Flood Situation In Bengal

কত জল ছেড়েছে ডিভিসি? রাজ্যসভায় লিখিত জবাব দিল কেন্দ্র, তৃণমূলের অভিযোগ: তথ্য গোপন করছে মোদী সরকার

জলশক্তি মন্ত্রকের কাছে তৃণমূলের ঋতব্রত চারটি প্রশ্নের জবাব চেয়েছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, ডিভিসি কি ২৭ হাজার লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে? রাজ্যের সঙ্গে কি আলোচনা করেছিল ডিভিসি?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৫ ১৪:০৮
Flood situation In Bengal

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ডিভিসি ও বিজেপিকে তোপ দাগল তৃণমূল সরকার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

টানা বৃষ্টি এবং ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলির আরামবাগ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল পরিদর্শন করে অভিযোগ তুলেছেন দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-এর বিরুদ্ধে। ফলে বাংলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আবার কেন্দ্র ও রাজ্যের সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে। এই আবহে রাজ্যসভায় কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, দু’মাসের জায়গায় গত ২৮ দিনে ডিভিসি কত জল ছেড়েছে, সেই হিসাব দিয়েছে কেন্দ্র। তা ছাড়া জল ছাড়ার সময় ডিভিসি কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেছিল কি না, তার স্পষ্ট জবাব দিতে পারেনি কেন্দ্র। ক্ষুব্ধ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এটা ‘ম্যান মেড বন্যা।’ কৌশলে তথ্য চেপে গিয়েছে বিজেপি সরকার।’’

Advertisement

জলশক্তি মন্ত্রকের কাছে তৃণমূলের ঋতব্রত চারটি প্রশ্নের জবাব চেয়েছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, গত ১৮ জুন থেকে এ পর্যন্ত ডিভিসি কি ২৭ হাজার লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তা-হলে জল ছাড়ার আগে কি রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ? যদি আলোচনা হয়ে থাকে, তার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হোক এবং শেষ প্রশ্ন ছিল, যদি আলোচনা না-করে জল ছাড়া হয়, তার কারণ কী?

ঋতব্রতের প্রশ্নের লিখিত জবাব দিয়েছেন জলশক্তি মন্ত্রকের মন্ত্রী সি আর পাতিল। গত ১৮ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার হিসাব দেন তিনি। জানানো হয়, মোট ২৭, ৯৮৭ লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে ডিভিসি। এর পর কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। ওই কমিটিতে রয়েছেন ‘রিভার ম্যানেজমেন্ট’, ‘সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন’ (সিডব্লিউসি)-র সদস্যেরা। সেই কমিটিতে আছেন ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডে পানীয় জল, সেচ, নৌ ব্যবস্থা এবং শিল্পে সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য ডিভিআরআরসি-র নির্দেশ মাফিক কাজ করে ডিভিসি। ডিভিআরআরসি নিয়ম মেনে এবং বিজ্ঞানসম্মত ভাবে উপায়ে কাজ করে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পরিচালনার কাজ হয়ে থাকে।

কেন্দ্রের এই জবাবে সন্তুষ্ট নন ঋতব্রত। তিনি জানান, তাঁদের প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দেননি কেন্দ্র। আলোচনা হয়েছে কি না এবং কী আলোচনা হয়েছে, তার কোনও উত্তরই নেই কেন্দ্রের কাছে! তিনি বলেন, ‘‘সারা দেশে বাংলা বিরোধী পরিবেশ তৈরি করেছে বিজেপি সরকার। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ডিভিসি বাংলাকে ডুবিয়েছে। আমি প্রশ্ন করেছিলাম, ডিভিসি কত জল ছেড়েছে? ওরা জবাবে জানিয়েছে এক মাসের ভিতরে ২৭, ৯৮৭ লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছাড়া হয়েছে। আমরা বলছি, দু’মাসে (জুন-জুলাই) ৫০ হাজার ২৮৭ লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে ডিভিসি। ২০২৩ সালের সঙ্গে তুলনা করলে ডিভিসি-র জল ছাড়ার পরিমাণ ৩০ গুণ। ২০২৪ সালের সঙ্গে তুলনা করলে ১১ গুণ।’’

ঋতব্রতের আরও দাবি, ‘‘আলোচনা হয়েছে কি না,সেই প্রশ্নের জবাব দেয়নি জলশক্তি মন্ত্রক। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছুই বলেনি তারা। শুধু বলেছে কমিটি রয়েছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কমিটি রয়েছে আমরাও জানি। কিন্তু কমিটি থাকলেই কি আলোচনা হয়? এখন কায়দা করে শুধু ২৮ দিনের জল ছাড়ার পরিমাণের কথা বলা হচ্ছে।’’ তিনি ডিভিসি-কে দায়ী করে বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে ফসল ধ্বংস হয়েছে। মানুষ পথে বসেছে। বাংলাকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য ডিভিসি ষড়যন্ত্র করেছে। এটা ‘ম্যান মেড ডিজ়াস্টার’। বিজেপি ডিভিসি-কে দিয়ে জল ছেড়েছে। জল যখন ছেড়েছে, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে বাংলার মানুষের জলের তোড়ে বিজেপির রাজনৈতিক ভাবে সলিল সমাধি অনিবার্য।’’

Advertisement
আরও পড়ুন