Bangladesh Election

পাখির চোখ ভোট, ধর্মনিরপেক্ষ বহুত্বে জোর বিএনপি-র

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, আওয়ামী লীগ প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে যে ধর্মনিরপেক্ষ উদারতন্ত্রের ছবিটা অন্তত প্রকাশ্যে তুলে ধরেছিল, সেই রাজনৈতিক পরিসরটা বিএনপি নিতে চাইছে।

অগ্নি রায়
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:১৪
(বাঁ দিকে) খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে নিজের ভাবমূর্তি এবং অবস্থানে লক্ষণীয় পরিবর্তন আনছে বিএনপি। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দীর্ঘ দশকওয়াড়ি জোট ছিন্ন করে উদারতন্ত্রে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক পোশাকে তারা ভোটে যেতে চাইছে। আওয়ামী লীগের ভোটারদের সমর্থন জোগাড়ও তাদের লক্ষ্য।

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, আওয়ামী লীগ প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে যে ধর্মনিরপেক্ষ উদারতন্ত্রের ছবিটা অন্তত প্রকাশ্যে তুলে ধরেছিল, সেই রাজনৈতিক পরিসরটা বিএনপি নিতে চাইছে। আওয়ামী লীগের আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনও সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত নেই। কিন্তু এই দলের আদর্শের প্রতি দেশবাসীর একটি বড় অংশের পক্ষপাত এবং জোরালো সমর্থন রয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে আওয়ামী লীগের দুই প্রতিপক্ষ বিএনপি এবং জামায়াতের আদর্শগত পার্থক্য বরাবরই প্রকাশ্যে। বিএনপি–র আন্তর্জাতিক নীতির কেন্দ্রে রয়েছে জাতীয়তাবাদ। জামায়াতের কাছে সেটি মুসলিম পরিচয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ কালপর্বে দুই দল একসঙ্গে দেশ শাসন করলেও এই মুহূর্তে বিএনপি-র সঙ্গে জামায়াতের বিভাজন সম্পূর্ণ।

আগামী ২৫ তারিখ ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশে ফিরছেন বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধে রক্তক্ষয়ের আবেগ জাগিয়ে তুলেছেন দলীয় বৈঠকে। জামায়াতের নাম করেননি, কিন্তু বুঝিয়ে দিতে কসুর করেননি যে জামায়াতে ইসলামীই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। ভোটের জন্য ‘ধর্মকে ভুল ভাবে ব্যবহার করার’ কথা তুলে জামায়াতের সমালোচনাও করেছেন তারেক। বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরও ‘ধর্মের নামে দেশে বিভাজন’ ঘটানোর বিরোধিতা করেছেন। জোর দিয়ে জানিয়েছেন, জাতীয় ঐক্য, গণতান্ত্রিক নীতি এবং একাত্তরের ভিতের উপরেই বিএনপি-র রাজনীতি তৈরি।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরমতে, বিএনপি-র সাম্প্রতিক ভাষ্যে এটা স্পষ্ট যে, ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের যে দোকান একচ্ছত্র ভাবে খুলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ, তার দখল নিতে চাইছে তারেক রহমানের দল। আর আওয়ামী লীগের ছেড়ে যাওয়া সেই পরিসরের দখল নিতে হলে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ আবশ্যিক ছিল বিএনপি-র কাছে। একটি বৃহৎ মঞ্চ তৈরি করাটাই চূড়ান্ত লক্ষ্য বিএনপি-র, যেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থক, সংখ্যালঘু, নাগরিক উদারতন্ত্র এবং নতুন রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ হওয়া যুবশক্তিকে সঙ্গে নেওয়া যায়।

তবে এটাও ঠিক যে, বিএনপি-জামায়াতের এই দূরত্ব কিন্তু এক দিনে বা ভোটের আগেই তৈরি হয়নি। কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দূরত্ব বাড়ছিল উভয়ের মধ্যে। নির্বাচনের আগেই বড় মাপের সংস্কার, সংবিধান কী ভাবে বদলানো হবে, শেখ হাসিনা পরবর্তী রাজনীতির মডেল কী হবে,তা নিয়ে মতানৈক্য বাড়ছিল। জামায়াতে চেয়েছে ভোটের আগেই সংবিধান বদল করতে। বিএনপি-র দাবি ছিল, সংবিধান সামান্য বদলিয়ে দ্রুত ভোট হোক।

বিএনপি-র এই পদক্ষেপ শুধু আদর্শগত নয়, কৌশলগত বলেও মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বিএনপি দেশবাসীর কিছুটা বদলে যাওয়া মেজাজকে লক্ষ করেছে। চব্বিশে বাংলাদেশে যে পালাবদল হল, তা একদলীয় কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রকাশ। দেশকে জাগিয়ে তোলা নাগরিক মধ্যবিত্ত আসলে গণতান্ত্রিক সরকার এবং মধ্যপন্থী রাজনীতির পক্ষে বলে মনে করছে বিএনপি। তবে উদার মতাদর্শ এবং ধর্মনিরপেক্ষ বহুত্ববাদের বিরুদ্ধে দলের ভিতরে ভিন্ন মতও রয়েছে। মানুষের কাছেও স্পষ্ট করা সহজ নয় যে, এত দিন জামায়াতের সঙ্গে ঘর করা বিএনপি আজ যে উদারতন্ত্রের কথা বলছে, তা কতটা আখের গোছানোর জন্য আর কতটা বিশ্বাস থেকে। তা ছাড়া হাসিনা পরবর্তী রাজনীতিতে ভিড় কিছু কম নয়। যুবশক্তি দ্বারা চালিত এনসিপি রয়েছে। নাগরিক আন্দোলনের অনেক রকম সংগঠন গজিয়েছে। এই গণতন্ত্রপন্থী অংশের ভোট ভাগ হলে জামায়াতের লাভ।

আরও পড়ুন