দেড় কোটিরও বেশি ভোটারের এনুমারেশেন ফর্মের তথ্য সন্দেহজনক ঠেকছে কমিশনের। — ফাইল চিত্র।
কোথাও ভোটারের চেয়ে তাঁর বাবা বা মা মাত্র ১৫ বছরের বড়। কোথাও আবার ঠাকুরদা বা ঠাকুরমার চেয়ে ভোটার ৪০ বছরেরও ছোট নয়। মাঝে এক প্রজন্ম ব্যবধানের পরেও বয়সের ফারাক ৪০ বছরের কম। কোথাও ভোটারের সঙ্গে তাঁর বাবা-মায়ের বয়সের ফারাক ৫০ বছরেরও বেশি। আবার অনেক জায়গায় বদলে গিয়েছে বাবার নামই। এনুমারেশন ফর্মে এমন বিস্তর সন্দেহজনক তথ্য উঠে এসেছে। সেই সব তথ্য যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এনুমারেশন ফর্মে দেওয়া তথ্য কতটা সত্য, তা খতিয়ে দেখবে কমিশন।
কমিশন সূত্রে খবর, মোট ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ৪৫ হাজার ৯১১ ভোটারের তথ্যে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ওই তথ্যগুলি যাচাই করে দেখা হবে। যেমন, বহু ক্ষেত্রে ৬ জনেরও বেশি ভোটার এনুমারেশন ফর্মে বাবার নাম একই উল্লেখ করেছেন। এমন ২৪ লক্ষ ২১ হাজারেরও বেশি ভোটারকে চিহ্নিত করেছে কমিশন। বর্তমান সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষিতে এনুমারেশন ফর্মের তথ্যগুলি সন্দেহজনক ঠেকছে কমিশনের। এরা প্রত্যেকেই বৈধ ভোটার কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে সূত্রের খবর।
আবার এমনও বহু ভোটার রয়েছেন যাঁদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি, অথচ ২০০২ সালের তালিকায় তাঁদের নাম ছিল না। এমনও ২০ লক্ষ ৭৪ হাজার ভোটারকে চিহ্নিত করেছে কমিশন। এই ভোটারদের বয়স এখন যদি ৪৫ বছরও হয়, তা-ও ২০০২ সালে তাঁদের বয়স হওয়ার কথা অন্তত ২২ বছর। সে ক্ষেত্রে তাঁদের নাম কেন ওই সময়ের ভোটার তালিকায় ছিল না, তা খতিয়ে দেখতে চায় কমিশন।
বহু এনুমারেশন ফর্মে ভোটারের বাবার নামে অমিল ধরা পড়েছে। অর্থাৎ, ২০০২ সালের তালিকায় ভোটারের বাবার নাম যা ছিল, এখন তা পাল্টে গিয়েছে। এমন ৮৫ লক্ষেরও বেশি এনুমারেশন ফর্মকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর। সেগুলিরও তথ্য যাচাই করা হবে। যদিও কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে, নামের বানান ভুল থাকলে সেগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে যে সব ফর্মে উল্লেখ্যযোগ্য বদল দেখা যাচ্ছে, সেগুলিকেই মূলত যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের এক বুথে কোনও এক ভোটারের বাবার নাম ২০০২ সালের তালিকায় ছিল নিরঞ্জন। এখন তা বদলে হয়ে গিয়েছে নিরাপদ। এই ধরনের বদলগুলিকেই বেশি করে যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ১৩ লক্ষেরও বেশি ভোটারের লিঙ্গের তথ্যেও অমিল ধরা পড়েছে এনুমারেশন ফর্মে।
কমিশন সূত্রে খবর, প্রায় ১২ লক্ষের কাছাকাছি ভোটারের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, তাঁদের বয়সের সঙ্গে বাবা-মায়ের বয়সের ফারাক ১৫ বছরেরও কম। আট লক্ষেরও বেশি ভোটারের বয়স এবং তাঁদের বাবা-মায়ের বয়সের ব্যবধান ৫০ বছরেরও বেশি। আবার তিন লক্ষেরও বেশি ভোটার এমনও রয়েছেন, যাঁদের ঠাকুরদা বা ঠাকুরমার চেয়ে তাঁরা ৪০ বছরেরও কম ছোট। এই ভোটারদের এনুমারেশন ফর্মের তথ্যও যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে কমিশন।
সব মিলিয়ে মোট ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ৪৫ হাজার ৯১১ ভোটারের তথ্য যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। কমিশন নিযুক্ত বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)-এরা এই তথ্য যাচাই করার জন্য পুনরায় সন্দেহের তালিকায় থাকা এই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাবেন। সূত্রের খবর, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাইয়ের পরেও কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকলে ওই ভোটারদের কমিশনের শুনানির জন্য ডেকে পাঠানো হবে।