—প্রতীকী চিত্র।
ভারতে বিবাহ সম্পন্ন হলেও সময়বিশেষে বিচ্ছেদের মামলা শুনতে পারে বিদেশের কোনও আদালত। ভারতীয় আইন অনুসারে তাতে কোনও বাধা নেই, জানাল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের বক্তব্য, স্বামী বা স্ত্রীর কেউ অন্য দেশে থাকলে সেখানকার আদালতে বিচ্ছেদের মামলার শুনানি হতে পারে। আইন অনুযায়ী সেই রাস্তা খোলা আছে।
২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতায় হিন্দু উপাচার মেনে বিয়ে হয়েছিল দম্পতির। ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আলিপুর আদালতে বিচ্ছেদের মামলা করেন স্বামী। এর পর ওই বছরেরই ১০ অক্টোবর স্ত্রী বিচ্ছেদ চেয়ে ব্রিটেনের আদালতের দ্বারস্থ হন। দাবি করেন ভরণপোষণও। স্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৫ সাল থেকে প্রথমে পড়ুয়া ভিসা এবং পরে কর্মসূত্রে তিনি ব্রিটেনে থাকছেন। মাঝে মাঝে ভারতে গিয়েছেন। শেষ বার দম্পতি হিসাবেও তাঁরা ব্রিটেনেই ছিলেন।
স্ত্রীর আবেদনের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের ১৬ মে ব্রিটেনের ওই আদালত মামলাকারীর স্বামীকে ভরণপোষণের খরচ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ১ নভেম্বর আলিপুর আদালত ব্রিটেনের আদালতের সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। বলা হয়, এই মামলার শুনানি ব্রিটেনের আদালতে হতে পারে না। সেখানে স্ত্রীর আবেদনটি বৈধই নয়। কারণ, স্বামী বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে আগে এ রাজ্যের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তা ছাড়া, ব্রিটেনের স্থায়ী নাগরিকত্ব নেই স্ত্রীর। তাই সেখানকার আদালতের এই সংক্রান্ত মামলা শোনার এক্তিয়ার নেই। ব্রিটেনের আদালত ভরণপোষণ বাবদ যে অর্থের কথা বলেছে, তাকে ‘কঠোর’ বলেও উল্লেখ করেন আলিপুর আদালতের বিচারক। স্বামীর রোজগারের চেয়ে ভরণপোষণের অঙ্ক বেশি হওয়ায় তিনি এই মন্তব্য করেছেন।
আলিপুর আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মামলাকারী স্ত্রী। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল। আদালতের পর্যবেক্ষণ, স্ত্রী বিচ্ছেদের আবেদন প্রথমে না-করলেও ২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল এই সংক্রান্ত মামলায় ব্রিটেনের আদালতে নিজের বক্তব্য জানিয়েছিলেন স্বামী। ২৪ অক্টোবর তিনি নিজের সপক্ষে প্রমাণও বিদেশের আদালতে দাখিল করেন। ফলে তিনি ব্রিটেনের আদালতে বিচ্ছেদের মামলা লড়ার মতো জায়গায় নেই— এটা বলা যায় না।
ব্রিটেনের আদালতে বিচ্ছেদের কারণ হিসাবে স্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁদের বিবাহে ভাঙন রোধ করা আর সম্ভব নয়। ব্রিটেনের আইনে এই কারণ বৈধ হলেও এ দেশের আইনে বৈধ নয় বলে দাবি করেন স্বামী। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্ট স্বামীর এই যুক্তিও খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের পূর্বতন একটি রায় উল্লেখ করে। সেখানে বলা হয়েছিল, বিবাহের এই পর্যায়টি নিষ্ঠুরতার সমান এবং সেই যুক্তিতে বিচ্ছেদ সম্ভব। হিন্দু বিবাহ আইনে বলা আছে, দম্পতি হিসাবে যুগল শেষ যেখানে থেকেছেন, তার আশপাশের জেলা আদালত বিবাহ সংক্রান্ত মামলা শুনতে পারে। জেলা আদালত বলতে ভারতীয় আদালতের কথাই বোঝানো হয়েছে, মেনে নিয়েছে হাই কোর্ট। তবে বিষয়টি উন্মুক্ত দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে ব্রিটেনের আদালতের শুনানিতে আপত্তি নেই জানিয়েছে তারা।