Amit Shah’s Bengal Visit

ভোটের টিকিটের জন্য তদ্বির না করে জনসংযোগে আর বুথ আগলানোয় জোর দিন, পদ্মের সাংসদ-বিধায়কদের শাহি বার্তা

জাঁকজমকপূর্ণ প্রচারাভিযান থেকে বড় মাপের সভা, সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ থেকে নিরাপত্তা, সব বিষয় তিনি সামলে নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন শাহ। আগামী দু’মাস সাংসদ-বিধায়কদের শুধু নিবিড় জনসংযোগ করতে বলেছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:০২
Intensive public outreach and arrangements for strong booth management, Shah’s instruction Bengal BJP MP-MLAs

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।

আরও একবার বুথ স্তরের প্রস্তুতিতে জোর দেওয়ার বার্তা। মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির কোর গোষ্ঠীর বৈঠকে যে বার্তা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম সর্বোচ্চ নেতা অমিত শাহ, বুধবার দলের সাংসদ-বিধায়কদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকেও সে কথাই তিনি আরও জোর দিয়ে বলেছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, জনসংযোগ বৃদ্ধি, বুথে নজর এবং নিজের এলাকার পার্শ্ববর্তী হারা আসনেও সময় দেওয়ার মতো কাজ দলীয় জনপ্রতিনিধিদের জন্য শাহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

Advertisement

নির্বাচনে টিকিট পাওয়া নিয়ে তদ্বির-তদারকি না-করার বার্তা দিয়ে গিয়েছেন শাহ। যাঁরা ভাল কাজ করেছেন, তাঁরা এমনিতেই টিকিট পাবেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। টিকিট সুনিশ্চিত করতে বার বার কলকাতায় এসে নেতাদের ধরাধরি না করে বরং এলাকায় সময় দেওয়ার বার্তা দিয়ে গিয়েছেন শাহ।

বুধবার দুপুরে সল্টলেকের একটি হোটেলে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংসদ ও বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন শাহ। দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিংহ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুভাষ সরকার, নিশীথ প্রামাণিকদের মতো প্রাক্তন সাংসদেরাও ডাক পেয়েছিলেন বৈঠকে। বিজেপি সূত্রের দাবি, নির্বাচনের আগে প্রাক্তন ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি তথা সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতির ‘দিশা’ দেখানোই ছিল শাহের লক্ষ্য। ২০২৬ সালের এপ্রিলেই নির্বাচন তথা পরবর্তী সরকার গঠনের কাজ মিটে যাবে বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেছিলেন শাহ। সে পূর্বাভাস মিলে গেলে রাজ্যে আর দু’আড়াই মাসের মধ্যেই নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। বিজেপি সূত্রের খবর, আগামী দু’মাসের জন্যই সাংসদ ও বিধায়কদের জন্য শাহ কাজের গতিপ্রকৃতি তথা পরিধি নির্ধারণ করে দিয়ে গিয়েছেন।

অমিত শাহের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির বিধায়ক, সাংসদ ও প্রাক্তন সাংসদরা। প্রথম সারিতেই রয়েছেন দিলীপ ঘোষ।

অমিত শাহের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির বিধায়ক, সাংসদ ও প্রাক্তন সাংসদরা। প্রথম সারিতেই রয়েছেন দিলীপ ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

বৈঠকে শাহের বার্তা সম্পর্কে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছুই জানাননি। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, বুথ স্তরকে আগামী দু’মাসে যত বেশি সম্ভব মজবুত করে ফেলার উপর শাহ জোর দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে ভোটগ্রহণের দিনে সব বুথে যে বিজেপি এজেন্ট বসাতে পারে না, সে তথ্য কারও কাছেই নতুন নয়। কিন্তু যত সংখ্যক বুথে এজেন্ট বসানো গিয়েছে বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হিসাব দেওয়া হয়, বাস্তব ছবি তার চেয়েও খারাপ বলে শাহের কাছে খবর পৌঁছেছে। অনেক বুথে আবার এজেন্ট বসানো গেলেও তাঁরা সারা দিন বুথে থাকেন না বলে অভিযোগ। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, বুধবারের বৈঠকে শাহ এই পরিস্থিতির নিরসনে জোর দিয়েছেন। যত বেশি সংখ্যক বুথে এজেন্ট বসাতে হবে, এজেন্টকে ভোটগ্রহণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বুথ আগলে বসে থাকতে হবে এবং ভোটকেন্দ্রে পৌঁছোনোর সব রাস্তায় বিজেপির স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান বুথ ক্যাম্প থাকতে হবে বলে বার্তা দেওয়া হয়েছে। ভোট সংক্রান্ত অন্য কোনও বিষয় সাংসদ-বিধায়কদের ভাবতে হবে না বলেও শাহ বার্তা দিয়েছেন। জাঁকজমকপূর্ণ প্রচারাভিযান থেকে বড় মাপের সভা, সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ থেকে নিরাপত্তা, সব বিষয় তিনি সামলে নেবেন বলেই আশ্বস্ত করেছেন শাহ। আগামী দু’মাস সাংসদ-বিধায়কদের শুধু নিবিড় জনসংযোগ করতে বলেছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, এখন থেকে সপ্তাহে অন্তত চার দিন সাংসদ-বিধায়করা নিজেদের এলাকায় সময় দিন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করুন, দেওয়াল লিখন শুরু করে দিন, দল যে পতাকা-ফেস্টুন-ব্যানার পাঠানো শুরু করছে, সে সব পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করুন।

এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন না-হতেও দলকে বার্তা দিয়েছেন শাহ। তৃণমূল যা-ই করুক, এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে এসআইআরের যা অগ্রগতি, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেই বিজেপি সূত্রের দাবি। রাষ্ট্রপতি শাসন বা ৩৫৫ ধারা জারি করে নির্বাচনে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই বলেও তিনি বার্তা দিয়েছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, শাহের মতে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন তৈরি। জনসংযোগ বাড়াতে পারলে আর সুষ্ঠু ভাবে ভোটগ্রহণ করানো গেলেই ফলাফল বদলে যাবে। শাহের হিসাব অনুযায়ী, গত বিধানসভা নির্বাচনে ৮০-৯০টি আসনে বিজেপির পরাজয়ের ব্যবধান এমন ছিল, যা টপকানো কঠিন নয়। এসআইআরের পরে তা আরও সহজ হবে বলে তিনি মনে করছেন। তাই অন্য সব বিষয় ভুলে গিয়ে নিজের নিজের এলাকায় এখন থেকেই ভোটের কাজে নেমে পড়তে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সিএএ প্রক্রিয়া তরান্বিত করা বা মতুয়াদের ভোটাধিকার নিয়েও ভোটের আগে কোনও পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে তিনি আভাস দিয়েছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন