Mamata Banerjee on SIR

বিধানসভা ভোটে নতুন স্লোগান মমতার, ‘ফাটাফাটি খেলা’! আহ্বান জানালেন ‘শক্তিশালী’ হয়ে ঘোরার, দুষলেন এআই-কে

রবিবার দলের সাংগাঠনিক বৈঠকে অভিষেক শুনানি পর্বে বিএলএ-দের উপস্থিতির বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে সংঘাতের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন। সোমবার দেখা গিয়েছিল বিএলএদের প্রবেশাধিকারের দাবিতে চুঁচুড়া, ধনেখালির মতো এলাকায় তৃণমূল বিধায়কেরা গিয়ে প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৫
বরজোড়ার জনসভায় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বরজোড়ার জনসভায় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফায় ৫৮ লক্ষের বেশি নাম বাদ পড়েছে। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার বরজোড়ার সভা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে এই নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। মমতার এ-ও দাবি, বিজেপির আইটি সেলের এক জন নির্বাচন কমিশনে বসে ‘সবটা’ করছেন।

Advertisement

তৃণমূলের বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, পূর্ব বর্ধমান এবং দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সভা ছিল বড়জোড়ায়। সেই মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘এআই দিয়ে এসআইআরে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির আইটি সেলের এক জন এটা করাচ্ছেন। রাজ্যের আধিকারিকেরা কিছু জানতেই পারছেন না। এটা একটা বড় কেলেঙ্কারি।’’ মমতা কারও নাম করেননি। তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গত শনিবার যে ভাবে কমিশনের ডিজি আইটি সীমা খন্নাকে নিশানা করেছিলেন, ইঙ্গিতে মমতাও তাঁকেই বিঁধতে চেয়েছেন বলে অভিমত তৃণমূলের অন্দরে।

এসআইআরের শুনানি পর্বে আবালবৃদ্ধবনিতার হয়রানি নিয়ে ফের সরব হয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘কাউকে বাদ দিচ্ছে না। বয়স্কদের ডেকে নিয়ে তিনতলায় তুলছে! এরা নিজেদের বাবা-মাকে সম্মান করতে পারে না। তাই বয়স্কদেরও কোনও সম্মান নেই।’’ এসআইআরের আতঙ্কে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের নামে জেলায় জেলায় শহিদবেদি গড়ার ডাকও দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। মমতা বলেছেন, ‘‘যে ৫৮-৬০ জন মানুষ মারা গিয়েছেন, তাঁদের নামে জেলায় জেলায় শহিদবেদি হবে। আর নীচে লেখা থাকবে, দায়ী নির্বাচন কমিশন এবং ভ্যানিশ কুমার (নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে কটাক্ষ করে এই নামে ডাকছেন মমতা)।’’

মঙ্গলবারের সভা থেকে আরওর এক বার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশকে আক্রমণ করেছেন মমতা। এসআইআর শুরুর আগে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিষেক প্রশ্ন তুলেছিলেন জ্ঞানেশের কন্যা ও জামাতার প্রশাসনে নিয়োগ নিয়ে। জ্ঞানেশের কন্যা হরিয়ানার একটি জেলার জেলাশাসক এবং জামাতা উত্তরপ্রদেশের জেলাশাসক। মমতা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আপনি (জ্ঞানেশ) তো নিজের পরিবার গোছানোর জন্য বিজেপির দালালি করছেন। যে দিন বিজেপি থাকবে না, সে দিন কী হবে?’’

রবিবার দলের সাংগাঠনিক বৈঠকে অভিষেক শুনানিপর্বে বিএলএ-দের উপস্থিতির বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে সংঘাতের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন। সোমবার দেখা গিয়েছিল বিএলএ-দের প্রবেশাধিকারের দাবিতে চুঁচুড়া, ধনেখালির মতো এলাকায় তৃণমূল বিধায়কেরা গিয়ে প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার মমতা বলেন, এসআইআরের শুনানিকেন্দ্রের বাইরে দলের বিএলএ-দের ক্যাম্প করে থাকতে হবে। পাশাপাশি মমতা এই প্রশ্নও তুলেছেন যে, কেন শুনানিকেন্দ্রের ভিতরে বিএলএ-দের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না? তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপির নিজেদের কোনও লোক নেই (সাংগঠনিক ভাবে) বলেই কোনও দলের বিএলএ-দেরই ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা তো বলছি, সকলকেই ঢুকতে দাও। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস— সব দলের লোক থাকুক। রাজনৈতিক দলগুলোকে কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে?’’

দলের নেতা-কর্মীদের আপাতত সব ছেড়ে এসআইআর এবং ভোটের কাজে মন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘এখন সব পিকনিক, উৎসব বন্ধ। এখন একটাই উৎসব। সেটা গণতন্ত্রকে বাঁচানোর উৎসব।’’ ২০২১ সালের ভোটের আগে তৃণমূলের অন্যতম স্লোগান ছিল ‘খেলা হবে’। এ বারের ভোটে সেই খেলার নতুন নামকরণও করে দিলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘এ বারও খেলা হবে। সেই খেলার নাম হবে ফাটাফাটি। ফাটাফাটি খেলা হবে। কেউ ভয় পাবেন না। দলের কর্মীরা আমাদের সম্পদ। তাঁদের বলব, শক্তিশালী হয়ে ঘুরুন।’’

এসআইআর নিয়ে যে ‘হেনস্থা’ হচ্ছে, তার প্রতিবাদে সকলকে রাস্তায় নামতেও আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। বিশেষ করে আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনদের। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা জাগুন। বিজেপি জন জাগরণকে ভয় পায়।’’

সল্টলেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাংবাদিক বৈঠকের আধঘণ্টার মধ্যেই বড়জোড়ায় সভা শুরু করেন মমতা। অধিকা‌শ সময় জুড়েই শাহের তোলা অভিযোগগুলির জবাব দেন তৃণমূলনেত্রী। তার পরে শাহের উদ্দেশে বলেন, ‘‘ভোটের আগে আরও আসবেন। তখন নাড়ু খাওয়াব। নারকেল নাড়ু, তিলের নাড়ু, বাংলায় অনেক নাড়ু পাওয়া যায়। এক দিকে নাড়ু, আর অন্য দিকে মা-বোনেদের হাতে থাকবে....!’’ মমতা না-বললেও জনতার মধ্য থেকে আওয়াজ ওঠে ‘ঝাড়ু’!

Advertisement
আরও পড়ুন