মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তারকা ফুটবলার লিয়োনেল মেসির কলকাতা সফর ঘিরে বিশৃঙ্খলায় নড়েচড়ে বসেছিল রাজ্য প্রশাসন। ১৫ ডিসেম্বর নবান্নে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করে গঙ্গাসাগর মেলায় সব রকম ভিআইপি সংস্কৃতি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যুবভারতীর ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাগরদ্বীপে বৃহৎ জনসমাবেশে যাতে কোনও ভাবেই ‘ভিআইপি সংস্কৃতি’ থাবা না বসাতে পারে, সেই বিষয়ে আগাম সচেতনতা অবলম্বন করছে রাজ্য প্রশাসন। আর এ বার গঙ্গাসাগর মেলাকে ঘিরে প্রশাসনিক প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে স্বয়ং সাগরদ্বীপে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী ৫ জানুয়ারি তিনি সাগরে পৌঁছোবেন। সেখানে পৌঁছেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে প্রস্তুতি বৈঠক করার পাশাপাশি একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। পরিদর্শন শেষে ৬ জানুয়ারি কলকাতায় ফেরার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। নবান্নের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, এ বছর গঙ্গাসাগর মেলায় কোনও ভাবেই ‘ভিআইপি সংস্কৃতি' চলবে না— এই নির্দেশ আগেই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে কি না এবং মেলার সার্বিক প্রস্তুতি কতটা এগোল, তা সরেজমিনে দেখতে নিজেই সাগরদ্বীপে যাচ্ছেন তিনি। প্রশাসনের তরফে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, সাফাই, যাতায়াত ও অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করা হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
উল্লেখ্য, ১৫ জানুয়ারি নবান্নে গঙ্গাসাগর মেলা সংক্রান্ত প্রস্তুতি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছিলেন, সাধারণ পুণ্যার্থীদের অসুবিধা হয়, এমন কোনও ব্যবস্থা বরদাস্ত করা হবে না। ভিআইপি পাস, আলাদা রাস্তা বা বিশেষ সুযোগের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সকলের জন্য সমান পরিষেবা নিশ্চিত করার উপর জোর দেন তিনি। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সফরে মুখ্যমন্ত্রী কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দিতে পারেন বলেও প্রশাসনিক সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে মন্দিরচত্বর ও সংলগ্ন এলাকার ব্যবস্থাপনা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানা যাচ্ছে।
১৪ জানুয়ারি পৌষ সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান হবে। যদিও মেলা শুরু হয়ে যাবে ১০ জানুয়ারি থেকেই এবং চলবে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম হবে বলে প্রশাসনের অনুমান। সেই কারণে কোনও রকম ত্রুটি না রেখে মেলাকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ ভাবে পরিচালনার জন্য আগেই বিস্তারিত নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্ন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর প্রশাসনের কাছে কার্যত একটি ‘ফাইনাল রিভিউ’। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী শেষ মুহূর্তের ঘাটতি পূরণ করেই মেলায় নামতে হবে প্রশাসনকে।