Digha Jagannath Temple

দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের পেঁড়া এবং গজা বিতরণের দায়িত্বে হিডকো কেন? ‘অনিয়মের’ অভিযোগ বিজেপির জগন্নাথের

সরকারি আবাসন, নির্মাণ প্রকল্প ইত্যাদির উন্নয়নে কাজ করা ‘হিডকো’ কী ভাবে প্রসাদ বিতরণের দায়িত্ব নিতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। হুঁশিয়ারি দিলেন আদালতে যাওয়ারও।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ ১৬:৪৬
Jagannath Temple

দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ বিতরণ নিয়ে ‘বিতর্ক! —ফাইল চিত্র।

দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ তৈরি এবং বিতরণে ‘হিডকো’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল রাজ্য বিজেপি। রথযাত্রার সপ্তাহ খানেক আগে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, রাজ্য জুড়ে গজা ও পেঁড়া বিতরণের জন্য যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছে পশ্চিমবঙ্গ আবাসন পরিকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশন বা ‘হিডকো’ এবং অর্থ জোগাড় করতে তারা সরকারের বিভিন্ন খাত থেকে টাকা নিচ্ছে, যা অনৈতিক।

Advertisement

দিঘায় জগন্নাথধামের জমি এবং বাড়ি হিডকো-র হাতে তুলে দেয় রাজ্য। রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থাটি প্রায় ২০ একর জমিতে সমুদ্রসৈকতের কাছে মন্দির তৈরি করেছে। মন্দির পরিচালনার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের কমিটি তৈরি করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিচালনার সিদ্ধান্ত ওই ট্রাস্টের নেওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি আবাসন, নির্মাণ প্রকল্প ইত্যাদির উন্নয়নে কাজ করা হিডকো কী ভাবে প্রসাদ বিতরণের দায়িত্ব নিতে পারে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন জগন্নাথেরা। তাঁর কথায়, ‘‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজকোষের বিয়োগের কাহিনি বলছি...।’’ তার পর বিজেপি নেতার দাবি, রথযাত্রার আগে রাজ্যবাসীকে গজা এবং পেঁড়া বিতরণের জন্য ৪২ কোটি টাকা ব্যয় করছে তৃণমূল সরকার। কিন্তু ওই টাকা দিতে বলা হয়েছে হিডকোকে। জগন্নাথ বলেন, ‘‘হিডকো মূলত রাজ্য সরকারের প্রোমোটার। সরকারের ডেভেলপার। তার কাজ সরকারি বাড়ি বানানো। তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম, মন্দির নয়, সরকারি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নামে হিডকো একটি বাড়ি বানিয়েছে দিঘায়। মন্দির নাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কেন গজা এবং পেঁড়ার জন্য খরচ করবে? সরকারের বিভিন্ন খাত থেকে কেন টাকা তুলছে।’’ জগন্নাথ আরও বলেন, ‘‘শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন জেলাশাসক এবং কলকাতার পুর কমিশনারকে ৩২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে গজা, পেঁড়ার জন্য। নবান্ন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আরও ১০ কোটি টাকা দিতে হবে। রাজ্যবাসীকে জগন্নাথদেবের প্রসাদ হিসাবে ৪২ কোটি টাকার পেঁড়া, গজা খাওয়াতে চলেছে রাজ্য সরকার। আর এই টাকা ‘হিডকো’ খরচ করছে।’’

বিজেপি নেতা হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছেন, হিডকো-কে এই নির্দেশ কারা দিয়েছে এবং কেন তারা এই ব্যয়ভার বহন করছে, তার সদুত্তর না পেলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে আদালতে ‘টেনে নিয়ে’ যাবেন। জগন্নাথের সংযোজন, ‘‘ডিএ নেই। শিক্ষকদের চাকরি অনিশ্চিত। গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-র ভাতা দেওয়া বন্ধ হল, চরম আর্থিক দুর্ভোগের মধ্যে রাজ্য সরকার চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। তার মধ্যে ৪২ কোটি টাকা নিয়েছে গজা এবং পেঁড়ার জন্য! আশ্চর্যের বিষয়, এই টাকা বিতরণ করছে হিডকো।’’ হিডকোর কাছে সরকারি নির্দেশ আছে কি না এবং তারা এই কাজ করতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা।

বিজেপির এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আনন্দবাজার ডট কম ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে হিডকোর চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে। তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। হিডকোর ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার এইচকে দ্বিবেদীকেও ফোন করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজের জবাব আসেনি। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হিডকোর এক আধিকারিক আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমরা কোনও কথা বলার মতো জায়গায় নেই। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়েই বলা সম্ভব।”

শাসকদল তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এটা পুরোপুরি প্রশাসনিক ব‍্যাপার। প্রশাসন যা বলার বলবে। কিন্তু আদৌ হিডকোর অর্থ ব‍্যয় হচ্ছে কি না, হলে প্রসাদের জন্য খরচ হচ্ছে, না কি অন‍্য কোনও কারণে হচ্ছে, সেগুলো প্রশাসনই দেখছে। ওঁদের এটা দেখতে হবে না। ওঁরা রামমন্দির করার সময় কী হয়েছিল, সেটা দেখুন। অযোধ্যায় রামমন্দির বানাতে গিয়ে কত লোকের বাড়ি আর দোকান উচ্ছেদ করেছে, কত লোককে পথে বসিয়েছে, বিজেপি সেটা নিয়ে ভাবুক।’’

Advertisement
আরও পড়ুন