Calcutta High Court

যমজ সন্তান বড় করতে বিনা অনুমতিতে ছ’মাস ছুটি! দ্বন্দ্ব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে, অর্থনীতির শিক্ষিকার পাশেই হাই কোর্ট

আদালত জানায়, সন্তান পালন করতে আরও এক বছরের বেশি ছুটি নিতে পারবেন ওই শিক্ষিকা। তাঁর আরও ৪০০ দিনের কাছাকাছি ছুটি প্রাপ্য রয়েছে। আইনই তাঁকে সেই অধিকার দিয়েছে।

Advertisement
ভাস্কর মান্না
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ০৮:৫৭
Calcutta High Court grants leave to teacher to raise twins

—প্রতীকী ছবি।

বাড়িতে ১৩ মাসের যমজ সন্তান। ওই সন্তানদের বড় করতে ছুটি প্রয়োজন। মা হয়ে এত ছোট সন্তানদের ছেড়ে কলেজে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ছুটি দেওয়া হোক। ক্যালকাটা গার্লস কলেজের অর্থনীতির এক শিক্ষিকার আবেদনে গুরুত্ব দেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। শেষে বিনা অনুমতিতে ছ’মাস ছুটি নেন ওই শিক্ষিকা। অনুমতি ছাড়া ছুটি নেওয়ায় কলেজের পরিচালন সমিতি তাঁর বেতন বন্ধ করে দেয়। এর পর বেতন চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই কলেজ শিক্ষিকা। সম্প্রতি বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত রায় ঘোষণা করে জানান, কলেজ পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত খারিজ। বিচারপতির নির্দেশ, ওই শিক্ষিকাকে ছ’সপ্তাহের মধ্যে বেতন দিতে হবে। পাশাপাশি আদালত জানায়, সন্তান পালন করতে আরও এক বছরের বেশি ছুটি নিতে পারবেন ওই শিক্ষিকা। তাঁর আরও ৪০০ দিনের কাছাকাছি ছুটি প্রাপ্য রয়েছে। আইনই তাঁকে সেই অধিকার দিয়েছে।

Advertisement

২০১৮ সালের মার্চ মাসে ক্যালকাটা গার্লস কলেজে অর্থনীতি বিভাগে যোগ দেন রূপসা সরকার (নাম পরিবর্তিত) নামের ওই শিক্ষিকা। ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১০ মে পর্যন্ত তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন। ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর ওই শিক্ষিকা যমজ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। ছুটি শেষে এক দিন কলেজ গিয়ে আবার তিনি নতুন করে ছুটির আবেদন করেন। তাঁর বক্তব্য, স্বামী বিদেশে থাকেন। যমজ সন্তানকে দেখভাল করার জন্য আরও ছুটি প্রয়োজন। সেই ছুটি দেওয়া হোক। কলেজ পরিচালন সমিতি জানায়, ওই শিক্ষিকা সদ্য ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। আবার তাঁর ছুটির আবেদন মঞ্জুর করা সম্ভব নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে তিন বার ছুটি চেয়ে আবেদন করেন অর্থনীতির ওই শিক্ষিকা। তাঁর যুক্তি, ওই কলেজে আরও দু’জন অর্থনীতির শিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়া সেখানে শেষ দু’টি অর্থবর্ষে কোনও পড়ুয়া ভর্তিই হননি। ছুটি মঞ্জুর হলে তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে ক্লাস করাতেও রাজি হন। তাতেও কর্তৃপক্ষ সাড়া না-দেওয়ায় অনুমতি ছাড়াই ওই শিক্ষিকা ছুটি নিয়ে নেন। ১৮৯ দিন ছুটি কাটিয়ে তিনি কলেজে যোগ দেন।

এর মধ্যেই কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষিকার বেতন বন্ধ করে দেন। তাঁকে বাকি মাসগুলির বেতন ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেন তাঁরা। শিক্ষিকাকে শো কজ়ও করা হয়। এমতাবস্থায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন যমজ সন্তানের মা ওই শিক্ষিকা। কেন তাঁর ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল আদালতের সামনে তা তুলে ধরেন। দুই সন্তান এবং নিজের মেডিক্যাল রিপোর্ট বিচারপতি সেনগুপ্তের এজলাসে জমা দেন। সব কিছু খতিয়ে দেখে আদালতের পর্যবেক্ষণ, দু’টি সন্তানের দেখভাল করার জন্য ছুটি নিয়ে কোনও ভুল কাজ করেননি ওই শিক্ষিকা। আইন মোতাবেক, সন্তানের বয়স ১৮ বছর না-হওয়া পর্যন্ত কর্মরত কোনও মা ৭৩০ দিন ছুটি নিতে পারেন। ওই শিক্ষিকার আরও ছুটি প্রাপ্য রয়েছে। আদালত জানায়, ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। তাঁকে বকেয়া প্রায় ৪ লক্ষ টাকা বেতন দিতে হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন