আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (বাঁ দিক থেকে প্রথম)-এর সঙ্গে একই ফ্রেমে কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইন (বাঁ দিক থেকে তৃতীয়)। — ফাইল চিত্র।
মার্কিন বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে রাতারাতি উধাও হয়ে গেল কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইন সম্পর্কিত ১৬টি ফাইল! যার মধ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি-সহ একটি ফাইলও ছিল বলে খবর। শুক্রবার ওই ফাইলগুলি জনসাধারণের দেখার জন্য ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছিল। প্রকাশ্যে আসার এক দিনের মাথায় ফের সরিয়ে নেওয়া হল ফাইলগুলি।
এপস্টাইনের সঙ্গে সম্পর্কিত ফাইলের আরও কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছিল শুক্রবার। অবশ্য যে ছবিগুলি প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল, সেগুলির একটি ফাইল ছাড়া কোনওটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। বেশির ভাগই ছিল নগ্ন নারীদের ছবি। কেবলমাত্র একটি ফাইলে এপস্টাইনের ড্রয়ারে থাকা কিছু ছবি ছিল, যার একটিতে এপস্টাইন, মেলানিয়া ট্রাম্প এবং এপস্টাইনের দীর্ঘদিনের সহযোগী ঘিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল ট্রাম্পকে। এ ছাড়া, একটি ‘কনট্যাক্ট বুক’-এ ট্রাম্পের নামমাত্র উল্লেখ ছিল। যদিও ওই ‘কনট্যাক্ট বুক’টি কার, তা নিয়ে তেমন কিছু তথ্য ছিল না ওয়েবসাইটে। শনিবার সরকারের তরফ থেকে কোনও ব্যাখ্যা বা নোটিস ছাড়াই সরিয়ে ফেলা হয়েছে সেই সব ছবি। এ ছাড়াও, এপস্টাইন মামলা সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, নির্যাতিতাদের সঙ্গে এফবিআই-এর সাক্ষাৎকারও সরিয়ে ফেলা হয়েছে ওয়েবসাইট থেকে।
আকস্মিক এই ঘটনার পরেই জল্পনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। আমেরিকার হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাট নেতারা রাতারাতি ট্রাম্পের ছবি সরিয়ে ফেলা নিয়ে সরব হয়েছেন। এক্স-এ তাঁরা লিখেছেন, ‘‘কী ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে? আমেরিকার জনগণের জন্য আমাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রয়োজন।’’ গত সপ্তাহে এপস্টাইনের বাড়ি থেকে পাওয়া আরও বেশ কিছু ছবি প্রকাশ্যে আসে। তার মধ্যে তিনটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাট নেতারাই এই ছবিগুলি প্রকাশ্যে এনেছিলেন। একটিতে ছ’জন মহিলার সঙ্গে মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রথমে ১৯টি ছবি প্রকাশ করা হয়। তার পরে আরও প্রায় ৮০টি ছবি প্রকাশ্যে আসে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টি ছবি প্রকাশ করেন ডেমোক্র্যাট নেতারা।
গত ফেব্রুয়ারিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ফাইল প্রকাশ্যে এলেও পুরো ফাইল প্রকাশের দাবি উঠছিল আমেরিকায়। বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির দাবি মেনে গত ১৯ নভেম্বর ‘এপস্টাইন ফাইলস ট্রান্সপেরেন্সি অ্যাক্ট’ বিলে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। এপস্টাইনের সঙ্গে একসময় ট্রাম্পের বন্ধুত্ব ছিল। দু’জনের একসঙ্গে একাধিক ছবিও রয়েছে। যদিও ট্রাম্প বার বারই দাবি করে এসেছেন, এপস্টাইনের সঙ্গে অতীতে বন্ধুত্ব থাকলেও তাঁর যৌন অপরাধের সঙ্গে কোনও যোগ ছিল না তাঁর। নভেম্বরে এপস্টিনের বিরুদ্ধে তদন্ত সংক্রান্ত নথির একাংশ প্রকাশ্যে আসে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০ হাজার পাতারও বেশি ওই নথিতে বেশ কিছু জায়গায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামোল্লেখ ছিল। সেখানে এক জায়গায় নাকি এপস্টাইন নিজের মুখেই বলেছিলেন, “আমি জানি ডোনাল্ড (ট্রাম্প) কতটা নোংরা।” শুক্রবার সরকারি ভাবে এপস্টাইন সংক্রান্ত ৩৯৬৫টি ফাইল প্রকাশ করা হয়। পরের দফায় আরও কিছু ফাইল প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু তার আগেই সরিয়ে নেওয়া হল ১৬টি ফাইল।