—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নিয়ম ভেঙে হোটেল-রিসর্ট তৈরির অভিযোগ ছিলই। সেই মন্দারমণির সাগরপাড়ে এ বার বাংলো এবং স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির বিজ্ঞাপনে নতুন করে বিতর্ক বাধল। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ইউনুস রিশিন ইসমাইল শনিবার বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভূমি দফতরকে।’’
উপকূল বিধি (কোস্টাল রেগুলেশন জ়োন বা সিআরজ়েড অ্যাক্ট) উড়িয়ে মন্দারমণির সৈকতে বেআইনি ভাবে গড়ে ওঠা ১৪৪টি হোটেল ভাঙতে ২০২২ সালের ২ মে নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। তিন বছরেও তা কার্যকর হয়নি। তা নিয়ে হাই কোর্টে মামলা চলছে। এরই মধ্যে মন্দারমণির সমুদ্র তীরবর্তী যে অংশে বাণিজ্যিক নির্মাণ নিষিদ্ধ, সেই ‘নো ডেভেলপমেন্ট জ়োন’-এ ফ্ল্যাট-বাংলো তৈরির উদ্যোগ হচ্ছে কী ভাবে, প্রশ্ন উঠেছে।
রামনগর-২ ব্লকের কালিন্দী পঞ্চায়েতের সোনামুই, মন্দারমণি, দাদনপাত্রবাড়, সিলামপুর এবং দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর মৌজা ‘নো ডেভেলপমেন্ট জ়োন’ হিসাবে চিহ্নিত। সিআরজ়েড আইন অনুসারে, সেখানে ৯ মিটারের বেশি উঁচু নির্মাণ করা যায় না। বাণিজ্যিক স্বার্থে নির্মাণ করতে হলে কেন্দ্রের ‘কোস্টাল জ়োন ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’র অনুমতি নিতে হয়। অথচ, সেই সোনামুই মৌজায় ফ্ল্যাট-বাংলো বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।
কলকাতার বেলেঘাটার ঠিকানার একটি সংস্থার তরফে দেওয়া ওই বিজ্ঞাপনে এই প্রকল্পে হোটেল এবং বাংলোর জন্য প্লটে জমি ও স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির কথা বলা হয়েছে। জমির দাম ৮ লক্ষ টাকা কাঠা। আর ১৬ লক্ষ টাকা থেকে শুরু হচ্ছে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। সে বিজ্ঞাপন সমাজমাধ্যমেও ছড়িয়েছে।
তবে বিজ্ঞাপনে দেওয়া সংস্থার নম্বরে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বেজে গিয়েছে। কালিন্দী পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের রুকসানা পারভিনের দাবি, ‘‘এ সম্পর্কে কিছু জানি না। মন্দারমণির ওই পাঁচটি মৌজায় ব্যক্তিগত ছোট বাড়ি ছাড়া, কোনও নির্মাণ করা যায় না।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) বৈভব চৌধুরীর কথায়, ‘‘সৈকতের ধারে নির্মাণকাজে নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সেখানে বাংলো-ফ্ল্যাট কী ভাবে হচ্ছে, খতিয়ে দেখা হবে।’’
সম্প্রতি রাজ্যসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য মন্দারমণির বেআইনি হোটেল ভাঙা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে কেন্দ্রীয় পরিবেশ এবং কৃষি দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংহ জানান, আইনি জটিলতায় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা যায়নি। সেই মন্দারমণিতে বাংলো-ফ্ল্যাট তৈরি নিয়ে শমীকের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল সরকার প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেটা ডুয়ার্স হোক মন্দারমণি কিংবা পাহাড়, চা-বাগান। সরকারের অলিখিত মদতে সব হচ্ছে।’’ রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি বলেন, ‘‘হোটেল ভাঙার বিষয়ে আদালত যা বলবে, তেমন হবে। তবে ফ্ল্যাটের বিষয়টিজানা ছিল না।’’