Suicide Rates Rising

পেশার উপকরণ আত্মহত্যার মাধ্যম!

ভগবানপুর-১ ও পাশের চণ্ডীপুর ব্লকের বহু গ্রামের বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা পরচুলা তৈরি করা। ফলে বহু বাড়িতেই পরচুলা কালো রং করার তরল মজুত থাকে।

আনন্দ মণ্ডল , গোপাল পাত্র
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫ ০৭:৪১
চলছে পরচুলা তৈরীর কাজ।

চলছে পরচুলা তৈরীর কাজ। —ফাইল চিত্র।

জীবিকা পরচুলা তৈরি করা। সেই পরচুলা রং করতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ তরল। জেলার যে সব এলাকায় এই ব্যবসা প্রচলিত, সেখানে সম্প্রতি পরচুলা রঙের তরল পান করে আত্মহত্যার ঘটনা সামনে আসছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। আর আত্মহত্যার যে পরিসংখ্যান সামনে আসছে, তাতে চিন্তিত প্রশাসন।

পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক জায়গাতেই ফুলেফেঁপে উঠছে পরচুলার ব্যবসা। গ্রামের বাড়ি-বাড়ি চুল সংগ্রহ করে সেই চুল নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে শোধন ও রং করে অন্য রাজ্য, এমনকি বিদেশেও রফতানি করা হয়। ভগবানপুর-১ ও পাশের চণ্ডীপুর ব্লকের বহু গ্রামের বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা পরচুলা তৈরি করা। ফলে বহু বাড়িতেই পরচুলা কালো রং করার তরল মজুত থাকে। ওই তরল তৈরি করা হয় ‘হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড’ ও ‘প্যারাফিনাইলেন ডায়ামিন’ নামে দু’টি রাসায়নিকের মিশ্রণে। তরলটি অত্যন্ত বিষাক্ত। বাড়িতে হাতের কাছে এমন ‘বিষ’ থাকায় পারিবারিক অশান্তি বা মানসিক অবসাদের জেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার সময় অনেকেই একে ‘হাতিয়ার’ হিসেবে বেছে নিচ্ছন বলে দাবি। ভগবানপুর ও চণ্ডীপুর ব্লকেতা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

জেলা পরিষদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি কর্মাধ্যক্ষ অপর্না ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এটা একটা সামাজিক সমস্যা। এর জন্য বাসিন্দাদের সামাজিক ভাবে সচেতন করার প্রয়োজন। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করা হবে।’’ চণ্ডীপুরের বিডিও শাশ্বত প্রকাশ লাহিড়ী বলেন,‘‘এবিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হবে।’’

শুধুমাত্র ভগবানপুর থানা এলাকায় গত এক বছরে মোট ৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে পরচুলা রং করার তরল পান করে। এর মধ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধান নবনীতা কুইলি বর্মণ ( ৩৩) রয়েছেন। তদন্তে উঠে এসেছিল, পারিবারিক অশান্তির জেরে মানসিক অবসাদে তিনি ওই পদ্ধতিতেই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন।

একই ভাবে গত ২০ জুন চণ্ডীপুরের পায়রাচালি গ্রামের স্কুল পড়ুয়া ১৭ বছরের কিশোরী মমতা দাস অধিকারীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল পরচুলা রং করার তরল পান করার জেরে। ওই কিশোরীও আত্মহত্যা করেছিল বলে অভিযোগ। ২১ জুন ভগবানপুরের সুবোধপুর গ্রামের সুলেখা শীট (৩৭) পরচুলা রং করার তরল পান করে মারা যান। ১ জুলাই চণ্ডীপুরের জালপাই এলাকার হিঞ্চি গ্রামের মলয় মাইতির ( ২৬) মৃত্যু হয়েছিল পরচুলা রং করার তরল খেয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রেমের সম্পর্কে আঘাত পাওয়ার পরে তিনি ওই ভাবে আত্মঘাতী হয়েছেন।

চণ্ডীপুর ব্লকের জালপাই গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান অনিমেষ দাস বলেন,‘‘পরচুলা রং করার তরল পান করে কয়েক দিনের ব্যবধানে আমাদের এলাকায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের একজন স্কুল পড়ুয়া কিশোরী, অন্যজন যুবক। এ ধরনের ঘটনা রুখতে এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানানো হবে।’’

আরও পড়ুন