Mushroom Murder

শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদকে নেমন্তন্ন করে মাংসে বিষাক্ত মাশরুম! অস্ট্রেলিয়ার আদালত দোষী সাব্যস্ত করল সেই মহিলাকে

শ্বশুরবাড়ির লোকেদের নিজের বাড়িতে নেমন্তন্ন করেছিলেন এরিন। নিজেই হাতেই রান্না করেছিলেন তাঁদের জন্য। বানিয়েছিলেন পেস্ট্রি দেওয়া গরুর মাংসের একটি পদ। তাতেই মেশানো ছিল মাশরুম।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৫ ২০:২৯
Erin Patterson Found Guilty of Mushroom Lunch Murders That Killed Three Relatives

মাশরুম হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হলেন এরিন প্যাটারসন। ছবি: সংগৃহীত।

মধ্যাহ্নভোজ, মাশরুম আর মৃত্যু!

Advertisement

অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার সেই বহু চর্চিত মাশরুম হত্যাকাণ্ড মামলার মীমাংসা হল। দোষী সাব্যস্ত হলেন এরিন প্যাটারসন। প্রায় তিন মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ভিক্টোরিরায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে। শ্বশুর, শাশুড়ি এবং ননদকে হত্যার ঘটনায় এরিনকে দোষী বলেই চিহ্নিত করেছেন ১২ জন জুরি। আদালত জানিয়েছে, পঞ্চাশোর্ধ্ব এরিনের শাস্তি ঘোষণা পরে হবে।

সাল ২০২৩। তারিখ ২৯ জুলাই। শ্বশুরবাড়ির লোকেদের নিজের বাড়িতে নেমন্তন্ন করেছিলেন এরিন। নিজেই হাতেই রান্না করেছিলেন তাঁদের জন্য। বানিয়েছিলেন পেস্ট্রি দেওয়া গরুর মাংসের একটি পদ। তাতেই মেশানো ছিল মাশরুম। সেই সময় স্বামীর সঙ্গে থাকতেন না এরিন। দাম্পত্যকলহের কারণে আলাদাই থাকতেন দু’জনে। সেই পরিস্থিতিতে এরিনের আপ্যায়নে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ এবং ননদের স্বামী। কিন্তু খাবার খেয়ে ওঠার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁরা। হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে জানা যায়, তাঁদের খাবারে ‘ডেথ ক্যাপ মাশরুম’। এই মাশরুম বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত মাশরুম বলেই পরিচিত। খেলে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত!

ঘটেছেও তা-ই। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন একে একে মৃত্যু হয় শ্বশুর, শাশুড়ি এবং ননদের। কিন্তু ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান ননদের স্বামী। মাসখানেক ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলেছিল তাঁর। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কিছু দিন পরেই এরিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। খুন এবং খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা দায়ের করে শুরু হয় তদন্ত। জানা যায়, ঘটনার দিন নিজের স্বামী সাইমনকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন এরিন। কিন্তু তিনি সে দিন যেতে পারেননি।

চলতি বছরের মার্চে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে এই মাশরুম হত্যাকাণ্ড। কিন্তু এরিনের আইনজীবী বারবার আদালতে দাবি করে গিয়েছেন, কাউকের হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর মক্কেলের। যা ঘটেছে, তা দুর্ঘটনাবশত। শুধু তা-ই নয়, এরিন দাবি করেছিলেন, ওই মাশরুম যে বিষাক্ত, তা তিনি জানতেন না।

যদিও এরিনের দাবি মান্যতা পায়নি আদালতে। সরকারি আইনজীবী জানান, শ্বশুরবাড়ির লোকেদের হত্যার ছক কষেই তাঁদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন এরিন। সেই সময় নিজেকে ক্যানসার আক্রান্ত বলেও দাবি করেছিলেন। শ্বশুর-শাশুড়িকে বলেছিলেন, সন্তানদের বিষয়ে তিনি কথা বলতে চান। কিন্তু পরবর্তী কালে তদন্তে দেখা গিয়েছে, এরিন মোটেই ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন না। এ ছাড়াও যে খাবার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা অসুস্থ হলেন, সেই খাবারে কেন এরিন বা তাঁর সন্তানেরা অসুস্থ হলেন না, আদালতে সেই প্রশ্নও উঠেছে। এরিন আদালতে দাবি করেছিলেন, তিনি ওই মাশরুল স্থানীয় একটি দোকান থেকে কিনেছিলেন। সেই দাবি নস্যাৎ করে সরকারি আইনজীবী জানিয়েছিলেন, ওই ‘ডেথ ক্যাপ মাশরুম’ খোলাবাজারে পাওয়া যায় না। ঘটনার পর এরিন পুলিশ বা হাসপাতালেও সময়মতো ফোন করেননি বলে আদালতে দাবি করেছেন সরকারি আইনজীবী। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তকারীদের মিথ্যা কথা বলে তদন্ত প্রভাবিত করারও অভিযোগ উঠেছিল।

কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। সরকারি আইনজীবীর দাবিকেই সিলমোহর দিয়েছেন জুরিরা। তার ভিত্তিতেই এরিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত।

Advertisement
আরও পড়ুন