজিৎ মদের আসরে বসেছিলেন। পরিতোষের স্ত্রী সে দিন বাড়িতে ছিলেন না।
অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় দু’জনের মধ্যে বচসা বাধে। বিশ্বজিতের স্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেন পরিতোষ। এর জেরে ক্ষুব্ধ বিশ্বজিৎ ভারী কিছু দিয়ে পরিতোষের মাথায় আঘাত করে বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, পরিতোষের গলার নলি কেটে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে।
তদন্তকারীরা জানান, পরিতোষকে খুন করে বিশ্বজিৎ গা-ঢাকা দেয়। পরিতোষ কাজে না আসায় ঘটনার দু’দিন পরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে মিষ্টির দোকানের মালিক জানতে পারেন খুনের ঘটনার কথা। এর পরেই পরিতোষের পরিবার পুলিশের কাছে খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। তদন্ত শুরু করে দত্তপুকুর থানার পুলিশ বিশ্বজিৎকে বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
এই মামলা প্রসঙ্গে সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী তীর্থঙ্কর পাল জানান, ঘটনাটি নাটকীয়। মদের আসরে বসে সহকর্মীকে নৃশংস ভাবে খুন করেছিল বিশ্বজিৎ। খুনের পরে সে শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে যায়। বিচারক সব শুনেই দৃষ্টান্তমূলক সাজাদিয়েছেন। এ দিন অভিযুক্ত বিশ্বজিৎকে এজলাসে তোলা হলে বিচারকের সামনে সে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে।
বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ জানায়, খুনের ঘটনার দু’মাস পরে, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। সমগ্র মামলায় ২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মিষ্টির দোকানের মালিক-সহ অন্য কর্মীরাও ছিলেন।