এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
বছর খানেক আগে এক নাবালক পালিয়ে গিয়ে পড়শি নাবালিকাকে বিয়ে করেছিল। বর্তমানে বছর পনেরোর ওই নাবালিকা দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ঘটনার খবর পেয়ে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের শিশু কল্যাণ কমিটি (চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি) ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে একটি হোম পাঠিয়েছে। ওই নাবালিকার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই নাবালককে মুর্শিদাবাদের একটি থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ওই নাবালকের বিরুদ্ধে বাল্য বিবাহ রোধ আইন এবং ৬ পকসো ধারায় মামলা করা হয়েছে। সেও জেলার একটি আদালতের নির্দেশে হোমে রয়েছে।
অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকাকে উদ্ধারের পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, জেলায় বাল্য বয়সে মা হচ্ছে কত সংখ্যক নাবালিকা? মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় নাবালিকা মায়ের হার ২৫-২৭ শতাংশ। সাড়ে এগারো বছরের নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে মুর্শিদাবাদে। আর নাবালিকা বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া রুখতে উদ্যোগী হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামের ১৬ বছর বয়সি এক কিশোর এবং তারই পড়শি ১৫ বছর বয়সি কিশোরীর সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। ওই ঘটনা সম্প্রতি জানতে পারার পরে গত শনিবার গ্রামে গিয়ে শিশু কল্যাণ কমিটির সদস্যেরা ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে পুরো ঘটনা কিশোরীর মাকে তাঁরা জানান। রবিবার কিশোরীর মা জেলার একটি থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বাল্য বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া মানে মা ও শিশু উভয়েই স্বাস্থ্যের দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়বে। নাবালিকা বয়সে মা হলে মা ও শিশু অপুষ্টিতে ভুগবে, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’’
সম্প্রতি রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বহরমপুরে এসেছিলেন। মুর্শিদাবাদে একটা বড় অংশের নাবালিকা মা হচ্ছে। সদ্যোজাত শিশু ও মায়ের মৃত্যুও হচ্ছে। সে বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে শশী পাঁজা বলেছেন, ‘‘এ সব রুখতে মুখ্যমন্ত্রী কন্যাশ্রী প্রকল্প এনেছেন। মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। যার জেরে এখন ৯৯ শতাংশ হাসপাতালে সন্তান প্রসব করছেন। মা ও শিশু মৃত্যুর হার এ রাজ্যে কমেছে। অন্য দিকে ডবল ইঞ্জিন সরকারের (পড়ুন বিজেপি শাসিত) রাজ্যের রিপোর্ট দেখুন, সে দিকের অবস্থা কতটা ভয়াবহ। ডবল ইঞ্জিন সরকার নারীদের সম্মান দিতে চায় না, নারীদের ক্ষমতায়ন করতে চায় না।’’
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) চিরন্তন প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমরা বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে নানা পদক্ষেপ করছি। নাবালিকা বিয়ে রুখতে বিভিন্ন সরকারি দফতর, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করা হয়েছে। বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে পারলেই বাল্য বয়সে মা হওয়া বন্ধ করা যাবে। আমরা সেই চেষ্টা চালাচ্ছি।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা শিশু কল্যাণ কমিটি (চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির) চেয়ারম্যান সোমা ভৌমিক বলেন, ‘‘বাল্য বয়সে মা হওয়া আটকাতে আমরা সকলে মিলে বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে মাঠে নেমেছি।’’
জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক অর্জুন দত্ত বলেন, ‘‘সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।’’