মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনে (এসআইআর) সকলের গণনা-পত্র জমা না-হওয়া পর্যন্ত তিনি নিজের ফর্ম পূরণ করবেন না বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগরে বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেসের সভা থেকেও তিনি বলেছিলেন, এখনও তিনি গণনা-পত্র জমা দেননি। তবে ওই দিনই মুখ্যমন্ত্রীর নাম চলতি এসআইআর-পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়। এক্স পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, গণনা-পত্র জমার শেষ দিনে যথাযথ ভাবে পূরণ এবং সই হওয়া ফর্ম জমা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিশন সূত্রের বক্তব্য, এটা হতেই পারে, মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় বিধি মেনে ‘এনুমারেশন’ পর্বের শেষ দিনে ফর্ম জমা করেছে।
কৃষ্ণনগরের সভা থেকেই কমিশনের পাঠানো পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, দিল্লি থেকে আসা ওই পর্যবেক্ষকেরা সপ্তাহে অন্তত দু’দিন করে রাজ্যে থাকবেন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত।
নদিয়া জেলার ওই সভা থেকেই বৃহস্পতিবারও মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল, “আমি এখনও ফর্ম পূরণ করিনি। কেন করিনি? তিন বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলাম, সাত বার সাংসদ হয়েছি। আপনাদের শুভেচ্ছায় তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি। আমাকে আজ প্রমাণ করতে হবে, আমি নাগরিক কি না!” বিজেপি নেতারা এসআইআর ফর্ম পূরণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা ও বিভ্রান্তি ছড়ানো’র অভিযোগ তুললেও নিয়ম অনুযায়ী অবশ্য এই নিয়ে বিশেষ বিতর্কের অবকাশ নেই। নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর তরফে কোনও কারণে ফর্ম জমা গা-হলেও তাঁর নাম থাকতই খসড়া ভোটার তালিকায়। কারণ, তিনি ‘মার্কড’ বা বিশেষ চিহ্নিত ভোটার। সমাজের বিশেষ কিছু ব্যক্তিত্বকে ‘চিহ্নিত’ ভোটারের তকমা দিয়ে রাখে কমিশন। ফর্ম পূরণ না-করলেও তাঁদের নাম উঠে যায় খসড়া তালিকায়। যদিও মালবীয়ের দাবি, “এসআইআর নিয়ে ভোটারদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করলেও বৈধ ভোটার হয়ে থাকার উদ্দেশ্যে ১১ ডিসেম্বর শেষ পর্যন্ত ফর্ম জমা করেছেন মমতা।”
অন্য দিকে, এ রাজ্যে পাঁচটি ডিভিশনের জন্য কেন্দ্রের পাঁচটি মন্ত্রক থেকে এক জন করে আইএএস অফিসারকে বিশেষ তালিকা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কিছু দিন আগেই। কৃষ্ণনগরের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী কারও নাম না করে বলেছিলেন, “এসআইআরের নাম করে দিল্লি থেকে বিজেপি-মার্কা কিছু লোককে পাঠানো হচ্ছে। জেলাশাসকদের উপর খবরদারি করার জন্য।” আর এ দিনই কমিশন লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এই পর্যবেক্ষকেরা সপ্তাহে অন্তত দু’দিন করে রাজ্যে থাকবেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত। তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধি, জেলাশাসক এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) সঙ্গে বৈঠক করবেন। মসৃণ, স্বচ্ছ এবং সকলের মতামত নিয়ে কাজ হচ্ছে কি না, তা লক্ষ্য রেখে পর্যবেক্ষকেরা নিশ্চিত করবেন, যাতে এক জনও যোগ্য ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়েন এবং এক জনও অযোগ্য ভোটার তালিকাভুক্ত না হতে পারেন।