Bangladesh Situation

ফেব্রুয়ারিতে আদৌ ভোট হবে বাংলাদেশে? নতুন করে তাণ্ডব তুলে দিল প্রশ্ন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায়’ খোদ নির্বাচন কমিশনই

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন একই সঙ্গে হবে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটও। গত ১২ ডিসেম্বর থেকেই মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৩০
ঢাকার শাহবাগ চত্বরে বিক্ষোভ জমায়েত প্রতিবাদী জনতার।

ঢাকার শাহবাগ চত্বরে বিক্ষোভ জমায়েত প্রতিবাদী জনতার। ছবি: রয়টার্স।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগেই উন্মত্ত জনতার বিক্ষোভে উত্তাল সে দেশের নানা এলাকা। এই পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে ভোট হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনী আধিকারিক এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও। এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলা না-হলেও কমিশনের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘কালের কণ্ঠ’ এমনটাই জানিয়েছে।

Advertisement

ওই সূত্রের দাবি, নির্বাচনের কাজের সঙ্গে যুক্ত রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের দফতরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের অন্য আধিকারিকদেরও নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে। ওই সুত্রের আরও দাবি যে, কমিশনকে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চলা দুই সম্ভাব্য প্রার্থী।

বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঢাকার শাহবাগে জমায়েত করেছিলেন বহু মানুষ। জুলাই আন্দোলনের (২০২৪ সালের অগস্ট মাসে যার জেরে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন) অন্যতম নেতা হাদি গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরনো পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ইউনূস সরকারের অভিযোগ, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের এক কর্মী হাদির মাথায় গুলি করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। ইনকিলাব মঞ্চ নামক সংগঠনের আহ্বায়ক হাদির মৃত্যুর পরেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে লড়াই করার কথা ছিল হাদির।

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষিত হওয়া আওয়ামী লীগ। এই বিষয়ে সরাসরি মুখ না-খুললেও ‘অবাধ, স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তি এবং প্রতিনিধিত্বমূলক’ নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছে ভারত। এর প্রেক্ষিতে ইউনূস সরকার আবার জানিয়েছে, নির্বাচন নিয়ে ভারতের ‘পরামর্শ’ (নসিহত) চায় না তারা। বুধবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে, এটা নিয়ে আমরা প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না। এখন সামনে আমরা একটা ভাল নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি, এই মুহূর্তে তো আমাদের নসিহত করার তো কোনও প্রয়োজন নেই।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভারত আমাদের এটা (নির্বাচন) নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। একে আমি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য মনে করি। তারা (ভারত) জানে এর আগে গত ১৫ বছর যে সরকার ছিল, তাদের সঙ্গে (ভারতের) অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল। ওই সময় নির্বাচনগুলো যে প্রহসনমূলক হয়েছিল, সে সময় তারা (ভারত) একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি।’’

ইউনূস সরকার যা-ই দাবি করুক, নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের অন্দরে খুব ইতিবাচক পরিস্থিতি নেই। চলতি সপ্তাহেই হামলার আশঙ্কা করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের বিএনপি প্রার্থী মহম্মদ মাসুদুজ্জামান। বাংলাদেশের দলগুলির সূত্রে খবর, হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা এবং মৃত্যু ভোটের বাংলাদেশে নতুন করে শঙ্কার বাতাবরণ তৈরি করেছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের অনেকেই গুপ্তঘাতকের হামলার ভয় পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন একই সঙ্গে হবে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটও। গত ১২ ডিসেম্বর থেকেই মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি চলবে মনোনয়ন পরীক্ষার কাজ। কোনও মনোনয়ন বাতিল হলে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি হবে সেই আপিলগুলির যথার্থতা যাচাইয়ের কাজ। চূড়ান্ত প্রার্থিতালিকা প্রকাশ এবং নির্বাচনী প্রতীক নির্ধারণ করা হবে ২১ জানুয়ারি। আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারের পালা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। তবে এর পর নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ পরিকল্পনামাফিক হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement
আরও পড়ুন