Special Intensive Revision

নথি যাচাইয়ে দায়বদ্ধ করা হল জেলাশাসকদের

কমিশনের নির্দেশ—এসআইআরের শুনানি পর্বে জমা পড়া প্রতিটি নথি জেলাভিত্তিক এবং পৃথক ভাবে যাচাই করতে হবে জেলাশাসকদেরও। এ জন্য প্রত্যেক জেলাশাসককে অন্য অফিসারদের নিয়ে একটি করে দল গঠন করতে বলা হয়েছে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:২০

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন, বিশেষ রোল-পর্যবেক্ষক, ডিভিশনাল রোল পর্যবেক্ষক, সাধারণ রোল-পর্যবেক্ষক এবং মাইক্রো অবজ়ার্ভারদের পাশাপাশি জেলাশাসকেরাও নথি-যাচাইয়ের কাজে দায়বদ্ধ হলেন।

কমিশনের নির্দেশ—এসআইআরের শুনানি পর্বে জমা পড়া প্রতিটি নথি জেলাভিত্তিক এবং পৃথক ভাবে যাচাই করতে হবে জেলাশাসকদেরও। এ জন্য প্রত্যেক জেলাশাসককে অন্য অফিসারদের নিয়ে একটি করে দল গঠন করতে বলা হয়েছে।

সব ঠিক থাকলে ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে শুনানির কাজ। প্রতিটি বিধানসভায় এই শুনানি করবেন এক জন ইআরও এবং ১০ জন এইআরও। শুনানিতে ডাক পাওয়া ভোটারদের নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর যেমন দিতে হবে, তেমনই জমা করতে হবে কমিশনের তালিকাবদ্ধ নথিগুলির মধ্যে থেকে যে কোনও একটি নথি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই নথিগুলির সমান্তরাল যাচাই হবে। কমিশন বা পর্যবেক্ষকেরা যেমন সেই নথির বৈধতা যাচাই করবেন ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যম থেকে, তেমনই যে দফতর থেকে নথিগুলি সংশ্লিষ্ট ভোটারকে দেওয়া হয়েছে, সেই দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পৃথক ভাবে তার সত্যতা খতিয়ে দেখতে হবে জেলাশাসকদেরও। তাই অফিসারদের দল প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে জেলাশাসকদের কাজের সুবিধার প্রশ্নে। অভিজ্ঞ আধিকারিকদের মতে, এর ফলে দায়বদ্ধ হয়ে থাকবেন জেলাশাসকেরাও। তাঁদের রিপোর্টের সঙ্গে কমিশন বা পর্যবেক্ষকের রিপোর্টের ফারাক হলে কঠোর পদক্ষেপের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কাও রয়ে যাচ্ছে। কারণ, কমিশন লিখিত ভাবে এ-ও জানিয়ে দিয়েছে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী কোনও অসত্য নথি, জাল নথি বা সরকারি কোনও শংসাপত্র নকল করা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কমিশনের বক্তব্য, তাতে নথি যিনি জমা করছেন, তিনি যেমন দায়বদ্ধ, তেমনই দায়বদ্ধ যাচাইয়ের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরাও।

এক কর্তার কথায়, “যে দফতর যে নথিটি দিয়েছেন, তাদের থেকেই সেটির বৈধতা যাচাই করবেন জেলাশাসকেরা। অর্থাৎ, জেলাশাসককে যেমন প্রকৃত তথ্য কমিশনকে জানাতে হবে, তেমনই সংশ্লিষ্ট দফতরকেও আসল তথ্য দিতে হবে জেলাশাসককে।”

কেন এমন প্রস্তুতি?

কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে ম্যাপিংয়ের আওতায় না থাকা প্রায় ৩০.৫৯ লক্ষ ভোটার শুনানিতে ডাক পাবেনই। অর্থাৎ, ২০০২ সালের এসআইআরের সঙ্গে যাঁদের নিজেদের বা সম্পর্কের মিল নেই কোনও ভাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন মানদণ্ডে যে প্রায় ১.৩৬ কোটি ভোটারের তথ্য ছাঁকনির তলায় রাখা হয়েছে, তাঁদেরও একাংশকে শুনানিতে ডাকা হতে পারে। অন্য দিকে, চলতি পরিস্থিতিতে জেলায় জেলায় বিভিন্ন ধরনের শংসাপত্র চাওয়ার হিড়িক পড়েছে। সরকারি স্তরেও নথি তৈরি করে দেওয়ার কথা বলে দেওয়া হচ্ছে। যদিও অতীতে রাজ্য সরকারই বার বার দাবি করেছে, এত দিন ধরে চলা দুয়ারে সরকারের শিবিরগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন শংসাপত্র-সহ নথি দেওয়া হয়েছে কোটি কোটি নাগরিককে। ফলে নতুন করে নথির বিপুল চাহিদা তৈরি হওয়ার কথা নয়। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অগ্নিকাণ্ডে যে মানুষদের নথি নষ্ট হয়েছে, সেগুলি তৈরি করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত। ফলে নথি তৈরির সুযোগ যাতে অসাধু ব্যক্তিরা নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। তাই ভিন্ন ভিন্ন স্তরে নথির যাচাই জরুরি।

জেলাশাসকদের বলে দেওয়া হয়েছে, ম্যাপিংয়ের আওতায় না থাকা ভোটারদের জন্য শুনানির নোটিস শুক্রবারের মধ্যে ডাউনলোড করে ফেলতে হবে। তাই মনে করা হচ্ছে, আজ, শনিবার থেকে বিএলও-দের মাধ্যমে সেই ভোটারদের কাছে নোটিস পৌঁছোনোর কাজ শুরু হবে পুরোদমে। তাই এ কাজে ছ’দিন সময় রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন