হুমায়ুন কবীরের বাবরি-কর্মসূচির জেরে মুর্শিদাবাদে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ল জাতীয় সড়কের একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।
পূর্বঘোষণা মতোই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদের শিলান্যাস করলেন হুমায়ুন কবীর। কিন্তু সাসপেন্ড হওয়া এই তৃণমূল বিধায়কের শিলান্যাস কর্মসূচির জেরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ল ১২ (আগেকার ৩৪) নম্বর জাতীয় সড়ক।
শনিবার সকাল ১১টার পরেই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বড়ুয়া মোড় থেকে রেজিনগর পর্যন্ত জাতীয় সড়কে যান চলাচলের গতি থমকে যায়। বেলা গড়াতেই রাস্তার কলকাতামুখী লেনে পর পর দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়িগুলি। তুলনায় শিলিগুড়িমুখী লেনে যানজট কম রয়েছে। তবে ওই লেন ধরেও খুব ধীর গতিতে গাড়ি এগোচ্ছে। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সন্ধ্যার আগে জাতীয় সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বাবরি মসজিদের শিলান্যাস কর্মসূচি যেখানে হয়েছে, সেই
জায়গাটি জাতীয় সড়ক থেকে খুব বেশি দূরে নয়। মেরেকেটে ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার। তাই সড়কপথে
ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন বহু মানুষ। জাতীয় সড়কের ধার বরাবর বহু গাড়ি দাঁড়িয়ে
পড়ে। পিছনের গাড়িগুলি দাঁড়িয়ে পড়ায় অনেকে প্রায় সাত-আট কিলোমিটার পায়ে হেঁটে
সভাস্থলে পৌঁছোন। জাতীয় সড়কের পার্শ্ববর্তী কৃষিজমিগুলির উপর দিয়ে অনেকে সভাস্থলে
পৌঁছোনোর চেষ্টা করেন। জাতীয় সড়ক ধরে অনেককে মসজিদ
নির্মাণের জন্য মাথায় ইট নিয়ে আসতেও দেখা যায়। পরিস্থিতি আঁচ করে আগেই বহু গাড়িকে
পলাশি থেকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তার পরেও অবশ্য যানজট পুরোপুরি সামাল
দেওয়া যায়নি।
হুমায়ুনের কর্মসূচি শেষ হয়ে যাওয়ার পর মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার সানি রাজ বলেন, ‘‘ভিড় হয়েছে। তবে জাতীয় সড়ক স্তব্ধ হয়ে যায়নি। বিভিন্ন যানের গতি স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখানে একটা রেলব্রিজের কাজ হচ্ছে। সেই কারণে চার লেনের রাস্তার দুটো বন্ধ ছিল। দুটো দিয়ে গাড়ি চলাচল করছিল বলে আমাদের পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে আমাদের সমস্ত চেষ্টা সফল হয়েছে।’’
অন্য দিকে, মসজিদের শিলান্যাসের আগে বিধায়ক বলেছিলেন, কোনও রাজনীতির কথা হবে না। কেবল ধর্মীয় কার্যকলাপ হবে শনিবার। কিন্তু মঞ্চে হল ঠিক তার উল্টো। বস্তুত, হুমায়ুনের বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়ে থাকল রাজনীতি। ভাষণ হল মমতাময়। সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে হুমায়ুন বলেন, ‘‘ক্রমেই মুসলিম প্রার্থী কমিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ৯০টি সংখ্যালঘু প্রধান আসনে মুসলিম প্রার্থীদের জেতান।’’ মসজিদের শিলাান্যাস অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দেগে বলেন, ‘‘২০১১ সালে তৃণমূলের ৬৭ জন সংখ্যালঘু বিধায়ক ছিলেন। ২০১৬-তে সেটা কমিয়ে ৫৭ জন করা হয়। আর ২০২১ সালে সেটা আরও নামিয়ে ৪৪ জন করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, আগামী ২২ ডিসেম্বর তিনি নিজের নতুন দল ঘোষণা করবেন। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিনি ৯০টি আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থীদের দাঁড় করাবেন।