Humayun Kabir

নিরাপত্তা, ভিড়ে মসজিদের শিলান্যাস করলেন হুমায়ুন

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) রাশপ্রীত সিংহের নেতৃত্বে একাধিক ইনস্পেক্টর-সহ প্রায় ৭০০ পুলিশকর্মী সভাস্থলে মোতায়েন ছিলেন।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:৩২
নির্মাণসামগ্রী নিয়ে শিলান্যাসের জায়গায়।

নির্মাণসামগ্রী নিয়ে শিলান্যাসের জায়গায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

চতুর্দিকে নিরাপত্তার কড়াকড়ি। শনিবার দুপুরে তারই মধ্যে মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে সভা এবং সভামঞ্চে ফিতে কেটে প্রস্তাবিত ‘বাবরি মসজিদের’ শিলান্যাস করলেন তৃণমূলের নিলম্বিত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এ দিন সে অনুষ্ঠানে চোখে পড়ার মতো ভিড় ছিল। হুমায়ুনের অনুগামীদের দাবি, লক্ষাধিক মানুষ এসেছিলেন। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, সংখ্যাটা হাজার পঞ্চাশ। এই শিলান্যাস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছে বিজেপি। যদিও এ দিনই বহরমপুরের কাছে বিজেপির বহরমপুর সাংগঠনিক-জেলার প্রাক্তন সভাপতি শাখারভ সরকারের উদ্যোগে রামমন্দিরের শিলান্যাস হয়।

এ দিন ভোর থেকেই ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে, প্রস্তাবিত মসজিদের জমির কাছে ভিড় জমতে থাকে। শতাধিক টোটো, ট্রাক্টরে অনেকে ইট, সিমেন্ট নিয়ে যান। অনেকে মাথায় করেও ইট বয়েছেন। সভায় ধর্মীয় নেতারা ছিলেন। সভাস্থলে কোরান পাঠ হয়েছে। হুমায়ুন সভায় দাবি করেন, “শুধু বাবরি মসজিদ নয়, তার সঙ্গে একটি ৫০০ শয্যার ইসলামিক হাসপাতাল হবে, একটি মেডিক্যাল কলেজ, একটি পার্ক, একটি রেস্তরাঁ ও একটি হেলিপ্যাড গড়া হবে। এর খরচ ৩০০ কোটি টাকা।” সূত্রের দাবি, বিঘা পঁচিশ জমিতে প্রকল্প হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) রাশপ্রীত সিংহের নেতৃত্বে একাধিক ইনস্পেক্টর-সহ প্রায় ৭০০ পুলিশকর্মী সভাস্থলে মোতায়েন ছিলেন। র‌্যাফ, কমব্যাট ফোর্স যেমন ছিল, তেমনই বিভিন্ন স্টেশনে অতিরিক্ত আরপিএফ মোতায়েন ছিল। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ বলেন, “এ দিন রেজিনগরের কর্মসূচি নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে। পুলিশ ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ঠিক রেখেছিল। কোথাও জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়নি।” তবে বেলডাঙা, রেজিনগরে রাস্তায় দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত যানজট ছিল। জাতীয় সড়কেও দুর্ভোগ হয়েছে বলে দাবি নিত্যযাত্রীদের একাংশের। জেলা তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, “আদালতের নির্দেশ মতো পুলিশ কাজ করেছে।”

মুর্শিদাবাদ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে সভায় আসা জনতার হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট, জলের বোতল, চা তুলে দেন হাজার দুয়েক স্বেচ্ছাসেবক। সূত্রের দাবি, সভার আয়োজন বাবদ খরচ হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। হুমায়ুন দাবি করেছেন, “এক শিল্পপতি ৮০ কোটি টাকা দেবেন বলেছেন।” সভামঞ্চে এক জন এক কোটি টাকা মসজিদ ট্রাস্টকে দান করেছেন বলে জানানো হয়। এ ছাড়া দানবাক্সে, অনলাইনেও দান করা হয়েছে।

হুগলির পুরশুড়ায় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “মমতার আমলে ৫০০ পুলিশের নিরাপত্তায় পশ্চিমবঙ্গে আরবি, মোগল-পাঠান সংস্কৃতির বীজ পোঁতা হল। মসজিদ নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু বাবরের নামে আপত্তি আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরোক্ষ ভাবে পুলিশকে দিয়ে দিনটা পালন করেছেন।” কলকাতায় দলের ‘সংহতি দিবস’ কর্মসূচির মঞ্চ থেকে নাম না করে হুমায়ুনকে নিশানা করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনেছি। তার পরেও ধর্মীয় বিভাজনের চেষ্টা করছে বিজেপি। সহযোগিতা করছে কিছু গদ্দার আর মীরজাফর।” যদিও সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূলই বিজেপিকে ডেকে এনেছে পশ্চিমবঙ্গে। আর বিজেপির রাজনীতির ধারা মেনেই মন্দির-মসজিদের রাজনীতিতে ঢুকেছে তৃণমূল।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের মন্তব্য, “মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে তৃণমূল-বিজেপি মন্দির-মসজিদের রাজনীতির মাধ্যমে বিভাজন করতে চায়।”

নির্মাণসামগ্রী নিয়ে শিলান্যাসের জায়গায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

আরও পড়ুন