তারেক রহমান। — ফাইল চিত্র।
বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৭ বছর পর বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এবং ভোটে অংশ নেওয়ার ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের খাতিরে’ বিরোধিতার চোখে দেখছেন না আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু খালেদা জিয়ার পুত্রকে একের পর এক জঙ্গি অপরাধ সংক্রান্ত মামলা থেকে যে ভাবে রেহাই দেওয়া হয়েছে, তাকে যথাযথ বলে মনে করছে না শেখ হাসিনার দল। ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ অগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো মামলাগুলি থেকে যে ভাবে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হল, তাতে স্বচ্ছতার চরম অভাব রয়েছে। এগুলি বাংলাদেশের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য, দীপু দাসের হত্যা তথা সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বিশ্ব আলোড়িত হলেও দেশে ফিরে তারেকের বক্তৃতায় এই প্রসঙ্গ নেই। বরং রয়েছে ওসমান হাদি হত্যা নিয়ে শোক জ্ঞাপন। যে হাদি ভারত বিরোধিতার জিগির তুলে বিপ্লবী হয়েছেন। আওয়ামী নেতার কথায়, “তারেক মুখে আজ যা-ই বলুন, তাঁর দলের শাসনকালেই উগ্র দক্ষিণপন্থী ইসলামি শক্তির উত্থান ঘটেছে। আজ বাংলাদেশে যে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে তার পিছনে একটি কারণ বিভিন্ন নাশকতার মামলায় ধৃতদের গত দেড় বছরে ছেড়ে দেওয়া।” আওয়ামী লীগের আশঙ্কা, বিএনপি আগামী দিনে ক্ষমতায় এলেও, উগ্র দক্ষিণপন্থারজয়জয়কার বাড়বে।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট ছিন্ন করেছে বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনে জামায়াতের দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ পরিস্থিতি এরকম থাকলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর তারাই হতে চলেছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল। এ ছাড়া বিএনপি যে ১২ দলের ঐক্যজোটে রয়েছে তাদের মধ্যে উগ্র ইসলামি দলের অভাব নেই। রয়েছে ইসলামিক ঐক্য, জামায়তে উলামায় ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি। এ ছাড়া রয়েছে এনসিপি, জুলাই বিপ্লবের বিভিন্ন গোষ্ঠী। সব মিলিয়ে ‘পর্দার আড়ালে’ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘বড় রকমের ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে বলে মনে করছে তারা। আওয়ামী লীগের এক নেতার কথায়, “হয়তো দৃশ্যমান কোনও জোট বিএনপি ও জামায়েতের এখন নেই। কিন্তু এরা পুরনো মিত্র। এটাও মাথায় রাখছি তারেক আসার ঠিক আগেই জামায়েতের আমীর কেন লন্ডন গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের মূল রাজনৈতিক স্রোতে ফেরার কোনও সুযোগ যেন আর না থাকে, তারইচেষ্টা চলছে।”
যদিও আওয়ামী লীগ এমনিতেই খেলার বাইরে। ভোটে অংশ নিতে পারবে না, বড় নেতারা বেশির ভাগই হয় দেশছাড়া নয়তো কারাগারে, অনেকে আত্মগোপন করে রয়েছেন। দলের এক নেতার কথায়, “ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হলেও অবস্থার সুরাহা হবে বলে মনে হচ্ছে না। সংখ্যালঘু পীড়নের ঘটনা লাগাতার হয়ে চলছে। বরগুনায় এক হিন্দু পরিবারে মেয়ের শারীরিক নিগ্রহের প্রতিবাদে মামলা করায় বাবাকে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। অত্যাচার চলছে আওয়ামী লীগের কর্মীদের উপরেও। অপারেশন ডেভিল হান্ট দ্বিতীয় পর্যায় চালু করে কোনও মামলা ছাড়াই অবাধে গ্রেফতার করা হচ্ছে। যাঁরা জামিনযোগ্য ভাবে আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাঁদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।”
তারেক ফেরায় দেশে নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি বেড়েছে এবং কাজকর্ম কমেছে, ফলে গোটা দেশ স্থাণু হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করছে আওয়ামী লীগ। তারা উল্লেখ করছে, তারেক সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে গিয়েছেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ৮ ঘণ্টা কার্যত বন্ধ থেকে মানুষ নাকাল হয়েছেন। তারেক হাদির কবরের পথে শাহবাগে গিয়েছেন, শহর স্তব্ধ হয়ে থেকেছে। এক ভোটে পরিস্থিতি শুধরাবে না বলেই মনে করছে আওয়ামী লীগ সূত্র।