Iran-Israel Conflict

দেড় বছর আগের ঘটনা ভুলে তেহরানকে সমর্থন! ইজ়রায়েল ইরানের আকাশ ‘দখল নিতেই’ তিন কারণে চাপে পাকিস্তান

দেড় বছর আগে সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষে জড়িয়েছিল দুই দেশ। মিসাইল ছোড়াছুড়িও হয়েছিল। সেই সংঘাত ভুলে এ বার ইরানের পাশেই দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান। তবে ইরান-ইজ়রায়েল দ্বন্দ্বে আশঙ্কিত তারাও!

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫ ১৮:৫৪
শাহবাজ শরিফ।

শাহবাজ শরিফ। —ফাইল চিত্র।

দেড় বছর আগে সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষে জড়িয়েছিল দুই দেশ। মিসাইল ছোড়াছুড়িও হয়েছিল। সেই সংঘাত ভুলে এ বার ইরানের পাশেই দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান। তবে ইরান-ইজ়রায়েল দ্বন্দ্বে আশঙ্কিত তারাও! তেহরানের আকাশে ইজ়রায়েলি আগ্রাসন বাড়তেই ইসলামাবাদেরও ঘুম উড়েছে বলেই মনে করছেন ভূ-রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

Advertisement

ইজ়রায়েলি হামলায় ইরানে অন্তত ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমেরিকার একটি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, সংখ্যাটা ৪০০ পেরিয়ে গিয়েছে। নিহত হয়েছেন ইরানের বেশ কয়েক জন শীর্ষ সেনাকর্তা। প্রাণ গিয়েছেন অন্তত ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানীর। সংঘাত শুরু হওয়ার পরেই ইজ়রায়েলি আগ্রাসন নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়েছে ইসলামাবাদ। ফিরিয়ে এনেছে সে দেশে প়ড়তে যাওয়া ছেলেমেয়েদেরও। পাশাপাশি, ইরানের সঙ্গে পাঁচটি সীমান্তও বন্ধ করেছে পাকিস্তান।

দক্ষিণ-পশ্চিমের বালোচিস্তান প্রদেশে ৯০৫ কিলোমিটারের ইরান-পাক সীমান্ত রয়েছে। ১৭ মাস আগে অর্থাৎ, গত বছরের জানুয়ারি মাসে সেই বালোচিস্তানের সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল দুই দেশ। ওই প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জইশ-আল-আদেলের ঘাঁটি রয়েছে বলে দাবি করে মিসাইল ছুড়েছিল ইরান। পাল্টা পাকিস্তানও ইরানে মিসাইল ছোড়ে। ইরানে বালোচ বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে বলেই সেই সময়ে দাবি করেছিল পাকিস্তান।

ভূ-রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, ইরান-ইজ়রায়েলের সাম্প্রতিক বিবাদে মূলত বালোচিস্তান নিয়েই আশঙ্কিত হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। এমনিতেই সেখানে বালোচ বিদ্রোহীদের কার্যকলাপ নিয়ে চিন্তা রয়েছে ইসলামাবাদের। তার উপর যদি ইরান থেকে বহু মানুষ প্রাণ বাঁচাতে দলে দলে সেখানে হাজির হয়, সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যেতে পারে। সেই কারণেই তড়িঘড়ি সীমান্ত বন্ধ করেছে ইসলামাবাদ।

কেউ কেউ বলছেন, বালোচিস্তান শুধু সামরিক দিক দিয়ে নয়, অর্থনৈতিক দিক দিয়েও ইসলামাবাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত চিন-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডরও খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ এই বালোচ প্রদেশের উপর দিয়ে গিয়েছে।

ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে ইজ়রায়েলি আগ্রাসন আটকানোর যে কড়া দাবি পাকিস্তান তুলেছে, তার নেপথ্যে আরও একটি কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, ইরান সীমান্তবর্তী বালোচিস্তানের চাঘাই জেলায় পাহাড়-পর্বতে ঘেরা তাফতান শহর পাকিস্তানের কাছে অত্যন্তই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৮ সালে সেখানে পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছিল ইসলামাবাদ। শুধু তা-ই নয়, সেখানে সোনা এবং তামার খনি রয়েছে বলেও দাবি। যদি ইজ়রায়েল সত্যিই ইরানের আকাশ দখল নেয়, সে ক্ষেত্রে এই এলাকাগুলির নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে। তা ছাড়া পাকিস্তান কখনওই ইজ়রায়েলকে রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়নি। ফলে সেখানেও বিবাদ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের। অনেকের মত, সেই বৈঠকে ইরান-ইজ়রায়েল প্রসঙ্গ উঠতে পারে। কারণ আমেরিকা ইজ়রায়েলের মিত্র দেশ। অন্য দিকে, ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক সদস্য সম্প্রতি দাবি করেছেন, পাকিস্তান তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ইজ়রায়েল ইরানের উপর পরমাণু বোমা ফেললে ইসলামাবাদও ইজ়রায়েলকে আক্রমণ করবে। অবশ্য এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি পাকিস্তান। স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই করেনি তারা। কিন্তু ইরানের ওই আধিকারিকের মন্তব্যের সত্যাসত্য নিয়ে ধন্দ থাকলেও এটা স্পষ্ট যে, তেহরানের পাশে দাঁড়ানোরই বার্তা দিয়েছে পাকিস্তান। অনেকের মত, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় তার কারণ ব্যাখ্যাও করতে পারেন মুনির।

Advertisement
আরও পড়ুন