SSC Job Loss Teachers' Protest

‘পার্ট টাইম’ নয়, ৬০ বছর বয়স পর্যন্তই চাকরি করতে চাই! শীর্ষ আদালতে সাময়িক স্বস্তির পরেও বলছেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা

শিক্ষকদের একাংশ চাইছেন আন্দোলন জিইয়ে রাখতে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চের নির্দেশের পরে এমনই অভিমত উঠে আসছে আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাংশ থেকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৩৫
রাস্তায় বসে আন্দোলনে  চাকরিহারা শিক্ষকেরা।

রাস্তায় বসে আন্দোলনে চাকরিহারা শিক্ষকেরা। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারাদের একাংশের চাকরি থাকছে। শীর্ষ আদালতের এই রায়কে সাময়িক স্বস্তি হিসাবে ব্যাখ্যা করছেন এসএসসির ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। তবে এই নির্দেশে তাঁরা পুরোপুরি সন্তষ্ট নন বলেও জানাচ্ছেন। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত চাকরি বহাল থাকবে বা বেতন মিলবে— এমনটা চাইছেন না তাঁরা। আন্দোলনরত শিক্ষকদের কারও কারও বক্তব্য, এই সমস্যার একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন, যাতে তাঁরা ৬০ বছর বয়স পর্যন্তই সসম্মানে স্কুলে শিক্ষকতা করতে পারেন। তাঁরা চাইছেন আন্দোলন জিইয়ে রাখতে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চের নির্দেশের পরে এমনই অভিমত উঠে আসছে আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাংশ থেকে। তবে এই মতামত শেষ পর্যন্ত ‘সর্বসম্মত’ হবে কি না, তা বলার সময় এখনও আসেনি। আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

Advertisement

আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠন ‘যোগ‍্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের সময় শীর্ষ আদালত চত্বরেই ছিলেন। বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠকের সময়েও তিনি উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মতে, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ একটি কৌশলগত সাফল্য তো বটেই। আমরা কাজ চালিয়ে যেতে পারব। বেতনটা পাব। এটি প্রাথমিক ভাবে কিছু দিনের জন্য স্বস্তি। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেতন পাব বা চাকরি থাকবে, এটা আমরা মেনে নেব না। আমরা চাই অবসর গ্রহণের সময় পর্যন্ত চাকরি করতে। আমরা এটি রিভিউয়ের (পুনর্বিবেচনার) জন্য যাব (আবেদন করব)।” আগামী দিনে আন্দোলন জারি থাকবে কি না, সে বিষয়েও আজই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে দাবি চিন্ময়ের।

আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুল্লা আল মঞ্জুম এখন দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরছেন। তিনি বলেন, “আমাদের রাস্তার আন্দোলন বন্ধ হবে না। আমরা ছ’মাসের জন্য (চাকরি) পেয়েছি। কিন্তু ছ’মাসের জন্য (চাকরি) পাওয়াটা তো কথা নয়! এসএসসিকে বলা হয়েছে ৩১ মে’র মধ্যে হলফনামা দিতে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আমরা কোনও মতেই নতুন পরীক্ষা দেব না। রাজ্য সরকার কী তথ্য-প্রমাণ দেবে, সেটি রাজ্য সরকারকেই ভাবতে হবে।” যদিও রাস্তায় থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত যে সর্বসম্মত ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, তা-ও জানিয়েছেন মঞ্জুম। আন্দোলনরত ওই শিক্ষকের বক্তব্য, “বেতন বন্ধ হলে আমাদের আন্দোলন করতে কিছুটা হলেও সমস্যা হত। সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা সুবিধা হল। কিন্তু এটি আমাদের দাবি নয়। লক্ষ্যও নয়। এমন নয় যে ছ’মাসের জন্য ‘পার্ট টাইম’ ভাবে আমরা স্কুলে গেলাম। আমরা আমাদের পুরনো চাকরি সসম্মানে ফেরত চাই।”

এসএসসির প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-এর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন চাকরিহারারা। ওই সময় কসবাতেও ডিআই অফিসের সামনে বিক্ষোভ চলছিল। সেখানে এক আন্দোলনকারীর পেটে লাথি মারতে দেখা গিয়েছিল কলকাতা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর রিটন দাসকে (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)। লাথিটি লেগেছিল আন্দোলনকারী শিক্ষক অমিত ভুঁইয়ার গায়ে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে সাময়িক স্বস্তি হিসেবে দেখছেন তিনিও। তবে অমিতেরও বক্তব্য, তাঁদের চাকরি ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিলের (ওই দিন হাই কোর্ট চাকরি বাতিলের রায় দিয়েছিল) আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সাময়িক স্বস্তি মিললেও কোনও স্থায়ী সমাধান মেলেনি। স্থায়ী সমাধান না-পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে তিনিও।

২০১৬ সালের এসএসসির গোটা নিয়োগপ্রক্রিয়াই গত বছর বাতিল করে দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চও চাকরি বাতিলের রায়ই বহাল রেখেছে। ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে নতুন করে আবেদন করেছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদের আর্জি ছিল, রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে যাঁরা ‘দাগি’ বা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ নন, আপাতত তাঁদের চাকরি বহাল থাক। ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘দাগি’ (টেন্টেড) নন এমন শিক্ষকেরা আপাতত স্কুলে যেতে পারবেন। তবে ৩১ মে-র মধ্যে রাজ্য এবং এসএসসিকে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরুর বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। ওই মর্মে ৩১ মে-র মধ্যে আদালতে হলফনামা দিয়ে তা জানাতে হবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে নির্দেশ কার্যকর না করলে, এই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হবে বলেও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সে ক্ষেত্রে আদালত প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবে। তবে আদালতের এই সাময়িক স্বস্তি শুধুমাত্র শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই মিলেছে। শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রে পুরনো নির্দেশই বহাল থাকছে।

চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে অন্যতম পলাশ মণ্ডল স্কুলে গ্রুপ ডি পদে চাকরি করতেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে দৃশ্যত কিছুটা হতাশ তিনি। পলাশ বলেন, “আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হল। বিচারপতি একই জায়গায় দু’রকম মত প্রকাশ করলেন। শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের সমান অধিকার দিলেন না তাঁর রায়ে। আমাদের তো ছেলেমেয়ে নিয়ে পথে বসতে হবে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে এসএসসি অভিযানে যাব।” গ্রুপ সি পদে চাকরি করতেন সুশান্ত শিকদার। সুশান্তের দাবি, তিনি যোগ্য এবং তাঁর সঙ্গে সঠিক বিচার হচ্ছে না। তিনি বলেন, “বিচারপতির এই রায়ের ফলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে, না হলে মরতে হবে। আমরা আইনি লড়াই ছাড়ব না।”

চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশ কলকাতায় ধর্মতলায় ওয়াই চ্যানেলে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানেই চাকরিহারাদের কেউ কেউ বলছেন আদালতের রায়ে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। শুক্রবার থেকে কাজে যোগ দেওয়ারও পক্ষপাতী নন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একাংশ। তাঁরা চাইছেন, দ্রুত আদালতে একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হোক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এমন বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া উঠে আসতে শুরু করেছে চাকরিহারাদের অন্দর থেকে। তবে সর্বসম্মত কোনও সিদ্ধান্ত এখনও পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি।

Advertisement
আরও পড়ুন