(বাঁ দিকে) জামাতের প্রধান শফিকুর রহমান এবং এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামি (জামাত নামেই যা পরিচিত)-র সঙ্গে জোট নয়! এই সুর ক্রমশ জোরালো হচ্ছে জুলাই আন্দোলনের ছাত্র-যুব নেতাদের একাংশের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র অন্দরে। জামাতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা অনেকটা চূড়ান্ত হওয়ার পর শনিবার দল থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন এনসিপির দুই শীর্ষস্থানীয় নেত্রী তাসনিম জারা এবং তাসনূভা জাবীন। তাসনিম এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ছাড়াও দলের রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য ছিলেন। আর তাসনূভা এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ঢাকা-১৭ আসনে তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল এনসিপি।
অন্য দিকে, শনিবার সন্ধ্যায় জামাতের সঙ্গে সম্ভাব্য জোটে নীতিগত আপত্তি জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন দলের ৩০ জন নেতা। স্মারকলিপিতে তাঁদের বক্তব্য, দল জামাতের সঙ্গে কোনও ধরনের জোট বা সমঝোতায় গেলে এনসিপির নৈতিক অবস্থান দুর্বল হবে এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার উপর এটির দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ওই স্মারকলিপিতে এ-ও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ‘মধ্যপন্থী রাজনীতির’ কথা বলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেই মধ্যপন্থার সঙ্গে আপস করে কেন চরমপন্থী হিসাবেই পরিচিত জামাতের সঙ্গে জোটে যাওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ওই ৩০ জন বিক্ষুব্ধ।
প্রসঙ্গত, এনসিপির মধ্যবর্তী অংশটি প্রথম দিকে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি-র সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা শুরু করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেই বোঝাপড়া আর হয়নি। বিএনপি-র সঙ্গে আলোচনা আর এগোবে, তা ধরে নিয়েই জামাতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন এনসিপি নেতৃত্বের একাংশ। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’-র প্রতিবেদন অনুসারে, জামাতের কাছে ৫০টি আসনের দাবি জানিয়েছে এনসিপি। এনসিপির নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি এবং জামাতের আবদুল্লা মহম্মদ তাহের আলোচনার মাধ্যমে রফা চূড়ান্ত করবেন।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। দলের অন্যতম শীর্ষনেত্রী তাসনিমকে ঢাকা–৯ আসন থেকে প্রার্থী মনোনীত করেছিল। শনিবার সমাজমাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্ট করে তাসনিম জানিয়েছেন, নির্দল প্রার্থী হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। কী কারণে এনসিপি ছাড়ছেন, সে কথা অবশ্য সরাসরি বলেননি তাসনিম। তবে এনসিপি সূত্র জানিয়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর তাসনীভ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে লেখেন, “আপনারা অনেকে ভাবছেন, হয়তো জামায়াতের সাথে জোটে ঐতিহাসিক কারণ বা নারী বিষয়ের কারণে আমার আপত্তি। এর চেয়েও ভয়ঙ্কর যে কারণ, সেটা হল যে প্রক্রিয়ায় এটা হয়েছে। এটাকে রাজনৈতিক কৌশল, নির্বাচনী জোট ইত্যাদি লেভেল দেওয়া হচ্ছে। আমি বলব এটা পরিকল্পিত। এটাকে সাজিয়ে এ পর্যন্ত আনা হয়েছে।”