Matua

মতুয়া-প্রশ্নেও খোঁচা, মোদী ‘পালিয়েছেন’, নিশানা তৃণমূলের

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মতুয়া-সহ হিন্দু শরণার্থীদের বিষয়ে যথেষ্ট ভেবেছেন। তাঁর বক্তব্যেও একাধিক বার বক্তব্যে মতুয়াদের বিষয় এসেছে। (‌‌‌‌ভোটার তালিকায়) সবার নাম থাকবে। উনি আশ্বস্ত করেছেন।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:২০
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রক্রিয়া চলাকালীন শনিবার রাজ্যে এসে ‘মহাজঙ্গলরাজ’, অনুপ্রবেশ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে ফের নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর সঙ্গেই, রাজ্যবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ফের আহ্বান, বাম আমলের পরে তৃণমূলকেও এত দিন দেখা হয়েছে। বিজেপিকে ‘এক বার সুযোগ’ দিলে দ্রুত উন্নয়ন হবে। এর পাল্টা হিসাবে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, বাঙালি-আবেগের মতো বিষয়কে সামনে এনেছে তৃণমূল। মোদীর বক্তব্যকে নিশানা করেছে সিপিএম, কংগ্রেসও।

তৃণমূল এ দিন সব থেকে বেশি খুঁচিয়ে তুলেছে মতুয়া-প্রশ্ন। যদিও সিএএ-র কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মোদী পরে বলেছেন, ‘ওঁরা (মতুয়ারা) তৃণমূলের দয়ায় এই দেশে নেই।’ তবে এর আগেই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা মতুয়া-সমাজের অন্যতম নেত্রী মতুয়া ঠাকুর বলেছেন, “এসআইআর-আবহে মতুয়ারা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মতুয়ারা ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রী বড় আশ্বাস দেবেন। প্রধানমন্ত্রী এসে মতুয়া-গড়ে আরও আগুন জ্বালানোর জায়গা তৈরি করে দিলেন। মতুয়াদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়বে।” পাশাপাশি, মতুয়া-সমাজের বিজেপির নেতা, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) আবেদন করার শিবিরের নামে টাকা তোলার অভিযোগও করেছেন মমতা। এরই মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার হেলেঞ্চায় বিজেপির বিরুদ্ধে মতুয়াদের প্রতারণা করার অভিযোগ তুলে অজ্ঞাত পরিচয় কেউ বা কারা পোস্টার সাঁটিয়েছেন।

পক্ষান্তরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মতুয়া-সহ হিন্দু শরণার্থীদের বিষয়ে যথেষ্ট ভেবেছেন। তাঁর বক্তব্যেও একাধিক বার বক্তব্যে মতুয়াদের বিষয় এসেছে। (‌‌‌‌ভোটার তালিকায়) সবার নাম থাকবে। উনি আশ্বস্ত করেছেন।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও বলেছেন, “কোনও হিন্দু উদ্বাস্তুর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে না।” মমতার সিএএ-বিরোধিতার জন্যই এত দিন মতুয়াদের একাংশ নাগরিক হননি বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও।

বিহার-জয়ের পরে মোদী বলেছিলেন, গঙ্গা বিহার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসে। সে কথা আবার বলে মোদী এ দিন ফের পশ্চিমবঙ্গ-জয়ের ‘রাস্তা’র কথা বলেছেন। যদিও ২০২০-তে বিহারের পরে ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পাল্টা বলেছেন, “বিহারে গঙ্গা বয়ে যাওয়ার সময়ে আবর্জনা সঙ্গে নেয়! আর পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময়ে বিজেপি নামের আবর্জনা তলিয়ে যায়! বাঙালিকে বঙ্গালি বলেন (‌মোদী)। বাংলা ভাষাটা এখনও রপ্ত হয়নি। তাই বাংলা দখল করার দুঃস্বপ্নটা বেশি হয়ে যাচ্ছে।” পাশাপাশি, কেন্দ্রের থেকে পশ্চিমবঙ্গের ১ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ‘প্রাপ্য’ রয়েছে বলে ফের বঞ্চনার অভিযোগেও শাণ দিয়েছেন চন্দ্রিমা।

পশ্চিমবঙ্গে ‘মহাজঙ্গলরাজে’র অভিযোগ করার পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারীদের স্বার্থে তৃণমূল এসআইআর বিরোধিতা করছে বলে সরব হয়েছেন মোদী। তবে বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যের নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, “দেশে বিজেপির জঙ্গলরাজ। পশ্চিমবঙ্গ স্বর্গোদ্যান। রাজ্যের মানুষ উন্নয়নের মধ্যে সুরক্ষিত।” তাঁর সংযোজন, “যত বার ওঁর মুখে অনুপ্রবেশ বেরোবে, তত বার তা আটকানোর দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলা উচিত। এসআইআর-এর বাদের তালিকাতেও অনুপ্রবেশকারীর কথা লেখা নেই কেন?” এর পাশাপাশি আবহওয়ার কারণে নদিয়ার তাহেরপুরে মোদীর হেলিকপ্টার নামতে না-পারলেও, পুরো বিষয়টিকে ‘পালানো’ বলেছে রাজ্যের শাসক দল। মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও স্টেডিয়ামে (যুবভারতী-কাণ্ডে) পৌঁছতে না পারলে, সেটাকে পালাচ্ছেন বলা হয়। এটা পালানো নয়? অন্য জায়গায় নামতে পারতেন না?” পুরো বিষয়টিকে ‘ভগবানের মার’ বলেছেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা!

মোদী ত্রিপুরায় বাম আমলের ‘অপশাসনে’র অভিযোগও তুলেছেন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এর পাল্টা বলেছেন, “আসলে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে যথাক্রমে বিজেপি ও তৃণমূলের শাসন যে একই, সেটা মানুষ বুঝেছেন। এত দিন বামেদের কথা উল্লেখ করার দরকার হত না। এখন বোধহয় প্রধানমন্ত্রী বুঝছেন,বামেদের প্রাসঙ্গিকতাকে বাদ দিয়ে দেশ ও রাজ্য এগোতে পারে না!” মোদীর এই সফরকে নিশানা করেছে কংগ্রেসও। দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী ভোটের শিল্পী! এখানে ভোটের রাজনীতি করতে আসেন। রাজ্যের মানুষের ভাল-মন্দের কোনও সম্পর্ক নেই।”

আরও পড়ুন