Mamata- Abhishek

দেবীপক্ষে বিজেপিকে মমতার তোপ, শুভেন্দুর ডাক ‘সনাতনী ঐক্যে’র

বাংলার ‘অমর্যাদা’ এবং ঘুর পথে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করার চেষ্টার বিরুদ্ধে সরব তৃণনূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। উল্টো দিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে উঠে আসছে ‘সনাতনী ঐক্যে’র কথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৪
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্রের পুজো সংখ্যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অবসরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্রের পুজো সংখ্যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অবসরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মহালয়ার দিন নজরুল মঞ্চে। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে শেষ দুর্গা পুজোর মরসুমকে নিজের রাজনৈতিক অস্ত্রে শাণ দেওয়ার কাজেই ব্যবহার করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা-বাঙালিকে ‘হেনস্থা’, ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) করে ‘ভোট-দখলে’র অভিযোগের সূত্রেই বিজেপিকে বিঁধে দেবীপক্ষের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার ‘অমর্যাদা’ এবং ঘুর পথে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করার চেষ্টার বিরুদ্ধে সরব তৃণনূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। উল্টো দিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে উঠে আসছে ‘সনাতনী ঐক্যে’র কথা।

মহালয়ার দিন শহরের বেশ কয়েকটি পুজোর উদ্বোধন করেছেন মমতা। তাঁর বাবার জন্মস্থান বীরভূমের চাকাইপুর-সহ জেলার বহু পুজোরও ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় উদ্বোধন করেছেন মমতা। তৃণমূলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যার উদ্বোধন উপলক্ষে রবিবার নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানেও গিয়েছিলেন তিনি। মুখপত্রে বিজেপির ‘উদ্দেশ্য’ সম্পর্কে মমতা লিখেছেন, ‘দেশে বিভাজনের বীজ রোপণের পিছনে ডাবল ইঞ্জিন সরকারের বিশাল ‘গেমপ্ল্যান’ রয়েছে।’ পাশাপাশি, এসআইআরের নামে এনআরসি চালুর চেষ্টা হচ্ছে বলেও ফের দাবি করেছেন মমতা। তিনি লিখেছেন, ‘এই যে নির্বাচন কমিশনকে আনা হয়েছে, সেই কমিশন বিজেপির হয়ে এনআরসি-র খেলায় নেমেছে। বলছে, কারও বাড়িতে এক বার যাবে। গিয়ে না-পেলে নাম কেটে দেবে।’ মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘বিজেপিকে জেতাতেই (এই পরিকল্পনা) করা হয়েছে। আমরা বলি, এ সব করতে যেও না। আমরা এ সব মাথা গুঁজে মেনে নেব না!’ পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে বাংলা-বাঙালির প্রসঙ্গও তুলেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, “সব ভাষাকে সম্মান জানিয়ে বলি, বাংলা ভাষা ও বাংলা মায়ের সম্মান যেন ভূলুণ্ঠিত না হয়।”

বাংলার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিজেপিকে বিঁধেছেন অভিষেক। দলীয় মুখপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ভারতীয় বাঙালি ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে এনআরসি করতে উদ্যত হয়েছে। বিহারে নির্বাচন কমিশনের এসআইআর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এসআইআর-এর নামে নির্বাচন কমিশন যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তা সরাসরি ভারতের সংবিধানকে আঘাত করছে।’ মমতা ও অভিষেক দু’জনেই বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কয়েকটি রাজ্যে যে ‘অপ্রীতিকর পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছিল, তা নিয়েও সরব হয়েছেন।

গত কয়েক বছর ধরেই মমতা ‘রীতি মেনে’ পুজোর উদ্বোধন করেন-না বলে ফের অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। কাঁথিতে একটি ক্লাবের দুর্গাপুজো উপলক্ষে সহস্র কণ্ঠে শঙ্খধ্বনি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “কারও কথায় মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধন, সপ্তমীতে কলাবৌ স্নান, অষ্টমীতে অঞ্জলি, নবমীতে আরতি ও দশমীতে সিঁদুরখেলা, নিরঞ্জন হবে না। এক লক্ষ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে হবে না। পঞ্জিকা মেনে হবে।” তাঁর সংযোজন, “আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক ভিন্নতা, চলার পথ আলাদা হতে পারে, কিন্তু আমরা সনাতনী। কেউ কেউ বিভাজনের চেষ্টা করছেন। আমাদের ধর্মকে রক্ষা করতে হবে।”

কাঁথিতে আরএসএসের কর্মসূচিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

কাঁথিতে আরএসএসের কর্মসূচিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। — নিজস্ব চিত্র।

মমতা-সহ তৃণমূলকে বিঁধে সরব হয়েছে বিজেপি-ও। দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “কালীঘাটের মা কালী, জগন্নাথদেবে পরে এখন ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) শেষ ভরসা মা দুর্গা। তাই প্রার্থনা করছেন, এসআইআর যাতে না-হয়। কিন্তু সেটা হবেই। আর যে শাসকের হাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি পোড়ানো হয়, রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠকের ঘরে দলীয় দফতর বানানো হয়, সেই শাসকের মুখে বাংলা-বাঙালির কথা মানায় না!”

আরও পড়ুন